
জন্মভূমি রিপোর্ট : বিভিন্ন এনজিওদের ঋণের কিস্তি পরিশোধ নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় পড়েছেন শ্রমজীবী, নিম্নমধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত মানুষ। এছাড়া ব্যাংক ঋণ কিস্তি পরিশোধ নিয়েও টেনশনে রয়েছেন ব্যবসায়িরা। গতকাল বুধবার সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
খুলনা মহানগরীর মুন্সিপাড়া তয় গলির বাসিন্দা মনোয়ারা বেগম বলেন, এনজিও ব্রাক সমিতি থেকে ৫০ হাজার টাকা লোন নিয়েছি। তিন সপ্তাহ পর পর কিস্তির ৫ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হয়। আজ বৃহস্পতিবার কিস্তি পরিশোধের দিন রয়েছে। কি করবো বুঝতে পারছি না। আমার স্বামী দর্জির কাজ করেন।এক সপ্তাহ ধরে তার কাজ বন্ধ, হাতে একটা টাকাও নেই, কিস্তি দেব কি করে।
নগরীর টুটপাড়া জোড়াকল বাজারের ঘোষের ভিটা এলাকার হান্নান সরকার জানান, উন্নয়ন সংস্থা থেকে তিনি স্ত্রীর নামে ৪০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছেন। ১১শ’ টাকা কিস্তি দিতে হবে। হাত কাজ নেই, কিভাবে টাকা জোগাড় করবো।
বটিয়াঘাটা উপজেলার সবুজ পল্লীর বাসিন্দা মনোয়ারা বেগম একটি এনজিও থেকে ১ লাখ টাকা লোন নিয়ে টিউবওয়েল স্থাপন করেছেন। প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা কিস্তি পরিশোধ করতে হয়। পরিবারের আয়ের মানুষ গত এক সপ্তাহ ধরে বেকার বসে আছে। এতো টাকা জোগাড় করবো কি করে।
হুমায়ূন কবির একটি এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছেন ৮০ হাজার টাকা। চলতি সপ্তাহে কিস্তি দিতে হবে ২২শ’ টাকা।
এছাড়া আলম শাহিনুর তার স্ত্রীর মাধ্যমে ৫০ হাজার, মুক্তি রানী ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছেন।
ঋণ নেওয়ার তালিকায় শ্রমজীবী মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এরপর রয়েছেন নিম্নমধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত। তাদের মধ্যে কাউকে ৫ হাজার, কাউকে ৩ হাজার, ২২শ’, ২৫শ’ ২ হাজার, ১৮শ’ করে কিস্তি টানতে হচ্ছে। এসব মানুষেররা দুঃশ্চিন্তায় পড়েছেন।
এদিকে গতকাল বিভিন্ন ব্যাংক ঘুরে গ্রাহকদের প্রচন্ড ভিড় দেখা গেছে। গ্রাহকরা আমানত জমা দেওয়ার চাইতে আমানত তুলছেন বেশি।
জনতা ব্যাংকে কয়েকজন ব্যবসায়ি এসেছেন ঋণের কিস্তি পরিশোধে সময় নিতে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ব্যবসায়ি বলেন, তিনি অগ্রণী ব্যাংক কর্পোরেট শাখা থেকে ৩০ লাখ টাকা সিসি লোন নিয়েছেন। সুদের হার বাড়ছে। অথচ গত এক সপ্তাহ ধরে ব্যাবসা নেই। কি করবো বুঝতে পারছি না।
একটি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার এস এম শামীমুল আলম মান্দার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বেলা ২টার পর তিনি টাকা তুলতে জনতা ব্যাংকের কর্পোরেট শাখায় গিয়েছিলেন। কিন্তু বেলা ২টায় ক্যাশ কাউন্টার ক্লোজড করা হয়। ফলে তিনি টাকা তুলতে পারেন নি। তিনি বলেন, ব্যাংক তিনটায় ক্লোজড করার কথা। কিন্তু তার আগেই লেনদেন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আজ আর প্রেমেন্ট দেওয়া যাবে না।
জনতা ব্যাংক খুলনা কর্পোরেট শাখার ম্যানেজার মেহেদী হাসান জানান, সকাল থেকেই প্রচুর ভিড়। গ্রাহকরা অর্থ জমা দেওয়ার চাইতে অর্থ তুলছেন বেশি।
উত্তরা ব্যাংক লোয়ার যশোর রোড শাখার ম্যানেজার এস এম হাসিবুল হাসান বলেন, সকাল থেকে চাপ বেশি। গ্রাহকরা আমানত তুলছেন বেশি। তিনি বলেন, গত কয়েকদিন ধরে ব্যাংক বন্ধ থাকায় আজকে প্রচুর ভীড়। তিনি বলেন, তাদের নিজস্ব সার্ভার স্লো থাকার কারণে লেনদেন কিছুটা বিলম্বিত হচ্ছে।