চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে ‘বন্দি নির্যাতনের’ রেশ না কাটতেই হত্যা মামলার এক আসামি পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় প্রশাসনে তোলপাড় চলছে। এমতাবস্থায় কারাগারের নিরাপত্তা ও পরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। জানা গেছে, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে গত শনিবার নিখোঁজ হন ফরহাদ হোসেন রুবেল নামে এক হাজতি। তিনি নরসিংদীর রায়পুরার মীরেরকান্দি গ্রামের শুক্কুর আলী ভাণ্ডারির পুত্র। চট্টগ্রাম মহানগরীর সদরঘাট থানায় দায়ের হওয়া একটি হত্যা মামলার আসামি হিসেবে গত ৮ ফেব্রæয়ারি আগ্রাবাদের মিস্ত্রিপাড়া এলাকা থেকে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। ৯ ফেব্রæয়ারি থেকে রুবেল কারাগারে ছিল। তাকে রাখা হয়েছিল কেন্দ্রীয় কারাগারে ১৫ নম্বর কর্ণফুলী ভবনের পানিশমেন্ট ওয়ার্ডে। শনিবার সকালে নিয়মিত বন্দি গণনাকালে রুবেলের অনুপস্থিতির বিষয়টি ধরা পড়ে। দিনভর খোঁজ না পেয়ে শনিবার রাত পৌনে ১১টার দিকে কারাগারের জেলার মো. রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে সিএমপি কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় জেলার ও ডেপুটি জেলারকে প্রত্যাহার এবং দুই কারারক্ষীকে বরখাস্ত করা হয়েছে। বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়েছে আরেক কারারক্ষীর বিরুদ্ধে। এছাড়া ঘটনা তদন্তে গঠন করা হয়েছে তিন সদস্যের কমিটি। এর আগে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. শফিকুল ইসলাম খান ও জেলার রফিকুল ইসলাম ও কারা ডাক্তারসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে একজন বন্দিকে ভয়াবহ নির্যাতন করার অভিযোগ ওঠে। ওই বন্দির স্ত্রী তার স্বামীকে নির্যাতন করার অভিযোগ করে কারা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন। বর্তমানে মামলাটির তদন্ত করছে পিবিআই। ব্যবসায়িক একটি মামলায় আড়াই মাস ধরে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে ছিলেন রূপম কান্তি নাথ। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে গেলে ২৫ ফেব্রæয়ারি ভর্তি করা হয় চমেক হাসপাতালে। কারাগারে পড়ে গিয়ে অসুস্থ হওয়ার কথা বলা হলেও ৬০ বছর বয়সি রূপমের দেহে আছে আঘাতের চিহ্ন। রয়েছে শরীরের স্পর্শকাতর জায়গায় মারাত্মক জখম। রূপমের স্ত্রী অভিযোগ করেন, এ বছরের ২৪ ও ২৫ ফেব্রæয়ারি চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে রূপমকে বৈদ্যুতিক শক ও বিষাক্ত ইনজেকশন পুশ করে হত্যার চেষ্টা করা হয়। তিনি বলেন, একটি বিষয়ে সম্মতি আদায় করতে না পারায় তাকে (রূপম) হত্যাচেষ্টা করা হয়। চট্টগ্রাম কারাগারে নিরাপত্তা ও সুরক্ষা ব্যবস্থা যথাযথ করার ক্ষেত্রে যে যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে- পরপর দুটি ঘটনায় তা-ই উন্মোচন করে দিয়েছে। গুরুত্বের সঙ্গে এ ব্যাপারে দৃষ্টি দেয়া ও কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া অত্যন্ত জরুরি। বিশেষ করে কারা কর্তৃপক্ষের গাফিলতির বিষয়টি গণমাধ্যমে উঠেছে। এই বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে।