জি,এম,ফিরোজ, ডুমুরিয়া : খড় সংকট, কুড়ো ভূষির মূল্য বৃদ্ধি ও জলাবদ্ধতায় ঘাসের অমিল হওয়ায় খুলনার ডুমুরিয়ায় গো-খাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে খাদ্য সংকটে গাভী বিক্রি করে দিয়েছে খামারিরা। গবাদিপশু বাঁচিয়ে রাখতে প্রান্তিক খামারিরা কচুরিপানা সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। ডুমুরিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এ বছর ভয়াবহ বন্যায় বিলে ঘাস না থাকায় গো-খাদ্যের চরম সংকট দেখা দেয়। কিছু কিছু এলাকায় খড় পাওয়া গেলেও প্রান্তিক গবাদিপশু পালনকারীদের হাতের নাগালে নেই দাম। বাজারে বিক্রি করা গো-খাদ্যের দামও আকাশচুম্বী। যার ফলে প্রান্তিক গবাদিপশু পালনকারিরা পড়েছেন চরম বিপাকে। গবাদিপশু বাঁচিয়ে রাখতে তারা বাড়ির পাশের খাল, বিল ডোবায় জন্মানো কচুরিপানা তুলছেন। গো-খাদ্য হিসেবে কচুরিপানাই এখন তাদের শেষ ভরসা। কেউ কেউ নিজেদের বাড়ির কাছাকাছি কচুরিপানা না পেয়ে রিকশা-ভ্যান ভাড়া করে কেউবা পায়ে হেঁটে দূর-দূরন্ত থেকে সংগ্রহ করছেন কচুরিপানা।
উপজেলার দেড়লি গ্রামের তপন কুমার ঘোষ বলেন; এবার বন্যায় ফসল নষ্ট হওয়ায় মানুষের খাদ্যেরই অভাব দেখা দিয়েছে। খালে বিলে এই কচুরিপানা না থাকলে গরুগুলো বাঁচিয়ে রাখাই কষ্ট হয়ে যেত। বিচেলী ব্যবসায়ী বেজেরডাঙ্গা এলাকার ইউনুস গাজী ও ফুলতলা এলাকার বাপ্পী জানায়; চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহী থেকে ট্রাকে করে আমাদের এলাকায় আসে সেখান থেকে কিনে এনে গ্রামাঞ্চলে বিক্রি করি। প্রতি আঁটি খুচরা ৭-৮ টাকা মূল্যে বিক্রি করি। তবে কাউন হিসেবে কেউ নিলে একটু কমে বিক্রি হয়। এখন মানুষের গরু নেই বললেই চলে। খাবারের অভাবে মালিকেরা ৭৫ ভাগ গরু বিক্রি করে দিয়েছে। সাবেক ইউপি মেম্বার আরতি মহাজন বলেন; আমার একটা গাভীর পিছনে দৈনিক ৫’শ টাকা খরচ হয়। ৩৫ কেজি ওজনের একবস্তা ভূষির দাম ১৫”শ টাকা। কিভাবে গাভী পালবো এলাকার ৭৫ ভাগ গাভী খাদ্য সংকটে বিক্রি করে দিয়েছে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আশরাফুল কবীর বলেন, বর্তমান সময়ে গো-খাদ্য সংকটের প্রধান কারণ হচ্ছে সামপ্রতিক ঘটে যাওয়া ভয়াবহ বন্যা। বন্যায় এ উপজেলার ঘাস জন্মাতে পারেনি। আউশ ধান না হওয়ায় গাভী পালনকারীরা খড়(কুটো) সংগ্রহ করতে পারেননি। বরাদ্ধ না থাকায় সরকারীভাবে কোন খামারিকে গোখাদ্যও দেয়া সম্ভব হয়নি। বন্যার কারণে ধানের পাশাপাশি গো-খাদ্য ঘাস পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়েছে। এতে গবাদিপশুর খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। তবে উপজেলার বিভিন্ন খামারিরা খাদ্যাভাবে গাভী বিক্রি করে দিয়েছে।
খুলনার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত কৃষি উপপরিচালক মোঃ মোছাদ্দেক হোসেন বলেন, অতিবৃষ্টির কারণে এবার বিল ও ঘেরের পাড়ে ঘাস জন্মাতে পারেনি। আবার যা জন্মেছিল তা পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। অন্যদিকে ভূষি খড় ও বিছেলির দাম বেড়ে যাওয়ায় চরম বিপাকে পড়েেেছ গো- খামারিরা। গো- খাদ্যের তীব্র সংকটের কারণে অনেকেই গাভী বিক্রি করে দিয়েছে। বন্যা পরবর্তী সময়ে চাষকৃত ঘাসের জমি আক্রান্ত হওয়ার ফলে গো-খাদ্য হিসেবে কচুরিপানাও ব্যবহৃত হচ্ছে। এতে কিছুটা হলেও গো-খাদ্যের চাহিদা মিটছে।
কুড়ো ভূষির মূল্য বৃদ্ধিতে ডুমুরিয়ায় গো-খাদ্যের তীব্র সংকট
Leave a comment