জন্মভূমি ডেস্ক : আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়ায় এখন আর ভোট চুরির সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কাতার সফর শেষে আজ সোমবার (১৩ মার্চ) বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।
সরকারপ্রধানের বাসভবন গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলেই দেশের উন্নয়ন করা সম্ভব হয়েছে। রাজনৈতিক স্থতিশীলতা থাকলে উন্নয়ন হয়, সেটা আমরা প্রমাণ করেছি।’
একটি মহল দেশকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা করছে অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত তারা কিছু করতে পারবে না। সাময়িকভাবে অস্থিতিশীলতা তৈরি করলে জনগণই তা মোকাবিলা করবে।’
তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া দল আওয়ামী লীগ এ দেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। আওয়ামী লীগ দেশ ও জাতির প্রতি দায়িত্ববোধ নিয়ে কাজ করে। সে জন্যই মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে।
‘মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আওয়ামী লীগই আন্দোলন সংগ্রাম করেছে। জনগণকে দেয়া প্রতিটা প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করেছে। যদিও করোনা ও যুদ্ধের কারণে কিছুটা সমস্যা হয়েছে, তা না হলে দারিদ্র্যের হার আরও দুই থেকে তিন শতাংশ কমানো সম্ভব হতো।’
রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য সুষ্ঠু নির্বাচন প্রয়োজন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য সুষ্ঠু নির্বাচন প্রয়োজন। আর আওয়ামী লীগ এ লক্ষ্যে সব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।’
আওয়ামী লীগ সরকারে আসার আগে ভুয়া ভোটার তালিকা ও ভোট চুরির বিষয়টি উল্লেখ করে দলটির সভাপতি বলেন, ‘এসব বন্ধের লক্ষ্যে ছবিসহ ভোটার তালিকা করা হয়েছে। স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সে ভোটদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট গ্রহণের উদ্যোগ নেয়া হলেও অনেকের আপত্তি থাকায় বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের ওপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেন সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, সরকার নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে। আওয়ামী লীগ সরকারই প্রথম নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য আইন করেছে এবং সেই আইনের আলোকে নির্বাচন কমিশন গঠন হয়েছে। ইসির আর্থিক স্বাতন্ত্র্য দেয়া হয়েছে। এসব কারণে এখন আর ভোট চুরির সুযোগ নেই। জনগণ খুশি মনে যাকে খুশি ভোট দিতে পারবেন।
জনগণকে দেওয়া সব কথা রেখেছি
প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দেশের জনগণকে দেওয়া সব কথা সরকার রেখেছে বলে দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, আমার হারানোর কিছু নেই। আমি বাংলাদেশের মানুষের কথা ছাড়া কিছু মনে রাখতে পারি না।
বিদেশি ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার বক্তব্যের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকলে উন্নয়ন হয় সেটা আমরা দেখেছি। তবে এজন্য অনেক ধৈর্য ধারণ করতে হয়। আমাদের দেওয়া সুযোগ দিয়ে টিভিতে আমাদেরই সমালোচনা করা হচ্ছে। আমাদের দায়িত্ববোধ দেশের প্রতি আছে কি না, সেটা আছে কি না সেটা বড় বিবেচ্য বিষয়। আমরা দাবি করতে পারি সেটা অনেকখানি আমরা করতে পেরেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রণয়ন করেছি। স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন করেছি। নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে তাদের কাজ করছে। বিএনপি সেখানে এক কোটি ভুয়া ভোটার তালিকা করেছিল। আমরা চেয়েছিলাম মানুষ ইভিএমে ভোট দেবে। আমি মনে করি ইভিএমে ভোট দিতে পারলে ভালো হতো। এটা এখন নির্বাচন কমিশনের ওপর ছেড়ে দিলাম।
সরকারের গত ১৫ বছরের সাফল্য নিয়ে কোনো চিত্র পাওয়া যায় কি না এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ২০০৬ সাল থেকে ২০২২ পর্যন্ত আর্থ সামাজিক অবস্থায় কী পরিবর্তন হয়েছে সেটার একটা চিত্র আছে। আমি চেষ্টা করেছি বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার। অনেকেই আগে বাংলাদেশ নাম শুনলে মনে করত গরিব দেশ। এখন আমাদের রোল মডেল মনে করে।
‘রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকলে যে উন্নয়ন হয় তা প্রমাণ করেছি’
রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকলে যে দেশের উন্নয়ন হয় সরকার তা প্রমাণ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগ সবসময় দায়িত্ববোধ নিয়ে কাজ করে। বর্তমান সরকার টানা ক্ষমতায় থাকায় উন্নয়নের ধারা অব্যাহত আছে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকলে যে উন্নয়ন হয় তা প্রমাণ করেছি। এর জন্য ধৈর্য দরকার।
সাধারণত কোনো দেশ সফর করে আসার পর সংবাদ সম্মেলন করেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে সফর সংশ্লিষ্ট বিষয় ছাড়াও বিভিন্ন সমসাময়িক ইস্যু নিয়ে সাংবাদিকদের করা প্রশ্নের জবাব দেন তিনি।
সোমবারও সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে কাতার সফর নিয়ে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সরকারপ্রধান। এরপর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন।
এখন বিশ্ব বাংলাদেশকে রোল মডেল মনে করে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এক সময় বাংলাদেশ মানে বন্যা খরা দুর্যোগ মনে করতো এখন মনে করে না। এখন বিশ্বে বাংলাদেশকে রোল মডেল মনে করে। এটি সম্ভব হয়েছে একটানা ক্ষমতায় একটি গণতান্ত্রিক ধারা বজায় আছে বলেই।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যুদ্ধের পর একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ার কাজে হাত দিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রমহান। মাত্র তিন বছর ৭ মাসে স্বল্পোন্নত দেশে গড়ে যান। এরপর অন্ধকার নেমে আসে। আমরা ২০০৮ নির্বাচনে যে রুপকল্প ঘোষণা দিয়েছিলাম, সেটি করতে সক্ষম হয়েছি। জাতিসংঘ এলডিসি সম্মেলনে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে এটাই বাংলাদেশের শেষ অংশগ্রহণ। কারণ, ২০২৬ সালে আমরা এলডিসি থেকে বেরিয়ে যাব।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে জাতিসংঘের সদস্য দেশের স্বীকৃতি পায়। তার দেখানো পথ অনুসরণ করেই আমাদের সরকার জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে ২০২১ সালের মধ্যে আমাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী একটি মধ্যম আয়ের উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উত্তরণের সকল মাপকাঠি পূরণ করতে সক্ষম হয়।
অস্থিতিশীল পরিস্থিতির চেষ্টা চলছে, তবে পারবে না
একটি গোষ্ঠী দেশকে অস্থিতিশীল করতে চেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে তারা সফল হবে না বলে জানান সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ‘দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু পারবে না। মোকাবেলা করবে জনগণ।’
পঁচাত্তরের পর যত নির্বাচন হয়েছে, সেগুলোর সঙ্গে নিজের শাসনকালের নির্বাচনকে তুলনা করে সরকারপ্রধান দাবি করেন, এখন নির্বাচনে কারচুপির কোনো সুযোগ নেই।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী জানান, আধুনিক প্রযুক্তির অংশ হিসেবে ইভিএমে ভোটগ্রহণ করতে চেয়েছিলেন। তবে অনেকের আপত্তির কারণে তিনি বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, দেশের স্থিতিশীলতার জন্য দরকার নির্বাচনটা যেন সুষ্ঠু হয়। সবার মনে রাখা দরকার, আওয়ামী লীগ সরকারই কিন্তু নির্বাচন কমিশন গঠনে একটা আইন করেছে। আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু হবে বলে আশা করেন তিনি।
এখন বিশ্ব বাংলাদেশকে রোল মডেল মনে করে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এক সময় বাংলাদেশ মানে বন্যা খরা দুর্যোগ মনে করতে, এখন মনে করে না। এখন বিশ্বে বাংলাদেশকে রোল মডেল মনে করে। এটি সম্ভব হয়েছে একটানা ক্ষমতায় একটি গণতান্ত্রিক ধারা বজায় আছে বলেই।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যুদ্ধের পর একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ার কাজে হাত দিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রমহান। মাত্র তিন বছর সাত মাসে স্বল্পোন্নত দেশে গড়ে যান। এরপর অন্ধকার নেমে আসে। আমরা ২০০৮ নির্বাচনে যে রূপকল্প ঘোষণা দিয়েছিলাম, সেটি করতে সক্ষম হয়েছি। জাতিসংঘ এলডিসি সম্মেলনে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে এটাই বাংলাদেশের শেষ অংশগ্রহণ। কারণ, ২০২৬ সালে আমরা এলডিসি থেকে বেরিয়ে যাব।’