জন্মভূমি রিপোর্ট : কোটাবিরোধী আন্দোলন চলাকালে নরসিংদী জেলা কারাগারে হামলার পর কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়া বন্দিদের মধ্যে শিশু হত্যা মামলার তিন আসামি কুষ্টিয়া আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন। বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) সকালে তারা কুষ্টিয়ার কুমারখালী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। তারা আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। তাদেরকে কারাগারে পাঠানো হবে।
কুষ্টিয়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পুলিশ পরিদর্শক জহিরুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আসামিরা হলেন- কুমারখালী উপজেলার রাধাগ্রাম এলাকার হানিফ শেখের ছেলে জালাল শেখ (৪৮), তার স্ত্রী মাফুজা খাতুন (৪২) এবং তাদের সন্তান বিল্লাল হোসেন (২০)। তারা নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ডাংগা এলাকার জহিরুল ইসলামের বাড়ির ভাড়াটিয়া। তারা তিন বছরের এক শিশুকে হত্যা মামলার আসামি। গ্রেপ্তারের পর থেকে তারা নরসিংদী জেলা কারাগারে বন্দি ছিলেন। দুর্বৃত্তরা হামলা ও অগ্নিসংযোগ করে অস্ত্র লুটের সময় এই তিন বন্দিও পালিয়েছিলেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, গত ২১ জুন নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ডাংগা এলাকার বাসিন্দা মেহেদী হাসানের (২২) তিন বছর বয়সী মেয়ে মায়শা আক্তার নিখোঁজ হয়। এ ঘটনায় থানায় তার পরিবারের পক্ষ থেকে একটি জিডি করা হয়। পরে অভিযোগের ভিত্তিতে ২৪ জুন নরসিংদী সদরের র্যাব জালাল শেখ, তার স্ত্রী মাফুজা খাতুন এবং তাদের সন্তান বিল্লাল হোসেনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা শিশুটিকে হত্যার কথা স্বীকার করেন। তারা শিশুটিকে হত্যার পর গুম করার জন্য তাদের ব্যবহৃত টয়লেটের হাউসের মধ্যে মরদেহ ফেলে দেন। পরদিন ২৫ জুন সকাল সাড়ে ৭টার দিকে আসামিদের ব্যবহৃত টয়লেটের হাউসের মধ্যে থেকে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে পলাশ থানায় মামলা করেন নিহতের বাবা মেহেদী হাসান।
জানা গেছে, নরসিংদী জেলা কারাগারটি শহরের ভেলানগরের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশেই অবস্থিত। এই ভেলানগর ও জেলখানা মোড়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা কয়েকদিন ধরেই লাগাতার বিক্ষোভ-সমাবেশ করছিলেন। শুক্রবারও সেখানে একই রকমভাবে কয়েক হাজার মানুষ বিক্ষোভ করছিলেন। তবে সেদিন সেখানে সাধারণ শিক্ষার্থীদের খুব একটা দেখা যায়নি। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে হঠাৎ করেই হাজারো জনতা কারাগারের দিকে এগোতে থাকে। তারা গিয়ে সেখানে প্রথমে ইট-পাটকেল, পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে। হামলাকারীদের প্রায় সবার হাতে লাঠিসোঁটা, দেশীয় অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। এ সময় প্রাথমিকভাবে কারারক্ষীরা তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন। বেশ কিছুক্ষণ ধরে তাদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। কিন্তু একপর্যায়ে কারারক্ষীরা পিছু হটে। তখন হামলাকারীরা কারাগারের দুই দিকের ফটক অনেকটা ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়ে এবং অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় হামলায় চার কারারক্ষী গুরুতর আহত হয়। পরে কারারক্ষীরা নিরুপায় হয়ে জেলখানার ভেতরে ঢুকে নিজেদের রক্ষা করেন। জেল কোড অনুযায়ী, গুলি করার নিয়ম থাকলেও তা করা হয়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হামলাকারীরা মূল কারাগারের ভেতরে ঢুকে সেলগুলো শাবল ও লোহার জিনিসপত্র দিয়ে ভেঙে কয়েদিদের পালিয়ে যেতে সাহায্য করে। কিছু কারারক্ষীর কাছ থেকে চাবি নিয়েও সেলের তালা খোলা হয়।
হামলা ও অগ্নিসংসোগে কারাগার ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। অফিস কক্ষ, কনডেম সেল, রান্নাঘর, খোলা চত্বর সব জায়গায় তাণ্ডবের চিহ্ন। দরজা-জানালাগুলো ভেঙে গেছে, দেয়ালে দেয়ালে পোড়া চিহ্ন। এ ঘটনায় ৮ শতাধিক কয়েদি পালিয়ে গেছে।
কুষ্টিয়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পুলিশ পরিদর্শক জহিরুল ইসলাম বলেন, নরসিংদী কারাগার থেকে পলাতক তিনজন বন্দি কুষ্টিয়া আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন। তাদের বাড়ি কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলায়। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।