
জন্মভূমি ডেস্ক : মৎস্য ঘেরে মাছ চাষের সঙ্গে সাথী ফসল হিসেবে শিম চাষ করে সাবলম্বী যশোরের কেশবপুরের কয়েকটি গ্রামের প্রায় দেড় হাজার পরিবার। গাছের মাচার আড়ালে ছোট-বড় জলাশয়। সেই জলাশয়ের পাড় ঘেঁষে এখন শুধু শিমগাছের লতা। সড়কের দুই পাশে যতদূর চোখ যায় ততদূর সারি সারি শিমগাছের সমারোহ। কেশবপুর বাজার থেকে ভরতভায়না পর্যন্ত গ্রামীণ সড়কের দুপাশে দেখা মেলে শিমগাছের।
উপজেলার গৌরিঘোনা ইউনিয়নে মোট বাসিন্দা প্রায় ৩৫শ’। এর মধ্যে শিম ও মাছ চাষ করেন প্রায় দেড় হাজার কৃষক। এ ইউনিয়নের ভরতভায়না, সন্যাসগাছা, ভেরচি, বুড়লি প্রভৃতি গ্রামে বেশিরভাগ মানুষই জলাশয়ে (ছোট-বড় ঘের) মাছ চাষের পাশাপাশি সাথী ফসল হিসেবে শিমের আবাদ করে লাভের মুখ দেখেছেন কৃষকেরা।
সন্যাসগাছা গ্রামের কৃষক আফসার সরদার বলেন, জলাশয়ের পাশে তিনশ’ মান্দা শিমগাছ লাগিয়েছি। গতদিন প্রতি কেজি শিম বিক্রি করেছি ৮৩ টাকা কেজি দরে। দিনে সর্বোচ্চ ৩২ কেজি শিম তুলেছি। এই সময়ে শিমগাছগুলোর একটু পরিচর্যা প্রয়োজন হয়।
পাশের গ্রাম ভরতভায়নার বাসিন্দা লাভলু হোসেন বলেন, ঘেরের পাশে আমার ১০ কাঠা জমি রয়েছে। মাসখানেক আগে ১৯০ টাকা কেজি দরে শিম বিক্রি করেছি। ৩১ অক্টোবর এক মণ শিম বেঁচেছি ১১০ টাকা দরে।
সন্যাসগাছা গ্রামের আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ঘের রয়েছে ৪৬ শতক জমিতে। এই ঘরে চিংড়ি ও সাদা মাছ যেমন, রুই-কাতলা চাষ করছি। ঘেরের পাড়ে কিছু লাউ গাছ আছে। গত মাস থেকে প্রতিদিনই লাউ কাটি। নিজেদের খাওয়ার পাশাপাশি সেগুলো বিক্রি করি। ১০ থেকে ১৫টি লাউ প্রতিদিন কাটা হয়। প্রতিটি লাউ ২০ থেকে ২৫ টাকা দরে বিক্রি করেছি। দুইদিন আগে ১৮ কেজি শিম বিক্রি করেছি ১১০ টাকা দরে। এবার সর্বোচ্চ ১৯০ টাকা কেজি দরে শিম বিক্রি করেছি। সপ্তাহখানেক হলো কুমেড়োর ফলন শেষ হয়েছে। দুই হাজার টাকার বেশি কুমড়ো বেঁচেছি।
তিনি বলেন, তিন মাস পর মাছ তুলি। গত সপ্তাহে ১৫ হাজার টাকার মাছ বেঁচেছি। আমাদের গ্রামের বেশিরভাগ মানুষই ঘেরের সঙ্গে সাথী ফসল হিসেবে সবজি চাষ করে।
গৌরীঘোনা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বর আফজাল হোসেন বলেন, গৌরীঘোনা, সুফলাকাটি, মঙ্গলকোট প্রভৃতি ইউনিয়নের মানুষ ঘেরের সঙ্গে সবজি চাষ করে থাকেন। আমাদের এই অঞ্চলে যেমন মাছের উৎপাদন ভালো তেমন সবজিও। এখানে বর্তমানে শিম চাষ বেশি হচ্ছে। এছাড়া লাউ, পালংশাক, কুমড়ো, টমেটোরও আবাদ হয়।
কেশবপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার রিমা আক্তারের বলেন, গোটা যশোর জেলা সবজি চাষে এগিয়ে। তেমন কেশবপুরেও বেশি সবজি চাষ হয়। আগাম সবজি হিসেবে গৌরীঘোনা ও সুফলাকাটি ইউনিয়ন এগিয়ে। এখানে বর্তমানে বেশ শিম চাষ হচ্ছে।
শিমগাছে কালোমাকড়ের আক্রমণ বিষয়ে তিনি বলেন, মূলত কালোমাকড় বলে কিছু নেই। অন্য কোনও পোকা কিংবা মাছি কি না- সেই বিষয়ে নিশ্চিত হতে আমি উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দিয়েছি। তাকে স্যাম্পল আনতে বলেছি। আগে দেখি, তার পরে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, তিন মৌসুমের মধ্যে এই উপজেলায় খরিপ-১ এ ৭৫০ হেক্টর, খরিপ-২ এ ৮৪১ হেক্টর এবং রবি মৌসুমে কম-বেশি ৯৮০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়। এরমধ্যে খরিপ-১ এ গৌরীঘোনা ইউনিয়নে সমতল ও ঘের মিলিয়ে ১৩৫ হেক্টর, খরিপ-২ এ ১৬৩ হেক্টর এবং রবি মৌসুমে ১৭০-১৮০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়ে থাকে। এতে পর্যায়ক্রমে উৎপাদন ১৬.৫ থেকে ১৭ মেট্রিক টন, ১৭-১৭ মেট্রিক টন এবং রবি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ২০-২২ মেট্রিক টন।
কেশবপুরের সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সজীব সাহা বলেন, সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী গৌরীঘোনা ইউনিয়নে ছোটবড় ১ হাজার ৪৫২টি ঘের রয়েছে, যার আয়তন ৭৬০ হেক্টর এবং সুপলাকাটিতে ১২১৬টি ঘেরের আয়তন ১৩৩০ হেক্টর। গত বছর গৌরীঘোনা থেকে মাছের উৎপাদন হয় ২৪২৬ মে.টন এবং সুফলাকাটি থেকে ৪৪৮৫ মেট্রিক টন। গত অর্থবছরে কেশবপুর উপজেলায় মোট উৎপাদন ৩৬ হাজার ৭৮৯ মেট্রিক টন। এরমধ্যে গলদা চিংড়ি ২১৯২ মেট্রিক টন আর বাগদা চিংড়ি ২৫২ মেট্রিক টন। চিংড়ি মাছের ৭০ শতাংশের বেশি উৎপাদন হয় গৌরীঘোনা ও সুপলাকাটি ইউনিয়নে বলে তিনি জানান।