- মৃত্যু ও শনাক্তের সর্বোচ্চ রেকর্ড
- অকার্যকর উপজেলা করোনা ইউনিট
এম সাইফুল ইসলাম
খুলনা বিভাগ করোনার শুধু হট স্পট নয়। এখন দেশের সব বিভাগের চেয়ে শনাক্ত ও মৃত্যুর রেকর্ড গড়ছে। প্রতিদিন ঊর্দ্বমুখী করোনার দাপট। হিমশিম খাচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগ। জাতীয়ভাবে স্বাস্থ্যবিধি চালু থাকলেও মানুষ সেগুলো মানছে না। চলছে গণপরিবহনসহ সব ধরনের যানবাহন। মানা হচ্ছে না সামাজিক দূরত্ব। নানা অজুহাতে মানুষ ঘর থেকে রাস্তায় বের হচ্ছে। বিশেষ করে যুবকদের আড্ডা ঠেকানো যাচ্ছেনা। এমতবাস্তায় আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে সমগ্র খুলনায় শুরু হচ্ছে কঠোর লকডাইন। এর পাশাশি বিভাগের উপজেলা পর্যায়ের হাসাপাতালগুলোতে করোনার ইউনিট থাকলেও সেখানে নেই পর্যাপ্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা। যন্ত্রপাতি থেকে জনবল সব কিছুরই সঙ্কট রয়েছে। এমনকি অনেক জেলা শহরের হাসপাতালেও নেই আধুনিক চিকিৎসার সুযোগ।
রোববার খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য মতে খুলনা ফের করোনাভাইরাসে সর্বোচ্চ মৃত্যু রেকর্ড হয়েছে। বেড়েছে শনাক্তের সংখ্যাও। গত ২৪ ঘণ্টায় বিভাগে ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে আজও কুষ্টিয়ায় সর্বোচ্চ সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে বিভাগে ৭৬৩ জনের শরীরে করোনার উপস্থিতি পাওয়া গেছে এবং সুস্থ হয়েছেন আরও ১৯৪ জন।
রোববার (২০ জুন) দুপুরে বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক রাশেদা সুলতানা এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের দফতর সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় কুষ্টিয়ার সাতজন, খুলনার দুইজন, বাগেরহাটের দুইজন, সাতক্ষীরার দুইজন, যশোরের চারজন, নড়াইলের একজন, মাগুরার একজন, চুয়াডাঙ্গার পাঁচজন এবং ঝিনাইদহের চারজন মৃত্যুবরণ করেছেন।
পুরোপুরি প্রস্তুত হয়নি সব জেলা শহর
কাল থেকে খুলনায় কঠোর লকডাউন
এর আগে শনিবার (১৯ জুন) বিভাগে সর্বোচ্চ ২২ জনের মৃত্যু হয়। আর বৃহস্পতিবার (১৭ জুন) বিভাগে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ১৮ জনের মৃত্যু হয়। তবে শুক্রবার বিভাগে ৮ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
খুলনা বিভাগের মধ্যে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় চুয়াডাঙ্গায় গত বছরের ১৯ মার্চ। করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে রোববার সকাল পর্যন্ত বিভাগের ১০ জেলায় মোট শনাক্ত হয়েছে ৪৫ হাজার ৩২ জন। আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮২৫ জনে। এ সময় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩৪ হাজার ৩২০ জন।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের জেলাভিত্তিক করোনা সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, খুলনায় ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছে ২২৩ জন। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে ১২ হাজার ৮২১ জন। মারা গেছে ২০৮ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ৯ হাজার ৯৯২ জন।
বাগেরহাটে নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৬৮ জনের। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে ২ হাজার ৫৫০ জন। আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৬৫ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৭৫৪ জন।
সাতক্ষীরায় ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছে ১৪ জন। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে ২ হাজার ৮৬৬ জন এবং মারা গেছেন ৬২ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১ হাজার ৯৭৬ জন।
যশোরে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছে ৭৩ জন। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে ৯ হাজার ৪৮০ জন। মারা গেছেন ১০৮ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ৬ হাজার ৭৪৮ জন।
২৪ ঘণ্টায় নড়াইলে নতুন করে শনাক্ত হয়েছে ৪৪ জন। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে ২ হাজার ২৭২ জন। মারা গেছেন ৩১ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৮৪৭ জন।
মাগুরায় ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে কোন রোগী শনাক্ত হয়নি। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৩৮৫ জন। এ সময় মারা গেছেন ২৫ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ২২০ জন।
ঝিনাইদহে ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছে ৯০ জন। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে ৩ হাজার ৩৯৬ জন। মারা গেছেন ৬৬ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ৮৮২ জন।
২৪ ঘণ্টায় কুষ্টিয়ায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছে ১৬৪ জন। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে ৬ হাজার ৩৩৮ জন। মারা গেছেন ১৫৪ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ৫ হাজার ৮ জন।
চুয়াডাঙ্গায় ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছে ৬৮ জন। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে ২ হাজার ৫৯১ জন। মারা গেছেন ৭৩ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৯৩৮ জন।
মেহেরপুরে নতুন করে শনাক্ত হয়েছে ১৯ জন। এ নিয়ে জেলায় মোট শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৩৩৩ জন। আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৩৩ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ৯৫৫ জন।
॥ খুলনায় কাল থেকে এক সপ্তাহের কঠোর লকডাউন ॥
মঙ্গলবার (২২ জুন) থেকে পরবর্তী সাতদিন জেলা ও মহানগরে এ কঠোর লকডাউন পালন করা হবে। শনিবার (১৯ জুন) জেলা করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এসময় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, কাঁচামাল ও ঔষধ বহনকারী যানবাহন ব্যতীত কোন গণপরিবহণ খুলনায় প্রবেশ করতে বা বের হতে পারবে না। করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু হার আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসক জানান, সপ্তাহব্যাপী কঠোর বিধিনিষেধ চলাকালে নগরীতে জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে ওয়ার্ড ভিত্তিক কমিটির মাধ্যমে বিধিনিষেধ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা হবে। কঠোর লকডাউন বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য অতিশীঘ্রই গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সকলকে অবহিত করা হবে। মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করতে মোবাইলকোর্টের মাধ্যমে জরিমানা আদায়, স্বাস্থ্যবিধি পালনে মনিটরিং জোরদার করা এবং প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের না হতে প্রচার-প্রচারণা চলমান থাকবে।
॥ দেড় বছরে উন্নত হয়নি উপজেলা পর্যায়ের করোনা চিকিৎসা ॥
করোনা সংক্রমণের দেড় বছরে উন্নত হয়নি খুলনা বিভাগের উপজেলা পর্যায়ের করোনা চিকিৎসা। ফলে উচ্চসংক্রমণের এই সময়ে উপজেলা পর্যায়ে গুরুতর রোগীদের চিকিৎসার জন্য নির্ভর করতে হচ্ছে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটের উপর। উপজেলায় কাগজে ১০ বেড থাকলেও বাস্তবে নাই। করোনা আক্রান্ত গুরুতর অসুস্থদের একমাত্র চিকিৎসাস্থল খুলনা মেডিকেল কলেজের করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলছেন করোনা চিকিৎসার উন্নয়নে নেই বরাদ্দ, সিভিল সার্জন জানেন না কত খরচ হয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলছেন পর্যাপ্ত বরাদ্দ ও সরঞ্জাম না থাকায় এই অবস্থা। আর সিভিল সার্জন বলছেন রোগীরা নিজের ইচ্ছায় জেলা শহরে চলে যায় আর করোনা চিকিৎসায় উপজেলা পর্যায়ের বরাদ্ধের ব্যাপরে তার জানা নাই।
॥ প্রস্তুত নেই জেলা শহর ॥
খুলনা বিভাগের হাসাপাতালগুলোতে সীমিত পরিসরে আইসিইউ রয়েছে। এর মধ্যে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২০ টি আইসিইউ শয্যা রয়েছে। সাতক্ষীরায় ৮, বাগেরহাটে ৩, কুষ্টিয়ায় ৪, যশোরে ৩ ও মেহেরপুরের ২ টি রয়েছে।
করোনার জন্য প্রস্তুত রয়েছে মাত্র আট শ’ ২৮ টি সাধারণ শয্যা। বাগেরহাট ৫০, চুয়াডাঙ্গা একশ’ ৪০, যশোর ৬৮, ঝিনাইদহ ৫০, খুলনা ২০০, কুষ্টিয়া ৫০, মাগুরা ৩০, মেহেরপুর ৫০, নড়াইল এক শ’ ২০ ও সাতক্ষীরা ৮০ টি।
খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডাঃ রাশিদা খানম বলেন, প্রধানমন্ত্রী প্রতিটি জেলা সদরে আইসিইউর প্রস্তুত রাখার কথা বলেছে। যে সকল জেলা শহরে আইসিইউ নেই, সেসব জেলায় কিভাবে দ্রুত চালু করা যায় তা গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়েছে।