জন্মভূমি ডেস্ক
মাগুরা পুলিশ লাইনসে নিজের অস্ত্রের গুলিতে মারা যাওয়া কনস্টেবল মাহমুদুল হাসানকে কেউ হত্যা করতে পারেন বলে সন্দেহের কথা জানাচ্ছে পরিবার। ছেলের মৃত্যুর সঠিক তদন্তের দাবিও করছেন মাহমুদুলের বাবা এজাজুল হক। কনস্টেবল এজাজুল বর্তমানে চুয়াডাঙ্গায় কর্মরত।
এডিসি লাবনী মারা গেছেন জেনে মাহমুদুল আত্মহত্যা করেছে এমনটি মানতে পারছেন না মাহমুদুলের পরিবার। বাবা এজাজুলের ভাষ্য, মাহমুদুলের সঙ্গে এডিসি লাবনীর প্রেমের সম্পর্ক ছিল না। তবে উনি (লাবনী) তার ছেলেকে খুব ভালোবাসতেন। ছোট ভাই বা সন্তান হিসেবে দেখতেন।
গেল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে মাগুরা পুলিশ লাইন্সের পুলিশ ব্যারাকের চার তলা ভবনের ছাদে নিজের শর্টগানের গুলিতে আত্মহত্যা করেন কনস্টেবল মাহমুদুল হাসান। তার কয়েক ঘন্টা আগে মাগুরায় নানা বাড়িতে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (এডিসি) খন্দকার লাবনী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন।
দুটি ঘটনার মধ্যে যোগসূত্র রয়েছে বলে ধারণা করছেন অনেকে। মাহমুদুল এডিসি লাবনীর দেহরক্ষী হিসেবে প্রায় দেড়বছর দায়িত্ব পালন করেন। স¤প্রতি বদলি হয়ে মাগুরা আসেন তিনি।
এজাজুল হক বলেন, আমার ছেলে গুলি করে আত্মহত্যা করল। কিন্তু মরদেহ দেখে মনে হচ্ছে, সে ওখানে ঘুমিয়ে আছে। অস্ত্রটা দুই পায়ের মাঝে পড়ে আছে। হাত একটা বুকের ওপর, আরেকটা সাইডে। একটা মুরগি জবাই করে দিলেও তো ছটফট করে। কিন্তু মাহমুদুলের সারা শরীরে রক্তের ছিঁটা পর্যন্ত ছিল না। মনে হচ্ছে কেউ দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে। আমার ছেলে কী এমন অপরাধ করল, যে তাকে জীবন দিতে হলো!
মাহমুদুলের স্বজনরা জানান, শান্ত প্রকৃতির মানুষ ছিল মাহমুদুল। কুরবানির ঈদের আগের দিন বাড়িতে এসেছিল। ঈদের পরদিন সে মাগুরায় চলে যায়। এর মধ্যে কী এমন হলো আর কেনই বা সে আত্মহত্যা করল-তারা বুঝতে পারছেন না।
এজাজুল হক সাংবাদিকদের বলেন, এডিসি লাবনীর সঙ্গে আমাদের পরিবারের কখনও যোগাযোগ হয়নি। এতটুকু বলতে পারি উনি (লাবনী) আমার ছেলেকে খুব ভালোবাসত; ছোট ভাই বা সন্তান হিসেবে দেখতেন। আমি যখন ঝিনাইদহ জেলা পুলিশে ছিলেন, তখন আমার বদলির জন্য মাহমুদুল তার ম্যাডামকে বলেছিল। তিন-চারদিনের মধ্যে আমাকে চুয়াডাঙ্গায় বদলি করা হয়।
এডিসি লাবনী শান্তিরক্ষা মিশনে যেতে নাম এসেছিল তখন মাহমুদুল তার বদলির জন্য তাকে (লাবনী) বলেছিল জানিয়ে এজাজুল হক বলেন, এডিসি ম্যাডামের নাম যখন মিশনে যাবার জন্য এসেছিল তখন মাহমুদুল তাকে জেলা পুলিশে বদলির জন্য বলেছিল। পরে ম্যাডাম নিজেই তাকে মাগুরা জেলা পুলিশে পোস্টিং করিয়ে দেন। প্রায় আঠারো মাস আমার ছেলে ম্যাডামের বডিগার্ড হিসেবে কাজ করেছিল। এ হিসেবে তাদের দুইজনের মধ্যে সু-সম্পর্ক ছিল।
আমার ছেলে কেন যে আত্মহত্যা করল এটা বুঝতে পারছি না। আমি কোনোদিন কোনোকিছুতে ওর জীবনে কমতি রাখিনি। মাহমুদুল নিজে চাকরি করলেও কিছুদিন আগে আমার নিজের টাকা দিয়ে তাকে মোটরসাইকেল কিনে দিয়েছি। গেল শীতেও আমার টাকায় শীতের পোষাক কিনেছিল।
এজাজুল বলেন, অনেকে বলছে, ম্যাডামের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু এটা আমাদের বিশ্বাস হয় না। কারণ উনি আমার ছেলের থেকে দ্বিগুণের বেশি বয়স। এলাকায় কিংবা পড়াশোনা অবস্থায় কোনো মেয়ের সঙ্গে মাহমুদুলের সম্পর্ক ছিল এমন কিছু কোনদিন শুনিনি।
যদিও এডিসির সঙ্গে সম্পর্ক থেকে থাকে তাহলে ঘটনার আগে তাদের দুইজনের মধ্যে কোনো তথ্য আদান-প্রদান হয়েছে কি না যাচাই করা হোক। সঠিক তদন্ত হলেই আমরা খুশি। ছেলের আত্মাও শান্তি পাবে।
নিহত মাহমুদুলের বোন সুমাইরা খাতুন বলেন, লাবনী ম্যাডাম রাত একটার দিকে আত্মহত্যা করেন। সেই তথ্য আমার ভাইকে কে জানাল? আর সে (মাহমুদুল) তো তখন পেট্রোল ডিউটিতে ছিল। ডিউটি থেকে আসল, অস্ত্র জমা দিল না এটা নিয়ে কারও মধ্যে কোনো খোঁজ হয়নি? অস্ত্র নিয়ে ছাদে চলে গেল, কেউ দেখলো না?
পুলিশ লাইনের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় সিসিটিভি ক্যামেরা থাকার কথা, সেখানে কী ক্যামেরা ছিল না? ক্যামেরা নজরদারিতে কী কেউ ছিল না? হয়ত ছাদে ছিল না, তবে আশপাশে তো থাকার কথা।
সুমাইরা খাতুন বলেন, আমার ভাই কখন মারা গেছে, যাদের কাছেই প্রশ্ন করেছি কেউ সঠিক উত্তর দিতে পারেনি। সে (মাহমুদুল) যখন আত্মহত্যা করল তখন কী ফায়ারের শব্দ হয়নি? তাহলে কেন সময়টা সঠিকভাবে জানতে পারছি না? মারা যাবার সময় আমার ভাইয়ের প্যান্টের নিচে ছেঁড়া ছিল। সেটা কেন ছেঁড়া?
হুট করে তো একজন আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেন না। আমার ভাই কোনো ধরণের ব্যথা সহ্য করতে পারত না। আর সে শর্টগান মাথায় ঠেকিয়ে আত্মহত্যা করল, এটা কীভাবে সম্ভব? সব বিবেচনা ও আলামত দেখে মাহমুদুল আত্মহত্যা করেছে বলে মনে করি না।
মাগুরা জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মাহমুদুল যে ব্যারাকে মারা গেছেন সেখানে কোনো সিসিটিভি ক্যামেরা ছিল না। তবে পুলিশ লাইনসের প্রধান ফটকে ক্যামেরা আছে।
মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কলিমুল্লাহ বলেন, দুই ঘটনায় পৃথক তদন্ত কর্মকর্তা কাজ করছেন। তারা সব বিষয় নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করবেন। সিনিয়ররা তদারকি করছেন।
মাহমুদুলের পরিবারের সন্দেহের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, এটা জব্দ তালিকা যিনি করেছেন, তিনিই বলতে পারবেন। তবে মরদেহটা পরে ছিল তখন অস্ত্রটা দুই পায়ের মাঝে ছিল। প্যান্টটা সেসময় কোনো ভাবে ছিঁড়তে পারে। আর তাদের ছেলে মারা গেছে, সেই হিসেবে পরিবারটি বিভিন্ন প্রশ্ন তুলতেই পারে। তাদের মনে তো কষ্ট। তারা নানান ভাবে চিন্তা করতেই পারেন। এগুলো নিয়ে বিশেষজ্ঞ মতামত না পেলে তো কিছু বোঝা যাবে না।
কনস্টেবল মাহমুদুলের মৃত্যু নিয়ে পরিবারের অনেক প্রশ্ন
Leave a comment