এম সাইফুল ইসলাম : নির্বাচনের আমেজ খুলনার সিটি করপোরেশন এলাকায়। এবারের বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেয়ার ঘোষণায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নির্বাচনী আধিপত্য অনেকটাই বেশি।
তাই সাধারণ মানুষের মাঝে মেয়র প্রার্থীও নয়, কাউন্সিলর প্রার্থী নিয়ে আলোচনা বেশি। চায়ের আড্ডা থেকে অফিস পাড়া বেশিরভাগ জায়গায় চলছে কেসিসি নির্বাচন নিয়ে আলোচনা। তবে নির্বাচন নিয়ে তেমন একটা আগ্রহ নেই খুলনার শিল্পাঞ্চল খালিশপুরে অবস্থিত ৮ নং ওয়ার্ডে।
কেসিসির গুরুত্বপূর্ণ এই ওয়ার্ডের উত্তরে ভৈরব নদ ও গোয়ালপাড়া পাওয়ার হাউসের শেষ সীমানা পর্যন্ত বিস্তৃত। দক্ষিণে বিস্তৃত বিআইডিসি রোড ও ক্রিসেন্ট জুট মিলের শেষ সীমানা পর্যন্ত। পূর্বে ভৈরব নদ ও পশ্চিমে বিআইডিসি রোড। ওয়ার্ডের মোট জনসংখ্যা প্রায় ১৮ হাজার। পরিবারের সংখ্যা প্রায় দেড় হাজার। ২০০৭ সালের আগে এখানে প্রায় ১৪ হাজার ভোটার ছিলেন। ২০০৮ সাল থেকে এখানে ভোটার সংখ্যা সাড়ে ৭ হাজারের আশপাশে ছিল। গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময় ৭ হাজার ৩০০ জনের মতো ভোটার থাকলেও এ বছর ভোটার সংখ্যা কমে ৬ হাজার ৮০০ হয়েছে।
নগরীর খালিশপুর মূলত শিল্প এলাকা। পাটকলের শ্রমীকরাই এখানের মূল বাসিন্দা। পাটকলগুলো বন্ধ ঘোষণার পরে বেকার হয়ে পড়ে বেশিরভাগ শ্রমীক। খালিশপুরও হারায় তার জৌলূস।
এই ওয়ার্ডের মধ্যে অবস্থিত খুলনা বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ক্রিসেন্ট ও পিপলস জুট মিল। বিশে^র বৃহত্তম পাটকল আদমজী বন্ধ হওয়ার পর আকার ও শ্রমিকের সংখ্যার দিক দিয়ে খুলনার ক্রিসেন্ট ছিল দেশের সবচেয়ে বড় পাটকল। ১১৩ একর জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত পাটকলটি ২০২০ সালের জুলাইয়ে বন্ধ হওয়ার সময়ও সেখানে কাজ করতেন প্রায় ১১ হাজার শ্রমিক। পিপলস জুট মিলেও শ্রমীকের সংখ্যা ছিল প্রায় সাড়ে ৮ হাজার।
মিল দুটি বন্ধ হওয়ায় বিকল্প কর্মস্থানের ব্যবস্থা করতে না পেরে কর্মহীন শ্রমিকদের বড় একটা অংশ স্থায়ীভাবে গ্রামে চলে গেছে। কাজের সন্ধানে অনেকে নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে চলে গিয়েছেন। জানা যায়, ৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ১১ নম্বর ওয়ার্ডের পাঁচতলা নিউ কলোনিতে প্রায় আড়াই শ পরিবার, ১০ নম্বর ওয়ার্ডে ১৩০টি, ৭ নম্বর ওয়ার্ডে ৪০টি ও ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে রায়ের মহলে বেশ কিছু পরিবার বাস করছে। তাই ওয়ার্ডের ভোটার সংখ্যাও কমেছে। যাঁরা এখনো আছেন, তাঁদের উদ্বিগ্ন থাকতে হয় কর্মসংস্থান নিয়ে। তাই এই ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের মুল দাবি কর্মস্ংস্থান। বিশেষ করে পাটকলগুলো খুলে দিতে তারা এখনো সরকারের প্রতি দাবি জানিয়ে আনছে। পাশাপাশি রয়েছে নাগরিক সেবায় ভোগান্তি যা নিয়ে ক্ষুদ্ধ ওয়ার্ডবাসী।
কলকারখানা বন্ধ হওয়ায় ওই এলাকায় কাজের সুযোগ নেই মানুষের। পাটকলে কাজ করা স্থায়ী শ্রমিকেরা টাকা পয়সা পেলেও বদলি শ্রমিকেরা তেমন কিছু পাননি। লোকজন দিনমজুর, ইজিবাইক-রিকশা চালিয়ে দিনযাপন করছেন। যে দিন কাজ থাকে না সেদিন চলে উপোষ।
ক্রিসেন্ট জুট মিলের শ্রমীক মো: মোস্তফা। মিল বন্ধ হয়ে গেলে ছয় সদস্যর পরিবার নিয়ে পড়েন বিপদে। পরিবারের ভরণ পোষণ মেটাতে শুরু করেন রিকশা চালানো । গত পাঁচ বছরে তার ভাগ্যে জোটেনি কোন টিসিবি কার্ড বলে জানান তিনি।
অথচ মিল-কারখানা বন্ধ হওয়ায় এই ওয়ার্ডের জনসংখ্যা কমেছে। মাত্র ১১০০ পরিবারের জন্য ২ হাজার কার্ড বরাদ্ধ থাকলেও কার্ড বঞ্চিত থাকছে মোস্তফার মতো অসহায় পরিবারগুলো। অনেকের অভিযোগ এই কার্ড নিতে গেলেও দিতে হয়েছে অতিরিক্ত অর্থ। যার যোগান দেওয়া অনেকের পক্ষে সম্ভব হয়নি। এছাড়া এই ওয়ার্ডে রয়েছে মাদকের ভয়াল থাবা। আছে সুপেয় পানি আর গণশৌচাগারের সংকট।
এ বিষয়ে বর্তমান কাউন্সিলর এইচএম ডালিম বলেন, আমার ওয়ার্ডে জনসংখ্যা কম থাকায় প্রত্যেকটা পরিবার টিসিবি কার্ড পেয়েছে। এছাড়া নাগরিক সেবায় সরকারের নির্ধারিত টাকার চেয়ে অতিরিক্ত কোন টাকা নেয়া হয় না। আর মাদক নির্মূলে আমি কোন আপোষ করিনি।
তিনি বলেন, এবারের নির্বাচনে নির্বাচিত হলে এলাকায় মুরব্বীদেও উপদেষ্টা রেখে যুব কমিটি করে মাদক নির্মূলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এই ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর যুবলীগ নেতা মো. সাহিদুর রহমান এবারও নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনি বলেন, একসময় খুলনাকে চালাত এই ওয়ার্ড। সবচেয়ে ক্রিসেন্ট আর পিপলস জুট মিল বন্ধ হওয়ায় এখানে ২০ হাজার মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। মানুষের উপার্জনের কোনো সুযোগ বা জায়গা নেই, এটাই বড় সমস্যা। ওয়ার্ডের রেললাইনে মাদকের আখড়া। দিনরাত মাদক কেনাবেচা ও সেবন চলে। আমি নির্বাচিত হলে এসকল সমস্যা সমাধানে সর্বাত্বক চেষ্টা করবো।