সিরাজুল ইসলাম, শ্যামনগর : বিদেশে রপ্তানির জন্য কাঁকড়া ও কুচিয়ার চাষকে উৎসাহ দিতে বিশেষ প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় সারা দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ছয় হাজার কুচিয়া ও কাঁকড়াচাষি তৈরি করা হবে। ২৯টি জেলায় পরীক্ষামূলকভাবে পুকুরে কুচিয়া ও কাঁকড়ার চাষ করা হবে। প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা।
গত মার্চ মাসে ‘বাংলাদেশের নির্বাচিত এলাকায় কুচিয়া ও কাঁকড়া চাষ এবং গবেষণা’ শিরোনামের এ প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন করা হয়।
বর্তমানে উপকূল অঞ্চলে বসবাস করেন কিংবা যাঁরা আদিবাসী, তাঁরা স্বল্প পরিসরে স্থানীয়ভাবে কাঁকড়া ও কুচিয়ার চাষ করেন। এসব এলাকায় কাঁকড়া ও কুচিয়া চাষে উৎসাহী খামারিদের প্রশিক্ষণ দেবে মৎস্য অধিদপ্তর। প্রাথমিকভাবে ওই অঞ্চলের মৎস্য অধিদপ্তর কার্যালয় থেকে উৎসাহী চাষিদের আমন্ত্রণ জানানো হবে। তবে এর আগে প্রথমে মৎস্য অধিদপ্তরের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এরপর সেই প্রশিক্ষকেরা সংশ্লিষ্ট এলাকার কাঁকড়া ও কুচিয়া চাষে উৎসাহীদের প্রশিক্ষণ দেবেন। এ জন্য প্রশিক্ষণার্থীদের নগদ অর্থও দেওয়া হবে। ২৮৭টি ব্যাচে কমবেশি ৩০ জন করে ছয় হাজার কাঁকড়া ও কুচিয়া খামারি তৈরি করা হবে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে। এ পর্যায়ে এনজিওর সম্প্রসারণ কর্মী ও উদ্যোক্তারাও প্রশিক্ষণ পাবেন। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত খামারি নিজের বা লিজ নেওয়া পুকুরে কাঁকড়া ও কুচিয়া চাষ করবেন। এঁরা উদ্যোক্তা হিসেবে কাঁকড়া ও কুচিয়া চাষ করে বিদেশে রপ্তানি করবেন।
পুরো প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২৫সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৮সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত।
এ ছাড়া স্থানীয় লোকজন যাতে কাঁকড়া ও কুচিয়া চাষে উৎসাহী হন, সে জন্য সারা দেশের বিভিন্ন জেলার ২৪৯টি পুকুরে কাঁকড়া চাষ করে প্রদর্শন করা হবে। আর ২৪০টি পুকুরে কুচিয়ার চাষ প্রদর্শিত হবে। এসব পুকুরে কীভাবে কাঁকড়া ও কুচিয়া চাষ হয়, তা হাতে-কলমে শেখানো হবে।
কাঁকড়া চাষে উপকূলীয় অঞ্চলগুলোকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, পিরোজপুর, কক্সবাজার, নোয়াখালী ও চট্টগ্রাম জেলায় কাঁকড়া চাষে উৎসাহীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। আর নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, শেরপুর, টাঙ্গাইল, গোপালগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, দিনাজপুর, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁ, বগুড়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, বরিশাল, খুলনা ও সাতক্ষীরায় কুচিয়া চাষে উৎসাহীরা এ সরকারি প্রশিক্ষণ পাবেন। তবে নৃগোষ্ঠীর লোক যেসব জেলায় বসবাস করেন,
সেসব জেলাকে গুরুত্ব দেওয়া হবে।
প্রকল্পের প্রস্তাবিত পরিচালক বিনয় চক্রবর্তী এই প্রতিপাদককে বলেন, বিদেশে কুচিয়া ও কাঁকড়ার বিপুল চাহিদা রয়েছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে কাঁকড়া ও কুচিয়া চাষে আগ্রহীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। আধুনিক প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষিত খামারিরা কাঁকড়া ও কুচিয়া চাষ করে বিদেশে রপ্তানির পরিমাণ কয়েক গুণ বাড়াতে পারবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
বিনয় চক্রবর্তী মূলত কুচিয়া নিয়ে গবেষণা করেন। তিনি জানান, বাংলাদেশের আদিবাসীরা তাঁদের শত বছরের পুরোনো পদ্ধতিতে খাল-বিল থেকে কুচিয়া ধরেন। প্রাথমিকভাবে তাঁদের ঐতিহ্য অনুযায়ী কীভাবে কুচিয়া ধরেন ও সংরক্ষণ করেন সে সম্পর্কে ধারণা নেওয়া হবে। পরে তাঁদের আরও আধুনিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সহজ, সাশ্রয়ী ও টেকসইভাবে কুচিয়া চাষের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে কাঁকড়ার কোনো হ্যাচারি গড়ে না ওঠায় অনিয়ন্ত্রিতভাবে খাল-বিল, সমুদ্র উপকূল অঞ্চল থেকে কুচিয়া ও কাঁকড়ার পোনা সংগ্রহ করা হয়। এতে জলজ অন্য প্রাণীর জীবনও হুমকির সম্মুখীন হয়। তাই এ দুটি জলজ প্রাণী ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে কুচিয়ার চাহিদা থাকায় এ দেশের ময়মনসিংহ ও শেরপুরের নৃগোষ্ঠীর লোকেরা প্রকৃতি থেকে কুচিয়া সংগ্রহ করে রপ্তানি করেন। জানা গেছে, বাংলাদেশের একটি কুচিয়ার ওজন সাধারণত ৩০০ থেকে ২০০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়। পৃথিবীর অন্য দেশে কুচিয়ার আকার ১০০০ গ্রামের বেশি হয় না। ফলে বিদেশে বাংলাদেশি কুচিয়ার চাহিদা দিনে দিনে বাড়ছে।
রপ্তানি: বাংলাদেশ থেকে ১৯৭৭ সালে প্রথম দুই হাজার ডলারের কাঁকড়া রপ্তানি হয়। গত ২০২৪-২৫অর্থবছরে রপ্তানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩কোটি ২৯ লাখ ডলারে। পরিমাণের দিক থেকে গত বছর পাঁচ হাজার টন কাঁকড়া রপ্তানি হয়েছে। চীনে বেশি কাঁকড়া রপ্তানি হয়। মালয়েশিয়া, জাপান, হংকং, থাইল্যান্ড, তাইওয়ান, সিঙ্গাপুরের মতো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও দূরপ্রাচ্যের দেশগুলোতেও কাঁকড়া রপ্তানি হয়।
বাংলাদেশে উৎপাদিত কুচিয়া সাধারণত দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড, লাওস, ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়ায় রপ্তানি হয়। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৯৩লাখ ডলারের কুচিয়া রপ্তানি হয়েছে। জানা গেছে, গত অর্থবছরে তা এক কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। সাতক্ষীরার উপকূলীয় অঞ্চল শ্যামনগর আশাশুনি কালিগঞ্জ ও তালা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে খাগড়া চাষের পাশাপাশি কচি চাষও দেখা যাচ্ছে শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা মুন্সিগঞ্জ ও বুড়ি গোয়ালিনী ইউনিয়নে প্রায় শতাধিক কচিয়া চাষের প্রকল্প তৈরি হয়েছে সেখান থেকে প্রতিবছর প্রায় ২০ মেট্রিক টন কুচিয়া রপ্তানি হচ্ছে। এছাড়াও যাহারা সুন্দরবনে কাকড়া আহরণ করে তারা কাঁকড়া ধরার জন্য এই কুসিয়া কিনে নিয়ে যায় কাঁকড়ার প্রধান খাদ্য হিসেবে সুন্দরবনে কষিয়া বেশি ব্যবহার হয়। কাঁকড়ার পাশাপাশি কুচিয়া চাষ করে উপকূলীয় অঞ্চলের অনেকেই স্বাবলম্বী হয়েছে। শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগঙ্গলে ইউনিয়নের কুচিয়া চাষাশি মানবেন্দ্র নাথ মন্ডল বলেন তিনি কাঁকড়ার পাশাপাশি তিন বিঘা জমিতে একটি কুঁচিয়া চাষের ফার্ম তৈরি করেছেন সেখানে কুশিয়ার রেনু ছেড়ে দিয়ে ছয় মাস পর পর তা ধরে বিক্রয় করে। তার কাছ থেকে স্থানীয় কুষ্টিয়া ব্যবসায়ীরা এই কষিয়াকে নিয়ে সুন্দরবনে কাকড়া আহরণ কারীদের কাছে বিক্রয় করে। তিনি আরো বলেন এই এলাকায় অল্পমাত্রায় কুচি আসাস হয় যাহা বাইরে রপ্তানি হয় না স্থানীয়ভাবে চাহিদা মেটানো হয়। বিশেষ করে রপ্তানি করা কচিয়া চাষ হয় খুলনা রামপাল বটিয়াঘাটা মংলা এই সমস্ত এলাকায় আর এই সমস্ত এলাকার কষিয়া বিদেশে রপ্তানি হয় তা থেকে দেশে একটি বড় রাজস্ব আসে। তা ওই এলাকার মিজানুর রহমান জানান কুশিয়ার পাশাপাশি তেলাপিয়া মাছ খাগড়ার খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয় কারণ যখন কুসিয়া না পাওয়া যায় তখন তেলাপিয়া মাছ ছোট ছোট করে কেটে কাঁকরার হ্যাচারিতে কাঁকড়ার খাদ্য হিসেবে দেওয়া হয়। শক্ত কাকড়া নরম করার বেলায় ও একই খাদ্য ব্যবহার করা হয় । শ্যামনগর উপজেলার যতীন্দ্র নগর এলাকার রফিকুল ইসলাম ৪৫ তিনি তিন বিঘা জমিতে কাঁকড়া চাষ করেছেন এবং এক বিঘা জমিতে কুচিয়া চাষ করেছেন তার এই এক বিঘা জমির এর থেকে যে কুচিয়া উৎপাদন হয় তা দিয়ে তিনি কাঁকড়ার খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন। শ্যামনগর উপজেলার ইউনিয়নের মোতালেব ২৫ তাইজুল ৩১ ইসমাইল ২৫ মসলেম ৪৫ আব্দুল খালেক ৩০ মোজাম্মেল ২৮ বুড়ি গলনি ইউনিয়নের আনসার ৪২ আমিনূল ৫০ মোকসেদ ৩০ কোভিদ হোসেন ৫৫ কামাল হোসেন ৩৫ শাহাদাত ৪০ নুরালি ৫৫ সোলায়মান ২৮ কি অনুচরণ ৩২ হরেন্দ্রনাথ ৩৫ গোবিন্দ লাল চল্লিশ রেজাউল ৫২ শওকাত তেতাল্লিশ হরেন্দ্রনাথ পঞ্চান্ন মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের তমিজউদ্দীন ৪৩ আনসার ২২ আব্দুল করিম উন্তিরিশ রহমত ৫৫ নিমাই মন্ডল ৪২ কাওসার ৩৩ মিকাইল ২৪ আব্রাহাম পঞ্চান্ন কেরামত আলী ২২ আইয়ুব আলী ৪৩ তারা সকলেই এই প্রতিবেদককে জানান সরকার কাকড়া চাষ ও কুচিয়া চাষে যে প্রকল্প হাতে নিয়েছে তা যেন আমাদের তৃণমূল পর্যায়ের হাতে দরিদ্র মানুষের দ্বারপ্রান্তে আসে সরকারের সহতা পেলে আমরা কাঁকড়া ও কুচিয়া চাষে স্বাবলম্বী হতে পারব। এ ব্যাপারে শ্যামনগর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা তুষার মজুমদার জানান আমাদের হাতে এখনো পর্যন্ত এই প্রকল্পের কোন অর্থ বা চিঠি কিছুই আসেনি যদি আসে তাহলে শ্যামনগর উপজেলার উপকূলীয় অঞ্চলের হতদরিদ্র মানুষ দেখে তালিকা চূড়ান্ত করে তাদেরকে সরকারি আর্থিক সহায়তা করব। এই প্রকল্প সংক্রান্ত বিষয় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অতিরিক্ত সচিব জানান প্রকল্পটি অনুমোদন হয়ে আছে যেকোনো সময় এর কার্যক্রম শুরু হবে এবং মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ ছাড় করা হবে। তিনি আরো বলেন এই উপকার ভোগের তালিকায় থাকবেন উপকূলীয় অঞ্চলের সবচেয়ে হতদরিদ্র গোষ্ঠী।
কাঁকড়া-কুচিয়া চাষে সরকার সহায়তা করবে
![](https://dainikjanmobhumi.com/wp-content/uploads/2025/02/01-02-2025-1-330x220.jpg?v=1738389456)
Leave a comment