
বাংলাদেশ এখন কালাজ্বরমুক্ত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও) গত ৩০ অক্টোবর এই মর্মে একটি সনদপত্র দেয় যে বাংলাদেশ এই রোগটি নির্মূল করতে পেরেছে। একইভাবে গত মে মাসে বাংলাদেশ ফাইলেরিয়ামুক্ত হয়েছে। এই দুটি রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া বাংলাদেশের জন্য অনেক বড় সাফল্য।
বিশেষজ্ঞরা আশা প্রকাশ করেছেন যে একইভাবে প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকলে অদূর ভবিষ্যতে আরো অনেক রোগ থেকেই মুক্তি লাভ করা সম্ভব হবে।
কালাজ্বর পরজীবীঘটিত একটি রোগ। এই রোগটির কারণ লিশম্যানিয়া গণভুক্ত প্রোটোজোয়া পরজীবী। এই পরজীবীটি ছড়ায় বেলে মাছি নামক এক ধরনের মাছির মাধ্যমে।
পরজীবীর বাহক মাছিটি কাউকে কামড়ালে তার দেহে পরজীবীটি প্রবেশ করে। রোগটি সারা দুনিয়ায় থাকলেও মূলত চারটি দেশে এর ব্যাপক বিস্তৃতি ছিল। দেশ চারটি হলো বাংলাদেশ, ভারত, ব্রাজিল ও সুদান। বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ৪৬টি জেলায়ই কালাজ্বরের উপস্থিতি ছিল।
এত বিস্তৃতি সত্ত্বেও বাংলাদেশই প্রথম দেশ, যে দেশটি কালাজ্বরমুক্ত হতে পেরেছে। এই বিশাল কর্মযজ্ঞ সম্পাদনের সঙ্গে যাঁরা যেভাবেই যুক্ত থাকুন, তাঁদের সবার কাছেই আমরা কৃতজ্ঞ।
কালাজ্বরের মতোই ফাইলেরিয়াসিস বাংলাদেশের জন্য একটি প্রধান স্বাস্থ্য সমস্যা ছিল। এটিকে স্থানীয়ভাবে গোদ রোগও বলা হয়। এটিও পরজীবীঘটিত রোগ।
এর জন্য দায়ী পরজীবীটি হলো অতি ক্ষুদ্রাকৃতির রাউন্ড ওয়ার্ম বা গোল কৃমি। মশা এর বাহক। আক্রান্ত ব্যক্তিকে কামড়ানোর পর কোনো সুস্থ ব্যক্তিকে কামড়ালে তার দেহে এই পরজীবী ছড়িয়ে যায়। আক্রান্ত ব্যক্তির হাত, পা বা শরীরের অন্য কোনো অংশ অস্বাভাবিকভাবে ফুলে যায়। বাংলাদেশের ১৯টি জেলায় এই রোগের ব্যাপক প্রাদুর্ভাব ছিল। এই লিমফ্যাটিক ফাইলেরিয়াসিস নির্মূলে ২০০১ সালে জাতীয় ভিত্তিতে কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। এতে সহযোগিতা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। দীর্ঘ প্রচেষ্টার ফলস্বরূপ বাংলাদেশ থেকে ফাইলেরিয়া রোগটি নির্মূল করা সম্ভব হয়েছে।
এর আগে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সমন্বিত প্রচেষ্টায় পৃথিবী থেকে গুটিবসন্তসহ আরো অনেক রোগ নির্মূল করা গেছে। বাংলাদেশসহ অনেক দেশ থেকে পোলিও বিদায় নিয়েছে। অথচ বাংলাদেশে একসময় কলেরা ও বসন্তে গ্রামের পর গ্রাম উজাড় হয়ে গেছে। কলেরা প্রায় নির্মূল হলেও সম্প্রতি পুনরায় প্রাদুর্ভাব দেখা যাচ্ছে। ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, টাইফয়েড, ডায়রিয়াসহ পানি ও কীটপতঙ্গবাহী অনেক রোগ এখনো জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সঠিক পরিকল্পনা, সমন্বিত প্রচেষ্টা এবং আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করলে আরো অনেক রোগ থেকেই মুক্তি পাওয়া সম্ভব। আমরা আশা করি, সরকার এই প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে।