জন্মভূমি ডেস্ক : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের বৃহৎ দুই রাজনৈতীক দল বিএনপি ও আওয়ামী লীগের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে বেশ কিছুদিন ধরে উত্তাল হয়ে উঠেছে দেশের রাজনীতি। এবার আল্টিমেটাম আর পাল্টা আল্টিমেটামে রাজনীতির সেই উত্তাপের আগুনে ঘি ঢেলেছে।
রবিবার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে সরকারকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আল্টিমেটাম দিয়েছে বিএনপি। অপরদিকে সোমবার বিএনপিকে অপরাজনীতি ছাড়তে ৩৬ দিনের আলটিমেটাম দিয়েছেন আওয়ামী লীগ।
॥ সরকারকে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম বিএনপির ॥
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মুক্তি দিতে রবিবার সরকারকে আল্টিমেটাম দিয়েছে বিএনপি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দেশনেত্রী বেগম খালেদ জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে।
নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবিতে আয়োজিত সমাবেশ থেকে এ আল্টিমেটাম দেন ফখরুল।
মির্জা ফখরুল বলেন, খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই, বেগম খালেদা জিয়াকে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মুক্তি দিতে হবে। তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে হবে। তা না হলে আপনাদের জন্য ভালো হবে না।
এদিকে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে বিদেশে না পাঠালে, তার কিছু হলে, পরিণতি শুভ হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। সোমবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বেগম খালেদা জিয়ার আশু আরোগ্য কামনায় দোয়া মাহফিলপূর্ব সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি এই হুঁশিয়ারি দেন।
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আমি আবারও অনুরোধ জানাব, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ১২ ঘণ্টা সময় চলে গেছে আর ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে যেন দেশনেত্রীকে বিদেশে পাঠানো হয় চিকিৎসার জন্য। একটা কথা আমি আবারও বলছি, এই অবস্থায় দেশনেত্রীর যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে আপনাদের কারো কোনো অস্তিত্ব বাংলাদেশে আমরা রাখব না।’
গত ৯ আগস্ট থেকে বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ অবস্থায় রাজধানীর বসুন্ধরায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। তাঁর জন্য গঠিন মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা বলেছেন, তাঁর অবস্থা সংকটজনক। লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য তাকে দ্রুত বিদেশে পাঠানো জরুরি। মির্জা আব্বাস অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরা আসলে বোকার স্বর্গে বসবাস করছিৃআমরা বুঝতে পারিনি। যেদিন নেত্রীকে গ্রেফতার করা হয়েছে, সেদিন থেকেই তাকে হত্যার চক্রান্ত করা হয়েছে। এই গ্রেফতার ছিল তাকে হত্যার জন্যে আমরা বুঝতে পারিনি। অসুস্থ হওয়ার পরে আমরা বলা শুরু করেছি, তিনি অসুস্থ হয়েছেন।’
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আসলে উনাকে গ্রেফতার করে, অসুস্থ করে, মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হবে, এটাই ছিল তাদের প্ল্যান। সেই প্ল্যান এখন কার্যকর করছে। আর না হলে কীভাবে অমানুষের মতো, অমানবিকভাবে একথা বলে যে, বেগম খালেদা জিয়াকে বাইরে পাঠানোর কোনো সুযোগ নেই আইনের জটিলতা আছে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘একটা মানুষের জীবন বাঁচাতে পৃথিবীর কোনো আইন লাগে না। যখন জীবন বাঁচানোর প্রয়োজন হয়, তখন তার জন্য যেটা করা দরকার, সেটা হলো মানবিক একটা আইন। জেনেভার কনভেনশনের একটা আইন আছে, সেই আইনে উনি চিকিৎসা পেতে পারেন। তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে না।’
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আমরা আশা করছি, সরকার এই সুযোগটা নেবেন, দেশনেত্রীকে বিদেশে তারা পাঠিয়েছেন এই সুযোগটা তারা নিতে পারেন।’ কারাবন্দি নেতাদের বিদেশে পাঠানোর অতীত উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘গতকাল আমাদের মহাসচিব বলেছেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে উনাকে বিদেশে পাঠাতে হবে। আজকে দেখলাম উনারা (সরকার) বলছেন, আইনের জটিলতা আছে। আমি আজকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সাহেবের সময়ে আ স ম আবদুর রবকে জার্মানি পাঠানো হয়েছিল। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সময়ে রাশেদ খান মেননকে বিদেশে পাঠিয়েছিলেন, তার লিভার টুকরো টুকরো হয়ে গিয়েছিল, তাকে সুস্থ করেছিলেন। আজকে সে আমাদের বিরুদ্ধে কথা বলে।’
মির্জা আব্বাস আরও বলেন, ‘হাজী সেলিম ব্যাংকক গেল, চিকিৎসা করে ফেরত আসলো, সে বাইরে আছে, এখন সহিসালামতে আছে। ম খা আলমগীর (মহিউদ্দিন খান আলমগীর) একই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে বাইরে ঘোরাফেরা করছে, মায়া (মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া) একই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে বাইরে ঘোরাফেরা করছে। অথচ, আমার নেত্রীকে, যিনি কোনো অপরাধ করেননি তাকে বন্দি করে রাখা হয়েছে।’
॥ বিএনপিকে ৩৬ দিনের আল্টিমেটাম আওয়ামী লীগের ॥
অপরাজনীতি ছাড়তে বিএনপিকে ৩৬ দিনের আলটিমেটাম দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সোমবার বিকেলে রাজধানীর উত্তরায় ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ আয়োজিত শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশে এ কথা বলেন তিনি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, এ ৩৬ দিনের মধ্যে বিএনপিকে আগুন সন্ত্রাস, নাশকতার রাজনীতি ছাড়তে হবে, গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে হবে। নতুবা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে অপরাজনীতির কালোহাত গুঁড়িয়ে দেবো।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপি যদি অস্ত্র নিয়ে আসে ওই হাত ভেঙে দিতে হবে। আগুন নিয়ে আসলে ওই হাত পুড়িয়ে দিতে হবে। যেমন কুকুর, তেমন মুগুর।
বিএনপি জামায়াতের দেশবিরোধী হরতাল, নৈরাজ্য ও অবরোধ প্রতিরোধে আয়োজিত সমাবেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি ভর করেছে ভিসানীতির ওপর, আর আওয়ামী লীগ জনগণের শক্তির ওপর। কারও নিষেধাজ্ঞা ও খবরদারিতে বাংলাদেশে নির্বাচন চলবে না। ভিসানীতি, নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা আমরা করি না। যারা ভিসানীতি, নিষেধাজ্ঞা দেয় তাদের দেশেই গণতন্ত্র ত্রুটিমুক্ত নয়। মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। কিছুই তারা করতে পারছে না। আমরা পরোয়া করি বাংলাদেশের জনগণকে। বাংলাদেশের জনগণ ছাড়া কোনো ভিসানীতি, নিষেধাজ্ঞা মানি না, মানবো না। আমাদের নির্বাচন আমরা করবো। সংবিধান বলে দিয়েছে কীভাবে নির্বাচন হবে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপি খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য ৩৬ মিনিটও আন্দোলন করতে পারেনি। ৩৬ দিনের সময় দিলাম, ঠিক হয়ে যান। বিএনপির কোমর ভেঙে গেছে।
বিএনপির উদ্দেশ্যে ওবায়দুল কাদের বলেন, সুযোগ একটাই; নির্বাচনে আসেন। নির্বাচনে যদি না আসেন খেলার আগেই হেরে যাবেন।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে প্রশ্ন রাখেন। বিএনপির পলাতক দণ্ডিত নেতা তারেক রহমানকে দেওয়া মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস মরিয়ার্টির দেওয়া নিষেধাজ্ঞার কী হলো ফখরুল সাহেব?
প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত