
সরকারের একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ কমিউনিটি ক্লিনিক। এই ক্লিনিকের মাধ্যমে সারা দেশে মা ও শিশুদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হয়। সরকারের এই জনস্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম জাতিসংঘ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, বিশ্বব্যাংকসহ বহির্বিশ্বে বিপুল প্রশংসা কুড়িয়েছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে এসব কমিউনিটি ক্লিনিকের ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে।
জাতিসংঘে প্রথমবারের মতো কমিউনিটিভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক একটি প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে। ঐতিহাসিক প্রস্তাবটি সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিতে বাংলাদেশে কমিউনিটি ক্লিনিকভিত্তিক মডেল প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অসামান্য উদ্ভাবনী নেতৃত্বকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিয়েছে। তারা এই উদ্যোগকে ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে উল্লেখ করেছে।
দেশের গ্রামীণ জনপদে যেকোনো প্রান্তে কিছু পথ যেতে না যেতেই চোখে পড়ে একেকটি কমিউনিটি ক্লিনিক। প্রায় একই নকশায় তৈরি ছোট্ট ভবনে এই ক্লিনিক ব্যবস্থাপনা দিনে দিনে মানুষের কাছে অপরিহার্য ভরসা হয়ে উঠেছে। অন্তত মাতৃস্বাস্থ্য, শিশুস্বাস্থ্য, সাধারণ অসুখবিসুখে দোরগোড়ায় সহজেই প্রাথমিক সেবাটুকু পাওয়া যায় কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে। একজন কমিউনিটি হেলথকেয়ার প্রভাইডার বা সিএইচসিপি এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মূল দায়িত্ব পালন করে থাকেন সপ্তাহের ছয় দিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত। প্রথমে সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে প্রকল্পটি পরিচালনা করা হলেও ২০১৮ সালের নতুন আইনের মাধ্যমে এই কমিউনিটি ক্লিনিক এখন চলছে কমিউনিটিভিত্তিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের আওতায়। প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকে ২৯ ধরনের ওষুধ ও চিকিৎসাসামগ্রী বিনা মূল্যে বিতরণের ব্যবস্থা রয়েছে। শুরুতে কমিউনিটি ক্লিনিকে সন্তান প্রসবের ব্যবস্থা না থাকলেও পরবর্তী সময়ে এটি ঘরের কাছে সহজে সন্তান প্রসবের নিরাপদ স্থান হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে। ১৯৯৬ সালে একনেক সভায় অনুমোদনের পর ১৯৯৮ সালে কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়। ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা হস্তান্তরের আগ পর্যন্ত ১০ হাজারেরও বেশি কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করা হয়। পরে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় গিয়ে কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করে দেয়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এসে আবারও কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করে। এর পর থেকে দ্রুত কমিউনিটি ক্লিনিকের সংখ্যা আরো বাড়তে থাকে। বিভিন্ন প্রচার-প্রচারণা চালানো হয় ব্যাপকভাবে। এক পর্যায়ে এই কার্যক্রম দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও রোল মডেল হিসেবে প্রশংসিত হয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ে।
সমাজ ও স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা বিশ্লেষকদের চোখে গত ৫০ বছরে দেশের প্রকৃত গণমুখী কার্যক্রমের মধ্যে এই কমিউনিটি ক্লিনিক ব্যবস্থা অনেক কিছু ছাপিয়ে ওপরে উঠে গেছে। জাতিসংঘের স্বীকৃতি একটি বড় অনুপ্রেরণা। কমিউনিটি ক্লিনিকের এই উদ্যোগ এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।