তেরখাদা, খুলনা : তেরখাদায় উপজেলা প্রতিটি কৃষক পরিবারে রয়েছে কমপক্ষে এক দুটি গরু, পুকুরও আছে অনেকের। শুধু কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ ঐতিহ্য ধানের গোলা। ‘গোলা ভরা ধান, গোয়াল ভরা গরু আর পুকুর ভরা মাছ’ গ্রাম নিয়ে প্রচলিত প্রবাদটি আজও মানুষের মুখে মুখে শোনা যায়। কিন্তু গ্রামের পর গ্রাম ঘুরেও এখন দেখা পাওয়া যায় না বাংলার ঐতিহ্য ধান, গমসহ ফসল সংরক্ষণের গোলা। মাঠের পর মাঠ ধানক্ষেত থাকলেও খুলনা জেলার তেরখাদা উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের অধিকাংশ কৃষকের বাড়িতে এখন নেই ধান, গম মজুত করে রাখার বাঁশ-বেত ও কাদা দিয়ে তৈরি গোলাঘর। ছোট বড় মানভেদে এসব গোলায় ৫০থেকে ১০০ মণ ফসল সংরক্ষণ করা যায়। কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত ফসল প্রথমে রোদে ভালোভাবে শুকিয়ে গোলায় সংরক্ষণ করতেন। এ উপজেলার বেশির ভাগ মানুষের প্রধান পেশা কৃষি। এসময় এখানে সমাজের নেতৃত্ব নির্ভর করত কার কয়টি ধানের গোলা আছে এই হিসাব কষে। কন্যা পাত্রস্থ করতেও বর পক্ষের বাড়ি থেকে ধানের গোলার খবর নেওয়া হতো। যা এখন রূপকথা। গ্রামাঞ্চলে বাড়িতে বাড়িতে বাঁশ দিয়ে গোল আকৃতির তৈরি করা ধানের গোলা বসানো হতো উঁচুতে। গোলার মাথায় থাকত টিনের তৈরি পিরামিড আকৃতির টাওয়ারের মতো, যা দেখা যেত অনেক দূর থেকে। গোলা নির্মাণ করার জন্য বিভিন্ন এলাকায় আগে দক্ষ শ্রমিক ছিল। এখন আর গোলা নির্মাণ শ্রমিকদের দেখা মেলে না। পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় নিয়োজিত হয়ে জীবন জীবিকা নির্বাহ করছেন তারা। গ্রামে-গঞ্জে দক্ষ কারিগরদের হাতে তৈরি বাঁশের ধানের গোলা একসময় গ্রামীণ জনপদে ব্যাপক চাহিদা থাকলেও কালের বিবর্তনে তা বিলুপ্তির পথে। মানুষের জীবন-মানের পরিবর্তনের ফলে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে তাদের পারিবারিক ব্যবহার্য উপকরণে। ফলে ঐতিহ্যবাহী বাঁশের ধানের গোলার জায়গা দখল করে নিয়েছে পাটের বস্তা আর টিন বা প্লাস্টিকের তৈরি ড্রাম। এগুলো তৈরি ঝামেলামুক্ত ও সহজে বাজারে পাওয়া যায় বলে মানুষ বাঁশের গোলার পরিবর্তে এসব আধুনিক উপকরণ ব্যবহারে দিন দিন অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। ফলে হারিয়ে যাচ্ছে বাঁশের গোলার কদর। উপজেলার প্রবীণরা বলছেন, আগের দিনে প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই গোলা থাকত। এখন আর নেই। নাতি-নাতনিদের কাছে বললে তারা বিশ্বাসও করতে চায় না। বারাসাত ইউনিয়নের কাটেংগা বাজার এলাকার কৃষক হান্নান বলেন, এক সময় মাঠ ভরা ধান, গোয়াল ভরা গরু, আর গোলা ভরা ধান গ্রামের কৃষকের পরিচয় বহন করত। সভ্যতার বিবর্তন আর আধুনিক কৃষি সংরক্ষণ পদ্ধতি আবিষ্কারের ফলে হারাতে বসেছে কৃষকের ঐতিহ্যবাহী ধানের গোলা। আমরা পূর্বপুরুষদের ব্যবহৃত সেই ধানের গোলা ঘরটি এখন স্মৃতি চিহ্ন হিসাবে রেখে দিয়েছি।