এম এন শিপলু
রাশিয়া ও ইউক্রেনে যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশ থেকে অন্যান্য দেশগুলোতে কাঁচা পাটের চাহিদা কমেছে। ফলে কাঁচা পাটের আন্তর্জাতিক বাজার হারাতে পারে বাংলাদেশ।
জানা যায়, বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশ থেকে বেলজিয়াম, পাকিস্তান, চীন, ভারত, নেপাল, ব্রাজিল, ভিয়েতনাম, আইভেরি কোস্ট, এলসালভাদর, রাশিয়া, ফিলিপাইন, ইউকে ও তিউনেশিয়ায় পাট রপ্তানী হয়। চলতি মৌসুমের শুরু থেকেই যুক্তরাস্ট্র, বেলজিয়াম, আইভেরীকোস্ট, এলসালভাদর ও রাশিয়ায় পাট রপ্তানি হয়েছে। গত তিন মাসে পাট রপ্তানি ১০ হাজার বেলের কাছাকাছি।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্ব বাজারে এবার এ অঞ্চলের কাঁচা পাটের চাহিদা কমেছে। বর্তমানে পাকিস্তানে পাট রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। পাশাপাশি অনাবৃষ্টির কারণে নদীর নোনা পানিতে কাঁচা পাট পঁচানোর ফলে সোনালী আঁশ গুণগত মান হারিয়েছে। এসব কারণেই চাহিদা ও দাম কমেছে। এ মৌসুমে খুলনাঞ্চলের হাটে-বাজারে কাঁচা পাট মন প্রতি দুই হাজার পাঁচশ’ থেকে ২৮শ’ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ২০২০ ও ২১ সালে প্রতি মনের দাম ছিল পাঁচ হাজার টাকা।
এতদাঞ্চলের পাট রপ্তানিকারকদের বড় একটি বাজার হলো পাকিস্তান। বর্তমানে পাকিস্তানে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে সেখানকার মিলগুলোতে কাঁচাপাটের চাহিদা কমেছে। এসব কারণে দৌলতপুরের রপ্তানিকারকরা গেল অর্থবছরে পাট রপ্তানি করতে পারেনি। ফলে পাকিস্তানের পাটের বাজার হারাতে হয়েছে।
কাঁচা পাট নিয়ে মৌসুমের শুরুতেই রাজনীতিকরা হৈচৈ বাঁধায়। পাটকলগুলোর উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে এবং কাঁচা পাট বিক্রিতে বৈদেশিক মূদ্রা অর্জনে ২০১০ সালে ১৫ জুলই সরকার কাঁচাপাটের মানভেদে মনপ্রতি এক হাজার দুশ টাকা থেকে এক হাজার আটশ টাকা দাম বেঁধে দেয়। এরপর থেকে বেঁধে দেওয়া দামে পাট বিক্রি হয়নি। আম্পান ও ইয়াসের কারণে বড় ধরণের ধাক্কা খায় দক্ষিণাঞ্চলের পাট ক্ষেত। ২০২০ ও ২১ সালে এক লাফে মন প্রতি দাম বাড়ায় পাঁচ হাজার টাকায়।
পাট অধিদপ্তরের সূত্রে জানা যায়, মোংলা বন্দর দিয়ে ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ছয় কোটি ৬৪ লাখ টাকা মূল্যের ছয় হাজার নয়শ’ বেল পাট, ২০২০-২১-অর্থ বছরে ৯৮ কোটি ৪৯ লাখ টাকা মূল্যের ৮১ হাজার বেল, ২০২১-২২ অর্থ বছরে ৫৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা মূল্যের ৩১ হাজার বেল পাট রপ্তানি হয়। মহামারি করোনার কারণে বিশ্ব বাজারে কাঁচা পাঠ রপ্তানি থমকে যায়।
ডুমুরিয়া উপজেলার শোভনা গ্রামের চাষি উত্তম কুমার জানান, স্থানীয় হাটে-বাজারে কাঁচা পাট মনপ্রতি দুই হাজার পাঁচশ’ টাকা থেকে ২৮শ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, কৃষি শ্রমিকের মুজুরি বেশী, সারের মূল্য বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। স্বল্প দাম হওয়ায় কৃষকরা আগ্রহ হরিয়েছে।
পাট অধিদপ্তরের মূখ্য পরিচালক সরজিত সরকার তথ্যমতে, সাতক্ষীরায় এক লাখ ৮৯ হাজার বেল, খুলনায় ২৭ হাজার বেল এবং বাগেরহাটে ২২ হাজার বেল পাট উৎপাদন হয়। এ অঞ্চলে কপিলমুনি, আঠারোমাইল, চুকনগর, শৈলদহ বাজার, বড়বুনি, চিতলমারির বড়বুনিয়া, মোল্লাহাট, সাতক্ষীরার বাশদহ, ঝাউডাঙ্গা, তালা, শুভাশিনী, জাতপুর ও পাটকেলঘাটা হাটে তোষা মনপ্রতি চব্বিশ’শ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ডুমুরিয়ার উপজেলার উপ-সহকারি পাঠ উন্নয়ন কর্মকর্তা নিলয় মল্লিক জানান, অনাবৃষ্টির কারণে নদীর নোনা পানি দিয়ে পাট পঁচানোর ফলে সোনালী আঁশ গুণগত মান হারিয়েছে।