কেশবপুর প্রতিনিধি : যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার গ্রামগুলোতে ঢেঁকির শব্দে এখন আর ঘুম ভাঙ্গে না কারও। অগ্রানেরি সাত সকালে ভাঙে সবার ঘুম, কাচতে হাতে কৃষাণ ছুটে ফসল কাটার ধুম, আহরে খুশি খুশি মন, নবান্নেতে রইলো বন্ধু তার নিমন্ত্রণ। কবির এই কবিতায় মনে পড়ে গেল আজ নবান্ন। পঞ্জিকা মতে ১ অগ্রহায়ণ। গ্রামাঞ্চলের প্রতিটি পরিবারে ঢেঁকিতে চাল ভেঙে আটা করে চলতো নবান্নের উৎসব। আগের দিনে গ্রামের মানুষ ঢেঁকিতে ধান ভানতো এবং চাল থেকে আটা করে পুলি পিঠা ভাবা পিঠা খাওয়ার ধুম পড়ে যেত। আর আত্মীয়-স্বজন এলে তো আর কথায় নেই। গ্রামে গেলে শোনা যেত সেই ঢেঁকিতে ধান ভাঙার শব্দ। আজ সেই গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ঢেঁকি কালের গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমান হাতে গোনা কয়েকটি পরিবারে ঢেঁকি দেখা যায়। এক সময় যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার গ্রামাঞ্চলের প্রতিটি বাড়িতে ঢেঁকিতে ধান ভাঙার প্রচলন ছিল। সে সময় পরিবারের গৃহিনীরা ধান চাল ভাঙ্গার কাজ ঢেঁকিতেই করতো। মুসলমানদের ঈদ পরব আর হিন্দুদের পূজা পার্বণ নবান্ন উৎসব পৌষের পুলি পিঠা ভাপা ও নারিকেল পিঠাসহ হরেক রকমের পিঠা খাওয়ার ধুম পগে যেত। গ্রামের বেশির ভাগ বাড়িতে নারীদের ঢেঁকিতে ধান চাল ভাঙ্গার কলরবে চারিদিকে যেন হৈচৈ পড়ে যেত। আগের দিনে গরীব পরিবারের মানুষ ধান চাল আটা ভাঙার কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতো আবার কেউ-কেউ ঢেঁকি ভাঙানো চাল বাজারে বিক্রিয় করতো। এই ঢেঁকি ভাঙানো চাল মানুষের খুবই পছন্দনীয় ছিলো কদরও ছিলো বেশ। বর্তমানে ধান ভাঙার নতুন যান্ত্রিক মেশিন আবির্ভাব হওয়ায় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ঢেঁকি আজ বিলুপ্তির পথে। গ্রামের কিছু প্রবীণ লোকের সাথে আলাপ চারিতায় জানাযায় এই অঞ্চলে এক সময় ঢেঁকিতে ধান ভাঙার ব্যাপক প্রচলন ছিল। বিভিন্ন উৎসবের সময় প্রতিটি বাড়িতে নুতন বউ জামাই মেয়ে আত্মীয় স্বজনদের উপস্থিতিতে বাড়িতে পূর্ণ হতো আনন্দ মূখর পরিবেশে। শেষ রাতে বাড়িতে নারীদের ঢেঁকিতে গুঁড়া তৈরী, ধান, চাল ভাঙার শব্দে ঘুম ভেঙে যেত। আজ আর সেই শব্দ শোনা যায় না। বিশেষ করে এই এলাকায় শীতর এই মৌসুমে খেজুরের রস দিয়ে পিঠা পায়েস তৈরির উৎসব শুরু হয়। চিতই পিঠা ঢেঁকি ভাঙানো গুঁড়া ছাড়া জমেই না। সেই ঢেঁকিতে ভাঙানো গুঁড়া দিয়ে বানানো পিঠা যে সুস্বাদু হতো বর্তমানে যান্ত্রিক মেশিনে ভাঙানো চাল গুঁড়ার সে স্বাদ পাওয়া যায় না।