
ডেস্ক রিপোর্ট : দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবন শেষে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরা ঘিরে যখন রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে, ঠিক সেই দিনই জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সদস্যসচিব মীর আরশাদুল হক। একই সঙ্গে তিনি তারেক রহমানের নেতৃত্বের প্রতি পূর্ণ সমর্থনের কথা প্রকাশ করেছেন।
আজ বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে তারেক রহমানকে বহনকারী বাংলাদেশ বিমানের একটি বিশেষ ফ্লাইট হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের কথা রয়েছে। তার এই প্রত্যাবর্তনকে ঘিরে দেশজুড়ে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। এমন দিনে এনসিপি থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছেন মীর আরশাদুল হক।
ফেসবুকে দেওয়া এক দীর্ঘ পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘আমি মীর আরশাদুল হক জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিব, নির্বাহী কাউন্সিলের সদস্য, মিডিয়া সেল ও শৃঙ্খলা কমিটির সদস্য, পরিবেশ সেলের প্রধান এবং চট্টগ্রাম মহানগরের প্রধান সমন্বয়কারীসহ অন্যান্য সব দায়িত্ব ও পদ থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিচ্ছি৷ আমি এই মুহূর্তে এনসিপি থেকে পদত্যাগ করলাম৷ চট্টগ্রাম-১৬ সংসদীয় আসনে (বাঁশখালী) এনসিপির হয়ে আমি নির্বাচন করছি না। আজকে একটি বিশেষ দিনে এই ঘোষণাটি দিচ্ছি, যেদিন দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসন শেষে দেশে ফিরলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান। সুস্বাগতম।’
পোস্টে এনসিপির রাজনৈতিক ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি আরও লিখেছেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের প্রতিশ্রুতি নিয়ে এনসিপির যাত্রা শুরু হয়েছিল। কিন্তু এনসিপির প্রতিষ্ঠা থেকে এখন পর্যন্ত গত ১০ মাসের অভিজ্ঞতায় আমার কাছে প্রতীয়মান হয়েছে যে এই দল ও দলের নেতারা সে প্রতিশ্রুতি রক্ষার্থে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন। যে স্বপ্ন ও সম্ভাবনা দেখে এনসিপিতে যোগ দিয়েছিলাম, তার কিছুই আর অবশিষ্ট নেই৷ দল ও বড় অংশের নেতারা ভুল পথে আছেন বলেই মনে করি আমি। এই ভুল পথে আমি চলতে পারি না। এই মুহূর্ত থেকে এনসিপির সাথে আমার কোনো রাজনৈতিক সম্পর্ক নেই। তবে ব্যক্তিগত সম্পর্ক থাকবে। তাদের প্রতি শুভকামনা রইল৷’
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়েও হতাশা প্রকাশ করেছেন মীর আরশাদুল হক। তিনি লিখেছেন, ‘২০২৪ সালের ৫ আগস্ট স্বৈরাচারের পতন ও পলায়নের দিন আমি এতোই অভিভূত হয়েছিলাম যে মনে হয়েছিল এবার নতুন একটি বাংলাদেশ হবে। যেখানে মানুষের ন্যূনতম অধিকার ও মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু বাস্তবে হয়েছে তার বিপরীত। জুলাই অভ্যুত্থানের ১৪০০ অধিক শহীদ, হাজার-হাজার আহত এবং এত আত্মত্যাগের পরও একটা শান্তিপূর্ণ ও ন্যায্যতার বাংলাদেশ দেখতে পাইনি। এনসিপিও এক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে। অস্থিরতা তৈরি করা, পবিত্র ধর্ম ইসলামকে ব্যবহার করে সমাজে বিভাজন তৈরি করা এবং মহান মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টির একটি প্রবণতা বর্তমানে বাংলাদেশে লক্ষ করা যাচ্ছে। একটা গোষ্ঠী বা চক্র নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য দেশকে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিতে চাচ্ছে। এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি প্রয়োজন হচ্ছে গণতন্ত্রে উত্তরণ এবং বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করা। প্রয়োজন আগামী দিনের কথা মাথায় রেখে রাজনৈতিক সচেতন, উন্নত ও প্রগ্রেসিভ চিন্তার নতুন তরুণ নেতা, নতুন উদ্যোগ ও বর্তমান বাংলাদেশপন্থী দলগুলোকে সংগঠিত করা, শক্তিশালী করা।’
নিজের রাজনৈতিক যাত্রা ও বর্তমান অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি দায় থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রজীবনের শুরু থেকেই আমি সচেতনভাবে বিভিন্ন রাজনৈতিক তৎপরতার সাথে যুক্ত ছিলাম। বহুবার আক্রমণ নির্যাতনের শিকার হয়েছি। যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সবসময় আমার প্রথম অগ্রাধিকার ছিল বাংলাদেশ ও এ দেশের মানুষের স্বার্থ৷ দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে আমার কাছে মনে হচ্ছে, তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি ও জোটের সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করার কোনো বিকল্প নেই৷’
তারেক রহমানের নেতৃত্বের প্রশংসা করে পোস্টের শেষাংশে তিনি লিখেছেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থান ও পরবর্তী সময়ে তারেক রহমানের বিভিন্ন কার্যক্রম ও বক্তব্য পর্যালোচনা করে আমার ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, এই মুহূর্তে সবাইকে ধারণ করে দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার দক্ষতা ও সক্ষমতা তিনিই রাখেন। যখন অন্যান্য দল ধর্ম ও পপুলিজমকে প্রধান এজেন্ডা করে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে চাচ্ছে, তখন তারেক রহমান স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিবেশসহ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে একটি ক্লিয়ার ভিশন জাতির সামনে উপস্থাপন করছেন। আগামী দিনে জনগণের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিবেশ, সংস্কৃতি, কর্মসংস্থানসহ বিভিন্ন খাতভিত্তিক সুনির্দিষ্ট ও বাস্তবসম্মত সমাধানের কথাও তিনি বলছেন। এই স্মার্ট অ্যাপ্রোচ আমাকে আকৃষ্ট করেছে। তরুণদের উচিত হবে পপুলিজম বা কোনো হুজুগে প্রভাবিত না হয়ে দেশের সামগ্রিক স্বার্থ, ভবিষ্যত ও কল্যাণের কথা বিবেচনা করে তারেক রহমানের জনকল্যাণমূলক ভিশন বাস্তবায়নে সহযোগিতা ও সমর্থন জানানো৷ আমি ব্যক্তিগতভাবে আমার পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে রাখলাম৷ ধন্যবাদ।’
প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত