সোহেল আহমেদ, কালিগঞ্জ (ঝিনাইদহ) :ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোফাজ্জল হকের বিরুদ্ধে মামলার আসামি ধরে তার পরিবারের নিকট থেকে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে। পুলিশের ওই কর্মকর্তার ঘুষ গ্রহণের ঘটনার ভিডিও অডিও রেকর্ডসহ যাবতীয় প্রমাণাদী ইতিমধ্যে এই প্রতিবেদকের হাতে এসে পৌঁছেছে। চলতি বছরের জুন মাসের ২৫ তারিখে শিশু নির্যাতন আইনের ৯(১)/৩০ ধারার একটি মামলার(কালীগঞ্জ থানার মামলা নং- ১৬) দুই নম্বর আসামি হলেন উপজেলার বড় ধোপাধি গ্রামের মৃত ফজলুল হকের ছেলে ছবদুল ইসলাম। ২৭ ডিসেম্বর আসামি ছবদুলকে তার নিজ এলাকা থেকে ধরে আনেন এবং পরিবারের সদস্যদেরকে কালীগঞ্জ থানায় এসে দেখা করতে বলেন ওসি তদন্ত মোফাজ্জল হক। কিছুক্ষণ পর আসামি ছবদুলের স্ত্রী মধুমালা, আসামির ভাই শরিফুল ইসলাম এবং তার স্ত্রী থানায় হাজির হলে ওসি তদন্ত তাদেরকে নানা রকম ভয়-ভীতি প্রদর্শন করেন এবং মামলা হালকা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০ হাজার টাকা দাবি করেন। তখন আসামি ছবদুলের স্ত্রী মধুমালা তাৎক্ষণিকভাবে ধার করে ২ হাজার টাকা নগদ তার দেবর শরিফুল ইসলামের হাত দিয়ে ওসি মোফাজ্জল হককে দেন। বাকি ১৮ হাজার টাকা সকালে দেওয়ার প্রতিশ্র“তি দিয়ে তারা থানা থেকে বের হন। এ ব্যাপারে আসামি ছবদুলের স্ত্রী মধুমালা এই প্রতিবেদককে জানান, আমার স্বামীকে তদন্ত ওসি স্যার থানায় ধরে নিয়ে যায়। প্রথমে ছেড়ে দেওয়ার এবং পরবর্তীতে মামলা হালকা করে দেওয়ার প্রতিশ্র“তি দিয়ে ২০ হাজার টাকা দাবি করেন। আমার কাছে টাকা না থাকায় আমি ধার করে তখনই আমার দেবরকে দিয়ে ১ হাজার টাকার ১ একটি নোট এবং ৫০০ টাকার দুইটি নোট মোট ২০০০ টাকা দেই। তার কক্ষে বসে থাকা অবস্থায় আমার দেবর তার কাছে টাকাটি দেই। এরপর তিনি বাকি ১৮ হাজার টাকা আসামি চালান হওয়ার আগে দেওয়ার জন্য বলেন। আমি বাড়ি ফিরে টাকা জোগাড় করতে না পারায় তার দাবিকৃত বাকি টাকা দিতে পারিনি। বেশ কিছুদিন আগে এই ওসি স্যার আমার এলাকার রাসেল নামে তার এক সোর্সের মাধ্যমে ৩৫ হাজার টাকা আমার স্বামীর কাছ থেকে নেন। এখন সাংবাদিকদের কাছে ওসি তদন্ত স্যারের টাকা চাওয়া এবং নেওয়ার বিষয়টি জানানোর কারণে তিনি আমার ও আমার দেবরকে নানাভাবে ভয়-ভীতি দেখাচ্ছেন এবং টাকা লেনদেনের বিষয়টি অস্বীকার করার জন্য চাপ দিচ্ছেন। এখন আমরা খুব ভয়ে আছি, না জানি কখন কোন বিপদ আসে। ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে এবং মামলা হালকা করে দেওয়ার কথা বলে ঘুষ নেওয়ার ব্যাপারে কালীগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত ওসি) মোফাজ্জল হকের নিকট জানতে চাইলে তিনি তা অস্বীকার করেন। কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ শহিদুল ইসলাম হাওলাদারের সাথে ওসি তদন্তের ঘুষ বাণিজ্যের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ব্যক্তির অপকর্মের দায় পুলিশ বিভাগ নেবে না। তবে তার বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগের সত্যতা মিললে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাসও দেন তিনি ।এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনজুর মোরশেদ বিপিএম বলেন, ঘটনাটি আপনার নিকট থেকে জানতে পারলাম। ভুক্তভোগীর লিখিত অভিযোগ পেলে অবশ্যই তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ৫ আগস্ট পরবর্তী পরিস্থিতিতে পুলিশ আরো জনবান্ধব হয়ে উঠবে বলে মানুষ মনে করলেও কালীগঞ্জ থানা পুলিশের কিছু অসৎ কর্মকর্তার বেপরোয়া ঘুষ বাণিজ্য কোনভাবেই থামানো যাচ্ছে না। গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশিত হলেও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নিচ্ছেন না দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা। যে কারণে মানুষ পুলিশের উপর আস্থা হারাচ্ছে।