জন্মভূমি ডেস্ক : ‘আমি একটা দল করি, জোটে আছি, নির্বাচনে অংশ নিলেই জিতব এমন গ্যারান্টি তো নেই’-দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের জোটবদ্ধভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রসঙ্গে জোটের প্রধান শরিক ও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন মন্তব্যে গণমাধ্যমে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন শরিক দলগুলোর নেতারা।
নির্বাচনের প্রাক্কালে বিএনপি’র ভোটে অংশ না নেওয়ার অনড় অবস্থান, জাতীয় পার্টিতে রওশন-কাদের প্রকাশ্য বিবাদ, পশ্চিমা চাপ ইত্যাদি নানা ইস্যুর মধ্যে ১৪ দলীয় জোটে এই টানাপোড়েন রাজনীতিতে নতুন সংকটের বার্তাই দিচ্ছে। এবিষয়ে ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন মঙ্গলবার বার্তা২৪.কম-কে জানিয়েছেন তাঁর দলীয় অবস্থান।
জোটবদ্ধভাবে নির্বাচনে যাওয়া প্রশ্নে ১৪ দলীয় জোটে কোন বিবাদ তৈরি হচ্ছে কিনা-এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘বিভেদ নয়, আমরা শুরু থেকে বলেছি যে আলোচনা করতে হবে। কিন্তু আলোচনা তো করছে না (ক্ষমতানীন আওয়ামীলীগ), এতে এক ধরণের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।’
১৪ দরীয় জোটের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদকের সাম্প্রতিক বক্তব্য প্রসঙ্গে রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘এটা দায়িত্বহীন বক্তব্য তো বটেই। আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক যে কথা বলেছেন, তাহলে তো আমাদের বলে দেওয়া উচিত…তাদের বক্তব্যে এক ধরণের বিভ্রান্তির পথ তৈরি হয়েছে।’
নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির অবস্থান তুলে ধরে পার্টি সভাপতি বলেন, ‘প্রস্তুতি চলছে। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব। কিভাবে করব তা নিয়ে সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। জোটের প্রধান দল আওয়ামীলীগ, তারা যদি জোটবদ্ধ না থাকে তাহলে সেটা তাদের ব্যাপার, আমাদের ব্যাপার না।’
‘আমরা তো প্রতিদিনই ভাবছি তারা আলোচনা করবেন। তারা তো আলোচনা করছেন না, এটা এক ধরণের অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। আমি তো মনে করি, ১৪ দলের ঐক্যের প্রশ্নে…নির্বাচনই তো শেষ কথা নয়। নির্বাচনের আগে-পরের ব্যাপার তো রয়েই গেছে। সেই সংকট মোকাবেলায় ১৪ দলকে লাগবেই’-বলেন রাশেদ খান মেনন।
২০০৪ সালের দিকে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আরও বেশ কয়েকটি দল মিলে ১৪ দলীয় জোট বা মহাজোট গঠিত হয়। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের আওয়ামী লীগের প্রয়োজন আছে কি না, বিষয়টি নিয়ে এখনো ভাবছে জোটের প্রধান শরিক আওয়ামী লীগ-গত শনিবার (২৫ নভেম্বর ২০২৩) ধানমন্ডিতে দলের সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যে জোটের শরিক দলে অস্বস্তি বাড়ে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘১৪ দলীয় জোটের বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। শরিকদের আমাদের প্রয়োজন আছে কি না, সেটা এখনো ঠিক করিনি।’
কাদের বলেন, ‘আমাদের প্রতিপক্ষ যদি একটা বড় জোট করে, সেখানে তার বিপরীতে আমাদের জোট হবে। তা ছাড়া আমাদের কেন অহেতুক জোট করতে হবে? প্রয়োজন না থাকলে জোট করব না। আর জোট করব যাদের নিয়ে, তাদের তো গ্রহণযোগ্যতা থাকতে হবে মানুষের কাছে।’
‘আমি একটা দল করি, জোটে আছি- নির্বাচনে অংশ নিলেই জিতব এমন গ্যারান্টি তো নেই’-বলেন আওয়মীলীগ সাধারণ সম্পাদক।
গত রোববার (কুষ্টিয়া-২ ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন শূন্য রেখে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯৮ আসনে দলীয় একক প্রার্থী ঘোষণা করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে দলটির সভাপতি বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গোপালগঞ্জ-৩ একটি আসন থেকে লড়বেন। এ ছাড়াও দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও নোয়াখালী-৫ একটি আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
গতকাল রোববার (২৬ নভেম্বর ২০২৩) বিকেল ৪টায় ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দল মনোনীত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।