সিরাজুল ইসলাম, শ্যামনগর : গত ১৩ জুন রাত সোয়া ১১টায় সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার নলতা ইউনিয়নের ইন্দ্রনগর মোড়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠণের নেতা কর্মীদের মিছিল ও বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম বিরোধী ষড়যন্ত্র গণঅভ্যুত্থানে প্রতিষ্ঠিত বৈধ সরকারকে উৎখাত, জনসাধারণের শান্তি বিনষ্ট ও অর্ন্তঘাতমুলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। শুক্রবার সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার ইন্দ্রনগর গ্রামের শেখ আকবর আলীর ছেলে মহিবুল্লাহ বাদি হয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইন ও বিষ্ফোরক দ্রব্য আইনে থানায় এ মামলা দায়ের করেন। মামলায় নলতা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন পাড়, কালিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সাঈদ মেহেদী, নলতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোনায়েম পাড়, নলতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ারুল হকসহ ৪৩ জন ও অজ্ঞাতনামা ৭০ জনকে আসামী শ্রেণীভুক্ত করা হয়েছে। মামলার এজাহারভুক্ত দুই আসামীকে শুক্রবার দুপুরে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, কালিগঞ্জ উপজেলার ইন্দ্রনগর গ্রামের এলাহীবক্সের ছেলে মুজিবর রহমান পাড় ও একই উপজেলার দুদলী গ্রামের শেখ শহীদুল ইসলামের ছেলে আনারুল ইসলাম।
মামলার বিবরণে জানা যায়, গত ১৩জুন রাত সোয়া ১১টার দিকে কালিগঞ্জ উপজেলার ইন্দ্রনগর মোড়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠণের নেতা কর্মীরা আওয়ামী লীগ নেতা সাঈদ মেহেদীর নির্দেশে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে একটি মিছিল করে। মিছিল থেকে বর্তমান সরকার বিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেয়। এতে পলাতক শেখ হাসিনার উস্কানি ছিল। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে তিনটি ককটেল, ২৭টি লাঠি, চারটি লোহার রড, দুটি জিআই পাইপ, ১০টি স্যা-েল ও একটি সরকার বিরোধী ব্যানার উদ্ধার করে।
কালিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান জানান, মুহবুল্লাহ এর দায়েরকৃত মামলায় দুইজনক গ্রেপ্তার করে শুক্রবার বিকেল আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে সাতক্ষীরা আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বিকেলে ইন্দ্রনগর গ্রামের শেখ আকবর আলীর বাড়িতে ভাংচুর, বোমা হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় তার ছেলে মামুন বিল্লাহ বাদি হয়ে গত বছরের ৮ অক্টোবর সাতক্ষীরার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা(৪৮/২৪ কালিঃ) দায়ের করেন। মামলায় আবুল হোসেন পাড়সহ তার পাঁচ ভাই, যুদ্ধপরাধ মামলার সাক্ষী মুজিবর রহমান, আনিছুর রহমান, যুদ্ধাপরাধ মামলার বাদি দেবহাটার জগন্নাথপুর গ্রামের গোলাম মেস্তফা, মামুন বিল্লাহ এর বোনের সঙ্গে জমি নিয়ে বিরোধ থাকা প্রতিপক্ষ কলারোয়া উপজেলার ব্রজবক্স গ্রামের আব্দুল আজিজের ছেলে বেল্লাল হোসেনসহ চার ভাই ও এক ভাইপোসহ ৩১জনকে আসামী করা হয়। মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য কালিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়। পুলিশ ৩৮ জনকে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা উল্লেখ করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে। কিন্তু আদালতে তদন্তকারি কর্মকর্তার প্রতিবেদনের সাথে মামলায় বর্ণিত ঘটনার গড়মিল ও পুড়ে যাওয়া গাড়িসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় কাগজপত্র বাদি উপস্থাপন করতে না পারায় গত ৩ জুন বিচারক মামলা খারিজ করে দেন।
এদিকে গত ১৩জুন রাতে আওয়ামী লীগের মিছিল, সরকার পতনের ষড়যন্ত্র ও নাশকতার পরিকল্পনায় মহিবুল্লাহ এর দায়েরকৃত মামলার ৪২ জন আসামীর মধ্যে ভাই মামুন বিল্লার দায়েরকৃত দ্রুত বিচার আইনে দায়েরকৃত ৩১ জনের মধ্যে ১৫ জনকে আসামী ও চারজন সাক্ষীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। শেখ আকবর আলীর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ মামলার সাক্ষী মুজিবর রহমান, সাক্ষী আনছার আলী বিশ্বাসের ছেলে আহাদ বিশ্বাসকে সাক্ষী করা হয়েছে। মহিবুল্লাহ ৪২ জন আসামীকে চেনেন বলে উল্লেখ করেছেন।
তবে গ্রেপ্তারকৃত মুজিবর রহমান বলেন, তিনি শেখ আকবর আলীর যুদ্ধাপরাধ মামলার সাক্ষী হওয়ায় এবং আকবর আলীর বাড়ি পোড়ানো মামলা খারিজ হওয়ায় একটি কাল্পনিক ঘটনা উল্লেখ করে মহিবুল্লাহকে দিয়ে মিথ্যা মামলা করানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে বিশেষ ক্ষমতা আইনে দায়েরকৃত মামলার বাদি মহিবুল্লার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি গাড়ি থেকে নেমে কথা বলবেন বলে জানালেও পরে আর কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে তার ভাই মামুন বিল্লাহ বলেন, তার বড় ভাই যে মামলা করেছে তা যথাযথ।
কালিগঞ্জে আ.লীগের মিছিল, ৪২ জনের নামে মামলা

Leave a comment