জন্মভূমি ডেস্ক : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুষ্টিয়ার চারটি সংসদীয় আসনের মধ্যে তিনটিতে ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং একটি আসনে নৌকার প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। গত রোববার ভোটের ফলাফল ঘোষণার পর কুষ্টিয়ার বিভিন্ন উপজেলায় নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে।
এসময়ে চারটি সংসদীয় আসনে বেশ কয়েকটি জায়গায় পরাজিত প্রার্থীর সমর্থকদের বাড়িঘর ভাঙচুর, হামলা, মারপিট, অগ্নিসংযোগ ও হুমকিধামকির ঘটনা ঘটেছে। হামলা করে প্রায় ১৫ জনকে রক্তাক্ত জখম করা হয়। নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতার ঘটনায় বিভিন্ন থানায় মামলা হয়েছে। বিভিন্ন উপজেলায় অভিযান চালিয়ে ১৭ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পরিস্থিতি শান্ত রাখতে গুরুত্বপূর্ণস্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার পিয়ারপুর ইউনিয়নের জগন্নাথপুর গ্রামের মৃত জসিম উদ্দিনের ছেলে আব্দুর রশিদ (৫০), একই গ্রামের মৃত আমদ মন্ডলের ছেলে ছাবেদ আলী মন্ডল (৪৫), শহিদুল বিশ্বাসের ছেলে রিংকু বিশ্বাস (২৫)।
কুমারখালী উপজেলার বাঁশগ্রাম পূর্বপাড়ার মৃত জহির উদ্দিনের ওলিদুর রহমান জোয়াদ্দার (৪৪), একই উপজেলার পিতম্বরবশী গ্রামের মৃত আজাহার উদ্দিন শেখের ছেলে সাখাওয়াত হোসেন (৫০) ও মনিরুজ্জামান (৪৫), আদাবাড়িয়া গ্রামের মৃত মোহাম্মদ আলীর ছেলে আক্তারজ্জামান (৪০), রামদিয়া কাঁঠাল বাগান এলাকার ইলিয়াস মোল্লার ছেলে জাহাঙ্গীর আলম (১৯)। পান্টি গোরস্থানপাড়ার আব্দুল আওয়ালের ছেলে রায়হান (২৫), দক্ষিণ ভবানীপুর গ্রামের মোকাদ্দেস মোল্লার ছেলে আলামত মোল্লা (৩৬), চাপড়া পূর্বপাড়ার এস এম রাশেদুল ফরহাদের ছেলে রাজিব হোসেন (২৭), দক্ষিণ মনোহরপুর কালুপাড়া গ্রামের মৃত মনছুর আলী বিশ্বাসের ছেলে আলাউদ্দিন বিশ্বাস(৬০)। খোকসা উপজেলার উথলী গ্রামের ইউনুছ আলীর ছেলে রুহুল ইসলাম (২৫), পূর্ব গোপালপুর গ্রামের মৃত আকবর আলী সরদারের ছেলে আইয়ুব আলী (৫৮), একই গ্রামের চতুর আলীর ছেলে সবুজ (৩০), চতুর প্রামানিক (৫৫), বানাত আলী সরদারের ছেলে হাবিল হোসেন (৩০)।
জানা গেছে, কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর কুমারখালী উপজেলার বাগুলাট ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ মনোহরপুর উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে ভোটগ্রহণ শেষে বাড়ি ফেরার পথে নৌকার সমর্থকরা ট্রাক মার্কার পোলিং এজেন্ট অহিদুল ও সমর্থক তেফাজ্জেল বিশ্বাস, মানিক বিশ্বাস, শুভ ও আব্দুল মজিদসহ বেশ কয়েকজন সমর্থকদের ওপর দেশীয় অস্ত্র দিয়ে হামলা চালায়। এতে গুরুতর আহত হন তারা। তাদের ৫ জনকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এদের মধ্যে তোফাজ্জেলের শরীরে ১৫টি সেলাই ও মানিকের ৬টি সেলাই দেওয়া লেগেছে। এ ঘটনায় কুমারখালী থানায় মামলা হয়েছে। অপরদিকে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর জয়ী প্রার্থী আব্দুর রউফের সমর্থকরা নৌকার সমর্থক রাজ্জাক হোসেন (চুকা), উম্মত আলী, জয়নাল, আজিজ, হাফিজের বাড়িতে ও দোকানে হামলা করে।
কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসনে নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতায় প্রায় ১০ জন আহত হয়েছেন। এসময় বেশ কয়েকটি বাড়িতে আগুন, নির্বাচনী অফিস ও দোকানপাট ভাঙচুর করা হয়েছে। পরাজিত ঈগল প্রতীকের প্রার্থী নাজমুল হুদা পটলের সমর্থক জগন্নাথপুর গ্রামের আবু হানিফের বাড়িতে হামলা, লুটপাট ও আগুন দেওয়া হয়। অভিযোগ উঠেছে বিজয়ী ট্রাক প্রতীকের প্রার্থী রেজাউল হক চৌধুরীর সমর্থকরা তার বাড়ি ঘরে আগুন দেয়। সোমবার সকাল ১০টার দিকে দৌলতপুর উপজেলার পিয়ারপুর ইউনিয়নের জগন্নাথপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় দৌলতপুর থানায় মামলা হয়েছে।
কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এ এইচ এম আবদুর রকিব জানান, নির্বাচনী পরবর্তী ভিত্তিক এলাকায় সহিংসতার ঘটনায় জড়িত ১৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে এই অভিযান অব্যহত থাকবে। সবাইকে সহিংসতা এড়িয়ে চলার জন্য আহ্বান জানান তিনি।