এম সাইফুল ইসলাম : খুলনার ছয়টি আসন থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে চেয়েছেন ৪৬ জন নেতা। এর মধ্যে বর্তমান সংসদ সদস্য, মেয়র ও উপজেলা চেয়ারম্যানরাও রয়েছেন। মনোনয়ন ঘোষণার পরে মনোনয়ন বঞ্চিত প্রার্থী ও তার অনুসারিরা কষ্ট ভুলে নির্বাচনি মাঠে সক্রিয় রয়েছেন।
খুলনা-১ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ও হুইপ পঞ্চানন বিশ্বাসের পরিবর্তে মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক এমপি ননী গোপাল মন্ডল। এই আসন থেকে মনোনয়ন চেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্যসহ ১৪ জন। যার মধ্যে ছিলেন ছিলেন বটিয়াঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আশরাফুল আলম খান। বটিয়াঘাটার অধিকাংশ আওয়ামী লীগ নেতা তাঁর অনুসারী। পঞ্চানন বিশ্বাসসহ তাঁর অনুসারীরাও মনোনয়নবঞ্চিত হওয়ায় ক্ষুব্ধ। এই নেতাদের সমর্থন পাওয়াও চ্যালেঞ্জ। বর্তমান সংসদ সদস্য পঞ্চানন বিশ্বাস বলেন, আমি আওয়ামীলীগের কর্মি। নৌকার বিরুদ্ধে কখনো নির্বাচন করিনি, কখনো করবো না।
বটিয়াঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আশরাফুল আলম খান বলেন, দলের সিদ্ধান্ত চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত। দলের মনোনিত প্রার্থীর পক্ষেই আমি কাজ করবো।
এই আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশি ছিলো জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য নান্টু রায়। তিনি তার সমর্থকদেও উদ্দেশ্য ক্ষুধে বার্তা পাঠান। ক্ষুধে বার্তাটি হলো, প্রিয়জন, আপনার সবিশেষ মনোযোগ ও ভালবাসার যথার্থ মূল্যায়ন আমি করতে পারিনি। তবু যে অকৃপণ ভালবাসা পরামর্শ দিয়ে ঋণী করেছেন, কৃতজ্ঞতাপ্রকাশ তার জন্য যথেষ্ট নয়। অতীতের ন্যায় ভবিষ্যতেও পাশে রাখবেন, এই প্রার্থনা। শুভ সময়। জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু।
প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ায় এস এম কামাল হোসেন এর সমর্থকরা উচ্ছ্বসিত । খুলনা-৩ আসনে টানা তিনবারের এমপি এবং দুই দফায় শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়া বেগম মন্নুজান সুফিয়ান মনোনয়ন পাননি। আসনটিতে এবার প্রথম মনোনয়ন পেয়েছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন। এই আসন থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন মহানগর আওয়ামীলীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক শেখ ফারুক হাসান হিটলু। তিনি জানান, দলের কাছে মনোনয়ন চেয়েছি, দল যাকে যোগ্য বলে বিবেচনা করেছে, আমিও সেই বিবেচনাকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। দলের সিদ্ধান্তকে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত মনে কওে নৌকার পক্ষে কাজ করবো।
খুলনা-৪ আসনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফের নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক খেলোয়াড় ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী। তার বিপক্ষে মনোনয়ন কিনেছেন আওমীলীগের এক ঝাক নেতা। এর মধ্যে রয়েছে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সুজিত অধিকারি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ কামরুজ্জামাল জামাল, যুবলীগের মহানগর সভাপতি সফিকুর রহমান পলাশ। মনোনয়ন না পাওয়ার পরেই সফিকুর রহমান পলাশের একটা ফেসবুক পোষ্ট ছড়িয়ে পড়ে, যে পোষ্টটি হলো, আমি আপনাদেও কাছে পরিষ্কারভাবে বলি, আমি কিছু হই বা না হই আমি আপনাদের পাশে সব সময়ই থাকবো। এছাড়া মনোনয়ন ঘোষণার দিনেই তার বাসার সামনে ককটেল ফুটানো হয়, যা নিয়ে খুলনা জুড়ে আলোচনার ঝড় বয়ে যায়।
কামরুজ্জামান জামালের অনুসারি হিসেবে পরিচিত জেলা ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক চিশতি নাজমুল বাশার সম্রাট জানান, কামরুজ্জামান জামাল ভাইকে মনোনীত করে নাই সেক্ষেত্রে তার একজন স্নেহশীষ হিসেবে খারাপ লাগা থাকলেও দলের প্রতি সম্মান ও আনুগত্যের প্রশ্নে আমরা অনড় আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নৌকাকে বিজয় করতে খুলনা জেলার অন্তর্গত নৌকা মনোনীত সকল প্রার্থীর পক্ষে সাধারণ মানুষের নিকট কামরুজ্জামান জামাল ভাইয়ের সাথে থেকেই ভোট প্রার্থনা করব।
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ কামরুজ্জামাল জামাল বলেন, দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা যার হাতে নৌকা তুলে দিয়েছেন আমরা তাকেই সমর্থন করি। বঙ্গবন্ধুর নৌকা, শেখ হাসিনার নৌকা, আওয়ামীলীগের নৌকা, আমরা আওয়ামী লীগের আদর্শেও একজন কর্মি। আমরা দলের প্রতি অনুগত, আস্থা, বিশ^াস রেখেই আমরা বিগত দিনের পথ চলেছি, আগামি দিনেও পথ চলবো। নৌকা যার হাতে দিয়েছে, আমরা তার পক্ষেই কাজ করবো।
খুলনা-৫ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য নারায়ন চন্দ্র চন্দ। এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশি ছিলো জেলা আইনজীবি সমিতির সভাপতি এড সাইফুল ইসলাম, ফুলতলা উপজেলা চেয়ারম্যান ও দলের উপজেলা সভাপতি আকরাম হোসেনসহ একাধিক। দলীয় মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত হয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে খুলনা-৫ আসন থেকে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ফুলতলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ আকরাম হোসেন।
জলা আইনজীবি সমিতির সভাপতি এড সাইফুল ইসলাম জানান, দল যাকে যোগ্য মনে করেছে , তাকেই মনোনয়ন দিয়েছে। দলীয় সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত। আমি নৌকার পক্ষে কাজ করবো। খুলনা-৬ আসনে আক্তারুজ্জামান বাবুর পরিবর্তে মনোনয়ন পেয়েছেন পাইকগাছা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মো. রশীদুজ্জামান।
প্রতি নির্বাচনেই খুলনা-৬ আসনে চমক দেখা যায়। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি। দলীয় মনোনয়ন পত্র সংগ্রহকারীরা হলেন বর্তমান সংসদ সদস্য মোঃ আক্তারুজ্জামান বাবু, সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি এ্যাডভকেট সোহরাব আলী সানা, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভকেট সুজিত অধিকারী, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান জামাল, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার প্রেম কুমার মন্ডল, জেলা আওয়ামী লীগের কোষাদাক্ষ্য ইঞ্জিনিয়ার মাহবুব আলম, জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বানিজ্য বিষায়ক সম্পাদক শেখ রাশেদুজ্জামান রাসেলসহ আঠারো জন। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া আলোচিত প্রার্থীদের পেছনে ফেলে নৌকা পেয়েছেন এক সময়কার সিপিবি নেতা ও বর্তমানে আওয়ামী লীগ নেতা মো. রশীদুজ্জামান। ২০০৯ সালে তিনি পাইকগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
বর্তমান সংসদ সদস্য মোঃ আক্তারুজ্জামান বাবুর অনুসারি জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা গাজী কামরুল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বর্তমান সাংসদের সাথে ছবি পোষ্ট করে ক্যাপশনে লিখেছে “প্রিয় নেতা প্রিয় ভাই আলহাজ্ব মোঃ আখতারুজ্জামান বাবু ভাইয়ের সঙ্গে সৌজন্য স্বাক্ষাৎ সব সময় প্রিয় ভাইয়ের দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্য কামনা করি”
বর্তমান সংসদ সদস্য মোঃ আক্তারুজ্জামান বাবু বলেন, আমি নৌকার লোক। কখনো নৌকার বিপক্ষে যাবো না। দলের সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত। দলীয় প্রার্থীর পক্ষে মাঠে কাজ করবো।
প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত