সোহেল আহমেদ, কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) : ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের হাতে শতভাগ সরকারী পাঠ্যবই না পৌঁছালেও স্কুলে স্কুলে পৌঁছে গেছে পাবলিকেশন্স কোম্পানীর নোট গাইড বইয়ের তালিকা। শিক্ষার্থীদের হাতে অবৈধ নোট গাইডের এই তালিকা তুলে দেওয়ার কাজটি করছে স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা । শিক্ষক সমিতি বই কোম্পানীর সাথে বোঝাপড়া করে বিভিন্ন শিক্ষক সমিতির প্রকাশনা কোম্পানির নিকট থেকে মোটা অংকের নজরানা গ্রহর করে লেকচার পাবলিকেশন্স লিমিটেড কোম্পানির নোট গাইড এ বছর বিদ্যালয় সমূহে চালানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বর্তমান সরকার ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছে দিচ্ছে। প্রতিটি শ্রেণীর বাংলা ব্যাকরণ এবং ইংরেজী গ্রামার বইও বিনামূল্যে প্রদান করা হয়েছে। অথচ লেকচার কোম্পানীর বাংলা ব্যাকরণ ও ইংরেজী ব্যাকরণ এবং সহায়ক বইয়ের নামে নিষিদ্ধ নোট গাইড শিক্ষার্থীদের কেনার জন্য কয়েকটি সমিতি ভুক্ত বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেকচার পাবলিকেশন্স কোম্পানীর প্রতিনিধি এবং শিক্ষকদের সহায়তায় শ্রেণিকক্ষে গিয়ে শিক্ষার্থীদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে বইয়ের তালিকা । এখনো পর্যন্ত সরকারি বিনামূল্যের বই পরিপূর্ণরূপে শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছায়নি। অথচ চড়া মূল্যের অবৈধ নোট গাইড শিক্ষার্থীদের কেনানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে সমিতিভুক্ত শিক্ষকরা। এসব দেখভাল করার দায়িত্বে থাকা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একাডেমিক সুপারভাইজার আব্দুল আলিম যেন কিছু দেখেও দেখেন না। সমিতির নেতাদের সাথে তার রয়েছে দারুণ সখ্যতা সমিতির এসব দৌরত্বের ব্যাপারে উপজেলা আইন শৃঙ্খলা মিটিংয়ে বারবার বলা হলেও তা আমলে নেওয়া হয়নি। এমনকি এ নিয়ে গণমাধ্যমেও একাধিকবার সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। তবুও দায়িত্বশীলদের নীরব ভূমিকা প্রশ্ন তুলেছে সচেতন মহলে।
সাজিদুর রহমান নামের একজন অভিভাবক জানান, আমার সন্তান দশম শ্রেণীর একজন শিক্ষার্থী । তার স্কুল থেকে হলুদ রঙের একটি বইয়ের তালিকা দিয়েছে। ওই তালিকা অনুযায়ী বইগুলো কিনতে প্রায় ছয় হাজার টাকা খরচ হবে আমার । স্কুলে সরকারি বই না পড়িয়ে কেন নোট গাইড পড়ানো হবে? স্যারেরা তো ঠিকমতো ক্লাসই করায় না। ব্যবসা খুলে বসেছে। এসব কেউ দেখেও না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক জানান, এবার নতুন সিলেবাস হওয়ায় নাকি প্রায় অর্ধ কোটি টাকা রয়েলিটির বিনিময়ে সমিতি ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে লেকচারের গাইড ধরিয়েছে। এমনকি যাচাই-বাছাই কমিটিতে থাকা শিক্ষকরাও ভুড়ি মোটা করেছে । শিক্ষকদের অনেকেই নোট গাইড চালানোর বিপক্ষে। কোম্পানী থেকে নেওয়া টাকা অতি সামান্য যোগ হয় সমিতিতে,বাকি সব ভাগ করে খেয়ে ফেলে। কতিপয় অসৎ শিক্ষকদের সাথে নিয়ে মোটা টাকার লোভে এসব কাজ করে বেড়াচ্ছেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষরাও নীরব।
গাইড ধরানোর যাচাই-বাছাই কমিটিতে থাকা শিক্ষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়,আমরা কমিটিতে ছিলাম সত্য। কোম্পানীর বই যাচাই বাছাই করে সমিতিকে জানিয়েছি। তারা লেকচার কোম্পানির বই ধরিয়েছে। তবে কমিটির সদস্যরা কোম্পানি কর্তৃক টাকা পাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন।
কালীগঞ্জ মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির একাংশের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) কামরুজ্জামান কামাল জানান,এখনো বই চূড়ান্ত হয়নি। কোম্পানির লোক স্কুলে বইয়ের তালিকা দিতে পারে। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে সমিতির মাধ্যমে নিষিদ্ধ নোট গাইড চালানোর বিষয়টি তিনি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা( অ.দা) দীনেশ চন্দ্র পালের নিকট অবৈধ নোট গাইড বইয়ের তালিকা স্কুলে স্কুলে দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমার জানা নেয়।সরকার বই দিচ্ছে যেখানে সেখানে নিষিদ্ধ নোট গাইড চালানোর কোনো নিয়ম নেই। আমি রবিবার বিষয়টি দেখছি। বর্তমানে অধিকাংশ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি এবং কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেদারুল ইসলাম বলেন, স্কুলে নোট গাইড চালানোর নিয়ম নেই।কোনো স্কুলে নোট গাইড এর তালিকা সরবরাহ করা হচ্ছে কিনা সেটিও আমার জানার বাইরে। এ ঘটনায় অবশ্যই তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কালীগঞ্জে শিক্ষার্থীদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে নোট গাইডের তালিকা

Leave a comment