দেশে কিডনি রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এক বছরে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া কিডনি রোগীর সংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। ২০২১ সালে সারাদেশের সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হওয়া কিডনি রোগীর সংখ্যা ছিল ১৫ হাজার ৪০৭ জন, ২০২২ সালে এই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩৩ হাজার ৩০৬ জন। মৃত্যুর সংখ্যাও বেড়েছে অনুরূপভাবে। ২০২১ সালে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর মধ্যে মারা গিয়েছিল ৫৪১ জন। আর ২০২২ সালে এই সংখ্যা দাঁড়ায় এক হাজার ২৭ জনে। হাসপাতালে ভর্তির সুযোগ খুব কম থাকা, ব্যয়বহুল চিকিৎসা নেওয়ার ক্ষমতা না থাকাসহ বিভিন্ন কারণে হাসপাতালের বাইরেও প্রতিনিয়ত বহু রোগীর মৃত্যু হচ্ছে। তা ছাড়া দেশে এখন পর্যন্ত কিডনি রোগ চিকিৎসার প্রধানতম উপায় ডায়ালিসিসের অপ্রতুলতা ও অতিরিক্ত ব্যয় অধিক সংখ্যায় রোগী মৃত্যুর অন্যতম কারণ।
২০০৮ সালে কিডনি ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে পরিচালিত জরিপের ভিত্তিতে বলা হয়েছিল, দেশে কিডনি রোগীর সংখ্যা দুই কোটি। এতদিনে এই সংখ্যা নিশ্চয়ই অনেক বেড়েছে। অথচ সারাদেশে নেফ্রোলজিস্ট আছেন মাত্র ২০০ জন। কিডনি রোগীদের জন্য দেশে একটিমাত্র বিশেষায়িত হাসপাতাল রয়েছে। সেখানে শয্যা আছে ১৫০টি। হাসপাতালটির নেফ্রোলজি বহির্বিভাগে প্রতিদিন রোগী আসে গড়ে প্রায় সাড়ে তিন শ, ভর্তির সুযোগ থাকে ১০ থেকে ১৫ জনের। এই অবস্থায় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে এসেও প্রতিদিন বহু রোগীকে ফিরে যেতে হয়।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, বাংলাদেশে ৭৬ শতাংশ কিডনি রোগীই মারা যায় কিডনি প্রতিস্থাপন বা সময়মতো ডায়ালিসিস করাতে না পারার কারণে। সারা দুনিয়ায় প্রধানত দুই উপায়ে কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়। একটি হচ্ছে আগে থেকে দান করে যাওয়া ‘ক্লিনিক্যালি ডেড’ ব্যক্তির কিডনি এবং অন্যটি হচ্ছে স্বেচ্ছায় দান করা জীবিত ব্যক্তির কিডনি। বাংলাদেশে প্রথমটির প্রচলন নেই বললেই চলে। আর দ্বিতীয়টির ক্ষেত্রে ১৯৯৯ সালের কিডনি প্রতিস্থাপন আইন অনুযায়ী শুধু নিকটাত্মীয়রাই কিডনি দিতে পারে। সেখানেও রয়েছে নানা জটিলতা। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাংলাদেশে কিডনি প্রতিস্থাপনকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য দ্রুত যথাযথ আইনগত ও পেশাগত কাঠামো গড়ে তোলা প্রয়োজন। পাশাপাশি ডায়ালিসিসের পর্যাপ্ত সুযোগসহ কিডনি চিকিৎসার সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে।