জন্মভূমি ডেস্ক : কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীর বিয়েতে বরপক্ষকে দেওয়া হয়েছে কনের ওজনের সমপরিমাণ কয়েন। মঙ্গলবার উপজেলার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী ১ নম্বর প্রাগপুর ইউনিয়নের প্রাগপুর মাঠপাড়া গ্রামের বাসিন্দা কনের পিতা রতন আলীর বাড়িতে এই ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় দাঁড়িপাল্লা দিয়ে কয়েন মাপার একটি ভিডিও চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠে।
ভিডিওতে দেখা যায়, বড় দাঁড়িপাল্লার একদিকে বিয়ের পোশাকে সুসজ্জিত কনে বসে আছেন। অপরদিকে সবার উপস্থিতিতে দাঁড়িপাল্লায় পাঁচ টাকা মূল্যমানের কয়েন দিয়ে কনের সমপরিমাণ ওজন মেপে দেওয়া হচ্ছে। যদিও এটিকে যৌতুক বলতে নারাজ কনের পিতা রতন আলী। তার দাবি, “আমার এই মেয়ে জন্মের আগে আরও দুইটি মেয়ে জন্মের পরই মারা যায়। সেকারণে এই মেয়ের জন্মের সময় মানত করেছিলাম যে, এই মেয়ে বেঁচে থাকলে ওর বিয়ের সময় সমপরিমাণ ওজনের মোহর/মুদ্রা উপহার দিবো। “সেজন্য এটি যৌতুকের টাকা নয় বরং পাত্রকে উপহার বা উপঢৌকন বাবদ দেওয়া টাকা। যা ওদের সাংসারিক জীবনের কাজে লাগাতে পারে অথবা দশজনকে খাওয়াতে পারে।”
এ ঘটনায় স্থানীয় ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সিদ্দিকুর রহমান বলেন, “দুই মাস পূর্বে রতন আলীর ৮ম শ্রেণিতে পড়ুয়া কন্যা প্রেম করে একই এলাকার কৃষক মাইনুল (২৪)র সাথে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। “এতে বরের পিতা ক্ষুব্ধ হয়ে বলে- ওই মেয়ের আমার বাড়িতে জায়গা নেই। আর যদি মেয়ের ওজনে টাকা দেয় তাহলে নিবো। এতে মেয়ের বাপও চালাকি করে মেয়ের ওজনের সমপরিমাণ পাঁচ টাকার কয়েনে ৪০ হাজারের কিছু বেশি টাকা দাড়িপাল্লায় মেপে শর্ত পূরণ করেছে। “কনের পিতা রতন আলী এটিকে ‘মানত’ দাবি করলেও এটি কার্যত যৌতুক হিসেবেই বরপক্ষকে দেওয়া হয়েছে।” মেয়েটির বাল্যবিয়ে নিয়ে তিনি বলেন, “যেহেতু আমার এলাকায় কোনোভাবেই বাল্যবিয়ে গ্রহণযোগ্য নয় সেজন্য ওরা ভয়ে আমাকে দাওয়াতও করেনি। ঘটনাটি শোনার পর স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী ও পরিবারের সাথে কথা বলে বিষয়টি জানতে পেরেছি।
যেহেতু আমার এলাকার কাজী দ্বারা বিয়ে হয়নি, সেকারণে এই অল্প বয়সী মেয়ের বিয়ে আদৌ রেজিস্ট্রার্ড হয়েছে কিনা সেটিও আমরা খতিয়ে দেখছি। তবে এ বিষয়ে পাত্রপক্ষের লোকজনের সঙ্গে মোবাইলে কল করে কথা বলতে চাইলে তারা এ বিষয়ে কিছু বলতে রাজি হননি। স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী রাকিবুল ইসলাম বলেন, “প্রকাশ্যে ওজন করে টাকা দেওয়া ঠিক হয়নি। এটি ‘যৌতুক না মানত’, তা নিয়ে মানুষের মধ্যে নানান প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। আর এ নিয়ে গ্রামে নানান কথা চলছে।”
১ নম্বর প্রাগপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও প্রাগপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক আশরাফুজ্জামান মুকুল বলেন, “একপাল্লায় কনে অন্য পাল্লায় সমওজনের মুদ্রা বা কয়েন দিয়ে বিয়ের সংবাদটি শুনেছি। বিয়েটি এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। “তবে মেয়েটি আমার স্কুলের ৮ম শ্রেণির ছাত্রী, কিভাবে এ বিয়েটি হলো সে বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।” দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ওবায়দুল্লাহ বলেন, “এ ধরনের একটি ঘটনা শুনেছি। এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে সত্যতা পাওয়া গেলে অবশ্যই বেআইনী কাজে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত