
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: বিএনপির এক সময়ের ঘাঁটি কুষ্টিয়ায় কোনোভাবেই সক্রিয় হতে পারছেন না নেতাকর্মীরা। একের পর এক মামলা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের সব নেতাকর্মীই ঘরছাড়া। জেলা বিএনপির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ দুই শতাধিক নেতাকর্মী কারাগারে বন্দি। এতে নেতাকর্মীদের মাঝে মামলা ও গ্রেফতার আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ নিয়ে জেলার বিএনপি নেতাকর্মীরা বেশ উদ্বিগ্ন। কেন্দ্র থেকে আন্দোলনের কর্মসূচি জোরদারের নির্দেশ দেওয়া হলেও কোনোভাবেই মাঠে নামতে পারছেন না নেতাকর্মীরা। বিএনপি বলছে, মামলায় জর্জরত নেতাকর্মীরা গ্রেফতারের ভয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন। জেলার ছয় উপজেলার পাঁচ হাজার নেতাকর্মী ঘরছাড়া।
জানা যায়, গত ২৮ অক্টোবর ঢাকার মহাসমাবেশের পর থেকে ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত ২৭ দিনে কুষ্টিয়ায় রেকর্ডসংখ্যক বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের নামে ২৪টি মামলা হয়েছে- যার সব মামলার বাদীই পুলিশ। জেলায় সবচেয়ে বেশি ১২টি দলীয় মামলা হয়েছে কুষ্টিয়া মডেল থানায়। এর পরই রয়েছে কুমারখালী ও মিরপুর থানায় তিনটি করে এবং দৌলতপুর ও ভেড়ামারা থানায় দুটি করে মামলা হয়েছে।
এছাড়া ইবি থানায় একটি ও খোকসা থানায় আরও একটি মামলা হয়েছে বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে। এসব মামলায় এজাহারভুক্ত ৫২৩ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাত আসামির সংখ্যা এক হাজার ২৬৬ জন। গত ২৭ দিনে ২৪ মামলার ৫২৩ জন আসামির মধ্যে ৮০ জনকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ ছাড়া অজ্ঞাত ও পেন্ডিং মামলায় আরও ১০০ নেকাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে দাবি করেন বিএনপি নেতারা। ২৪ মামলায় সবচেয়ে বেশি আসামি হয়েছেন জেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব খন্দকার তসলিম উদ্দিন নিশাত। এর পরই রয়েছেন জেলা ছাত্রদলের আহবায়ক মোজাক্কির রহমান রাব্বি ও জেলা বিএনপির সাংসঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শামিম-উল হাসান অপু। তারা সবাই আত্মগোপনে রয়েছেন।
আত্মগোপনে থাকা জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামিম-উল হাসান অপু বলেন, একতরফা নির্বাচনের নীলনকশা বাস্তবায়ন করতে বর্তমান স্বৈরাচারী সরকার একদফার আন্দোলন দমন করার জন্য মিথ্যা মামলার আশ্রয় নিয়েছে। নেতাকর্মীদের নামে একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার করা হচ্ছে। এভাবে বানোয়াট মামলা ও গ্রেফতার করে চলমান একদফার আন্দোলন কখনোই দমন করা যাবে না। বিএনপি দলীয় সূত্রে জানা যায়, কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমি, সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন, সিনিয়র সহ-সভাপতি রেজা আহমেদ বাচ্চু মোল্লা, যুববিষয়ক সম্পাদক মেজবাহুর রহমান পিন্টু, ভেড়ামার উপজেলা যুবদলের আহবায়ক শামীম রেজা, দৌলতপুর উপজেলা যুবদলের আহবায়ক বেনজির আহমেদ বাচ্চু, খোকসা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক রবিউল ইসলাম স্বপন, শহর স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক সোহানুর রহমান লিংকন, সদস্য সচিব ইমতিয়াজ দিবস, শহর যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক শামীম আহমেদ, আমলা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন, ভেড়ামারা পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহবায়ক মোহাম্মদ সাজু, জেলা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক জামির হোসেন, সদস্য হৃদয় হোসেনসহ বিএনপি ও অঙ্গ সংসঠনের প্রথম সারির অধিকাংশ নেতাকর্মী কারাগারে রয়েছেন।
বিএনপি নেতাকর্মীদের অভিযোগ, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও অবৈধ সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ২৮ অক্টোবর ঢাকার মহাসমাবেশের পর থেকে বিনা কারণে নিরীহ নেতাকর্মীদের নামে মামলা দিয়ে গ্রেফতার করা হচ্ছে। এছাড়া সংগঠনের নেতাকর্মীদর বাড়িতে বাড়িতে হামলা ও নির্যাতন করা হচ্ছে। জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বকুল আলী বলেন, বিনা ওয়ারেন্টে নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করছে পুলিশ। তিনি পুলিশের এ ধরনের অন্যায় আচরণ ও নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা বানোয়াট মামলায় গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) পলাশ কান্তি নাথ বলেন, হরতাল-অবরোধের নামে নাশকতা ও জানমালের ক্ষতিসাধন করলে তাদের নামে মামলা হচ্ছে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আসামিদের গ্রেফতার করছে। কোনো বিএনপি নেতাকর্মী বলে কিছু নেই, নাশকতার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে।