ডেস্ক নিউজ : নয়াদিল্লি রেলওয়ে স্টেশনে মহা কুম্ভের জন্য নির্দিষ্ট দুটি ট্রেন আসতে বিলম্ব হয়। এতে যাত্রীদের ভিড় বেড়ে যায়। একপর্যায়ে হুড়োহুড়ি লেগে যায়। এতে ভিড়ের চাপে ও পদদলিত হয়ে কমপক্ষে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ১১ জন নারী এবং ৪টি শিশু রয়েছে। গুরুতর আহতদের জন্য আর্থিক সহায়তা এবং নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল শনিবার রাত ৮টার দিকে নয়াদিল্লি রেলওয়ে স্টেশনের ১৪ ও ১৫ নম্বর প্ল্যাটফর্মে। আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি শেষ হচ্ছে মহা কুম্ভ মেলা। এ জন্য মেলায় এখন ভক্তদের চাপ বেশি। মেলায় অংশ নেওয়ার জন্য ভক্তরা উত্তর প্রদেশের প্রয়াগরাজ যেতে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু ট্রেন বিলম্ব হওয়ায় স্টেশনে প্রচণ্ড ভিড় জমে যায়।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রয়াগরাজ এক্সপ্রেস ট্রেনটি ১৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মে থাকা অবস্থায় সেখানে প্রচুর যাত্রী ছিলেন। এ ছাড়া, স্বতন্ত্রতা সেনানী এক্সপ্রেস এবং ভুবনেশ্বর রাজধানী এক্সপ্রেস (যা প্রয়াগরাজ হয়ে যায়) বিলম্বিত হওয়ায় এই ট্রেনগুলোর যাত্রীরাও ১২,১৩ এবং ১৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মে উপস্থিত ছিলেন।
যাত্রীরা ট্রেনে ওঠার জন্য হুড়োহুড়ি শুরু করেন। ভিড়ের চাপে কেউ কেউ অজ্ঞান হয়ে পড়েন, অনেকে আহত হন। ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, প্ল্যাটফর্মে প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্যে কয়েকজন অজ্ঞান অবস্থায় মাটিতে পড়ে আছেন, আর অন্য যাত্রীরা তাঁদের সাহায্য করার চেষ্টা করছেন। এ ছাড়া, এস্কেলেটরের কাছে ভিড়ের কারণে ধাক্কাধাক্কির ঘটনাও ঘটে।
দিল্লির এলএনজেপি হাসপাতালের প্রধান ক্যাজুয়ালটি মেডিকেল অফিসার মৃত্যুর সংখ্যা নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, এ ঘটনায় ১০ জন নারী, ৩ শিশু এবং ২ পুরুষের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া, লেডি হার্ডিং হাসপাতালে আরও ৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। মোট ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে কর্তৃপক্ষ।
আহতদের মধ্যে যাদের অবস্থা গুরুতর তাদের জন্য আড়াই লাখ রুপি এবং সাধারণ আঘাতপ্রাপ্তদের জন্য ১ লাখ রুপি আর্থিক সহায়তা ঘোষণা করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
নিহতদের মধ্যে ৯ জন বিহার, ৮ জন দিল্লি এবং ১ জন হরিয়ানার বাসিন্দা।
রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব এক্স (টুইটার) পোস্টে জানান, নয়াদিল্লি রেলওয়ে স্টেশনের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। দিল্লি পুলিশ এবং রেলওয়ে পুলিশ বাহিনী (আরপিএফ) ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। আহতদের হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে এবং হঠাৎ ভিড় সামলাতে বিশেষ ট্রেন চালু করা হয়েছে।
ভিড়ের কারণে পদদলিত হয়ে নিহতের গুজব এড়িয়ে চলার জন্য জনগণকে অনুরোধ করা হয়েছে।
দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর ভিকে সাক্সেনা এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং এই ঘটনায় শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং এক্স পোস্ট করে বলেন, ‘নয়াদিল্লি রেলওয়ে স্টেশনে পদদলিত হয়ে প্রাণহানির খবর শুনে আমি অত্যন্ত ব্যথিত। এই দুঃখের মুহূর্তে শোকসন্তপ্ত পরিবারগুলোর প্রতি আমার সমবেদনা। আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।’
রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এ ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক্স পোস্টে বলেন, ‘পদদলিত হয়ে হতাহতের খবর শুনে আমি মর্মাহত। যারা প্রিয়জনকে হারিয়েছেন, তাঁদের প্রতি আমার সমবেদনা। আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি। কর্তৃপক্ষ এই ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করছে।’
১২ বছর পর পর অনুষ্ঠিত হয় মহা কুম্ভ মেলা। এবারের মেলা আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি শেষ হবে। এই মেলায় অংশ নেওয়ার জন্য প্রয়াগরাজ যাওয়ার ট্রেনগুলোতে প্রচুর ভিড় দেখা যাচ্ছে। গত সপ্তাহে বিহারের মধুবনি রেলওয়ে স্টেশনে প্রয়াগরাজ হয়ে দিল্লি যাওয়া স্বতন্ত্রতা সেনানী এক্সপ্রেসের যাত্রীরা ট্রেনে উঠতে না পেরে ট্রেনের কাচ ভেঙে ফেলেন। বিহারের অন্যান্য রেলওয়ে স্টেশন থেকেও প্রয়াগরাজ যাওয়ার ট্রেন নিয়ে একই ঘটনার খবর পাওয়া গেছে এবং পুলিশি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
কুম্ভ মেলায় যেতে দিল্লি স্টেশনে হুড়োহুড়ি, পদদলিত হয়ে নিহত ১৮

Leave a comment