জন্মভূমি ডেস্ক : মামলা-মোকদ্দমার মাধ্যমে বিরোধী দলের নেতাদের রাজনীতির মাঠ থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এসব করে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে সরকারকে সোজা পথ ধরার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘এখনো সময় আছে, এই সব খেলাধুলা বাদ দিন, মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করার পথ থেকে সরে গিয়ে, অত্যাচারের পথ থেকে সরে এসে সোজা পথ ধরেন। একটা নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। দেশে সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন।’
আজ বুধবার (৩১ মে) রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমানের সাজা বহাল এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলার প্রতিক্রিয়া নিয়ে অবহিত করতে এই সংবাদ সম্মেলনে ডাকা হয়।
আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার ভয়াবহ পরিকল্পনা করছে অভিযোগ করে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের কানে এসেছে সাড়ে ১৩ শ মামলা চিহ্নিত করা হয়েছে যে মামলাগুলো বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাদের বিরুদ্ধে। আগামী নির্বাচনের আগে কীভাবে এই মামলাগুলো দ্রুত শেষ করে বিএনপি নেতাদের সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানো যায় সেই চেষ্টা চলছে। যাতে নির্বাচনে প্রতিপক্ষ ছাড়া খালি মাঠে গোল দিতে পারে।’
সরকারকে উদ্দেশ করে ফখরুল বলেন, ‘মৃত্যু যখন ঘনিয়ে আসে, যখন আর কোনো আশা থাকে না, তখন অনেকেই চেষ্টা করেন যে, কোনো রকমে কোনো কিছু ধরে যদি টিকে থাকা যায়। আজকের রায় হচ্ছে তাদের যে পরিকল্পনা, রাজনীতিকে তিরোহিত করা, বিরাজনীতিকরণ করা, রাজনীতিবিদদের রাজনীতির মাঠ থেকে সরিয়ে দেওয়া।’
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচন হবে না জানিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘এই দেশে একটা গণতান্ত্রিক নির্বাচন হওয়ার সুযোগ, বিরোধী দলের রাজনীতি করার, জনগণের ভোট দেওয়ার অধিকার, সাংবাদিকদের লেখার অধিকার কোথাও নেই। তাই আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই—জনগণের অধিকারের যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, গণতান্ত্রিক অধিকারকে ফিরে পাওয়ার যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, ফ্যাসিবাদকে পরাজিত করার যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, এই আন্দোলনকে কোনো মামলা-মোকদ্দমা, সাজা দিয়ে বন্ধ করা যাবে না। জনগণ জেগে উঠেছে এবং জনগণের উত্থানের মধ্য দিয়ে তাদের (সরকার) সরে যেতে হবে। একই সঙ্গে এ কথাও খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই—নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া আওয়ামী লীগের অধীনে এই দেশে কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠান হওয়া সম্ভব নয়।’
সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য রাষ্ট্রযন্ত্রকে বেআইনিভাবে ব্যবহার করছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকার রাষ্ট্রের সব গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে আছে। অত্যন্ত ক্ষোভ ও বেদনার সঙ্গে লক্ষ্য করছি, যে মামলা হাইকোর্ট খারিজ করে দিয়েছে পুনরায় শুনানি করে সেই মামলায় রাজনৈতিক নেতাদের সাজা দেওয়া হলো। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও তাঁর স্ত্রী জোবায়দা রহমানের ২০০৭ সালের মামলাগুলো অতি দ্রুত চালু করা হয়েছে। আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। প্রতিদিন সাক্ষী হাজির করা হচ্ছে। এ নিয়ে কোর্টে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা কথা বলতে চাইলে তাঁদের ওপর সরকারি দলের আইনজীবীরা হামলা করে এবং পুলিশ দিয়ে নির্যাতন চালায়। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে সরকার এমন নোংরা ষড়যন্ত্র করছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘একই ধরনের মামলায় আওয়ামী লীগের নেতা মোফাজ্জেল হোসেন চৌধুরী মায়াকে খালাস দেওয়া হয়েছে। অথচ ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও তাঁর স্ত্রীকে সাজা দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি সারা দেশে এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছেন সাত শতাধিক নেতা–কর্মী। গত ১২ দিনে নতুন মামলা হয়েছে ১৫২টি। আসামি সাড়ে পাঁচ হাজার। ভয়-ত্রাস সৃষ্টি করে একই কায়দায় নির্বাচনী বৈতরণি পার হতে চায় তারা (আওয়ামী লীগ)। কিন্তু মানুষ এবার তা সফল হতে দেবে না।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন—বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, বরকত উল্লাহ বুলু, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আব্দুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু ও ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্যসচিব আমিনুল হক প্রমুখ।