ডেস্ক নিউজ : জেলা প্রশাসকদের স্বাধীনভাবে কাজ করতে আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, এ সরকারের আমলে কারো রক্তচক্ষু বা ধমকের কারণে কোনো কাজ করার প্রয়োজন নেই। কারো ধমক শুনবেন না।
রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের শাপলা হলে ৩ দিনব্যাপী ডিসি সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ড. মুহাম্মদ ইউনূস এসব কথা বলেন।
জেলা প্রশাসকদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) নিজ নিজ জেলায় সৃজনশীল কাজের মাধ্যমে এক নম্বর হওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নিজের মতো করে যেটা আইন, যেটা দেশের জন্য করা দরকার, সেটা করতে হবে। দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে জেলা প্রশাসকদের সজাগ থাকার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে তিনি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজারদর নিয়ন্ত্রণে রাখতে মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।
তিনি আরও বলেন, আমরা আইন করে দিয়েছি, কিন্তু গ্রামে-গঞ্জে পৌঁছায়নি। অথচ আমরা এখানে সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে আছি। এই যে দূরত্ব এটা যেন না থাকে। বিনা কারণে মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছে। হয়রানি করাটাই যেন আমাদের ধর্ম। সরকার মানেই মানুষকে হয়রানি করা, এটাকে উল্টে দিতে হবে। সরকার ভিন্ন জিনিস। আপনার অধিকার পৌঁছে দেওয়াই আমাদের কাজ।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘নারী-শিশুদের রক্ষা একটি বিশেষ দায়িত্ব। আর মস্ত বড় দায়িত্ব হলো সংখ্যালঘুদের রক্ষা করা। এ বিষয়ে সারা পৃথিবী আমাদের ওপর নজর রাখে। একটা ছোট্ট ঘটনা সারা দুনিয়ায় বিশাল হয়ে যায়। সরকারের দায়িত্ব সব নাগরিকের সুরক্ষা দেওয়া। আমি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উদ্দেশে বলেছি, দেশের নাগরিক হিসেবে দাবি করেন। দেশের সংবিধান আপনাকে নাগরিক হিসেবে অধিকার দিয়েছে, সেটি সরকারের কাছ থেকে পেতে হবে। কাজেই সরকারের টিমকে এটার নিশ্চয়তা দিতে হবে যে, সব নাগরিককে আমরা সুরক্ষা দেবো। কে কোন ধর্মের, সেটা বিবেচনায় না নিয়ে নাগরিক হিসেবে আমরা রক্ষা করবো। এই সরকার তাদেরও সরকার, সুতরাং আমি সেবা করতে প্রস্তুত। আমরা সামনে যেসব কর্মসূচি নেবো, সেখানে এটি সবচেয়ে ওপরে থাকবে।’
বাজারদর বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সমসাময়িক বিষয় যেমন- বাজারদর, এটি নিয়ে বহু কথা হয়। সেটারও একটা প্রতিযোগিতামূলক ব্যবস্থা করতে পারি। জেলায় বাজারদর, শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রতিযোগিতা হতে পারে। আনন্দ, কাজ এবং তার স্বীকৃতি হিসেবে পুরস্কৃত করা যেতে পারে যেসব জেলা ছয় মাস ভালো করবে।’
ডিসিদের উদ্দ্যেশে তিনি বলেন, ‘নিজের কাজ, সৃজনশীলতা প্রকাশ করার এটাই সুযোগ। গদবাধা কাজ তো আছেই। কিন্তু তারমধ্যেও ওই সৃজনশীলতা আছে। যত আইন আছে সবার মধ্যেই কাজ করা যায়। জেলার মধ্যে সময় যতটুকু হোক, সেটিকে স্মরণীয় করে রাখা। এটা একটা স্মরণীয় অধ্যায় হতে পারে, যদি আমরা করতে চাই।’
ডিসি সম্মেলনকে মহাশক্তিধর সমাবেশ উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা আজ যারা এখানে বসে আছি, তারাই সম্মিলিতভাবে বাংলাদেশ সরকার। এটা মহাশক্তিধর একটি সমাবেশ। আমরা যা করি, চিন্তা করি, পরিকল্পনা করি, সেটিই সরকার, সরকারের চিন্তা ভাবনা, কর্তব্য। এই মহাশক্তি নিয়ে আমরা কী কাজ করবো, কী কাজের জন্য তৈরি, সফল-বিফল, সেগুলো আজকের সমাবেশের আলোচ্য বিষয়। এখানে কাউকে স্তুতি দিয়ে সময় নষ্টের সুযোগ নেই। এই স্তুতিবাক্য পরিহারে আমরা একটা সিদ্ধান্ত নিলাম, যেকোনও সভায়, স্তুতিবাক্য অগ্রহণযোগ্য জিনিস বলে আমরা গ্রহণ করবো, আমরা চালু করবো।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশে যাকিছু করণীয় তার দায়িত্বে আমরা সবাই আছি। যদি সবাই মিলে বাংলাদেশ সরকার হয়ে থাকে তাহলে একটা টিম হতে হবে। এটা টিম ওয়ার্ক, যে যার মতো করলে হয় না। টিম যখন একত্রিত হয়, তখন টিমের কী করনীয়, তা নিয়ে আলোচনা হয়। একজনের ভুলে পুরো টিম সাফল্য থেকে বঞ্চিত হয়। কাজেই আমরা কেউ যেন এমন ভুল না করি, যাতে করে পুরো টিমের সাফল্য ব্যাহত হয়, আমাদের গন্তব্যে পৌঁছানো ব্যাহত হয়।’
তিনি বলেন, ‘সরকার গঠনের পর ছয় মাস চলে গেলো। এটা আমাদের প্রথম পর্ব বলছি, আয়োজনে যে সময় লাগে। অনেক ভুল-ভ্রান্তি হয়েছে আয়োজনের সময়। এখন সেগুলো ঠিকঠাক করে পুরো খেলার জন্য প্রস্তুত। আমাকে প্রধান অতিথি সম্বোধন করায় একটু কষ্ট পেলাম। মনে হলো এই খেলার মাঠ থেকে আমাকে বাইরে রাখা হলো। হওয়া উচিত ছিল, খেলার ক্যাপ্টেন, কিন্তু আমাকে করলেন অতিথি। আমি অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখতে চাই না, আমি ক্যাপ্টেন হিসেবে বক্তব্য রাখতে চাই।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘কাজগুলো আমাদের হাতে মাপা জিনিস। একই জিনিস ঘুরে ফিরে বারবার আসছে। আমার এমন অবস্থায় আছি শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা মস্ত বড় ইস্যু হয়ে গেলো। এটাতে আমরা কে কী পরিমাণ অগ্রসর হলাম, কী করনীয়, এক নম্বর বিবেচ্য বিষয় আইন-শৃঙ্খলা। এটাতে আমরা যেন বিফল না হই। কারণ এটাতে আমাদের অর্জন, সফল হতে পারে, বিফল হতে পারে। সেটাতে কী সমন্বয় হতে পারে তা নিয়েই আলোচনা হোক। পুলিশ প্রশাসন, সিভিল প্রশাসনের কাজ কী, সমন্বয়ের কাজ কী, কিন্তু ‘‘ওর কারণে এটা হয় না’’ এগুলা বলে আমরা পার পাবো না। যেহেতু জেলার দায়িত্ব একজনের ওপর, তার সঙ্গে সমন্বয় করে করতে হয় সবকিছু। কাজেই সমন্বয়ে কী সমস্যা সেগুলো পরিষ্কার করে নিতে হবে, যাতে কাজ করতে গিয়ে আমরা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে না যাই।’
কারো ধমক শুনবেন না : ডিসিদের প্রধান উপদেষ্টা

Leave a comment