শেখ মাহতাব হোসেন, ডুমুরিয়া : খুলনা ডুমুরিয়া ধান-পাটসহ কৃষিপণ্যের মূল্যহ্রাসে গ্রামীণ অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়েছে। অর্থ সংকটে চাষাবাদ ও সংসার
যাত্রা নির্বাহ কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। জানা গেছে, গত দেড় বছরে সরকার নিয়ন্ত্রিত ইউরিয়া, ডিএপি, টিএসপি ও পটাশ সারের মূল্য তুলনামূলক কম বৃদ্ধি পেয়েছে। আর লাঙ্গল, মই, বীজ, কীটনাশক, মুজুরি, সেচ খরচসহ সব ধরণের কৃষি উপকরণের মূল্য প্রায় ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। একইভাবে মানুষের জীবনযাত্রা খরচ কোন কোন ক্ষেত্রে ৫০% বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য আলু, আদা, জিরা, মরিচের দাম দ্বিগুণের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। ডাল ছাড়া সব ধরণের তরিতরকারি, মাছ, মাংসের দাম একইভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে উৎপাদনসহ জীবনযাপন খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু এলাকার ৯০ ভাগ মানুষ কৃষক। সেই কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তির নিশ্চয়তা নেই। সব পণ্যের মূল্য উর্ধ্বমুখী হলেও গত কয়েক মাসে ধান পাটের মূল্য নিম্নমুখী হয়েছে। গত বছর ঠিক এই সময় ৬০ কেজি ধান ২ হাজার ৪শ' টাকায় বিক্রি হয়েছে। সেই
ধানের বর্তমান বাজার দাম ১ হাজার ৭শ' টাকায় নেমে এসেছে। ২ হাজার ১শ' টাকা মণের পাটের দাম ১ হাজার ৫শ' টাকায় নেমে এসেছে। এদিকে মাঝে মাঝে অগ্নিমূল্যের তরিতরকারি কিনে দেশের
মানুষের নাভিঃশ্বাস উঠছে। কিন্তু কৃষক সেই তরিতরকারির ন্যায্যমূল্য পায় না। মধ্যস্বত্বভোগীরা লোপাট করছে কৃষকের পরিশ্রমের ফল। অন্যদিকে ধানের দাম হ্রাসের সঙ্গে বহু মানুষের আগাম জাতের আমন ধানে কারেন্ট পোকার আক্রমণে ফলন বিপর্যয় ঘটেছে। টিপনা ফরাদ সরদার জানায়, কারেন্ট পোকার আক্রমণে তার অর্ধবিঘা জমিতে সাড়ে ৭ মণ ধান হয়েছে। ধানের দাম হ্রাসের কারণে তার উৎপাদন খরচ উঠেনি। মির্জাপুরের শুকুর আলী জানায়, কারেন্ট পোকার আক্রমণে তার ১৫ শতক জমিতে ৪ মণ ধান উৎপাদন হয়েছে। ফলে সংসার নির্বাহ পরবর্তী ফসল চাষের খরচ যোগানো কষ্টকর হয়ে পড়েছে। শোভনার জাকির শেখ জানায়, তার বিঘা প্রতি ৮মণ ধান হয়েছে। হাসানপুর মোসলেম উদ্দিন জানান, ৩ বিঘায় ২৪ মণ ধান হয়েছে। এতে করে ধান। চাষের খরচ উঠছে না। তবে কৃষি কর্মকর্তারা কারেন্ট পোকার আক্রমণের ফলন হ্রাসের বিষয় অস্বীকার করেন। তবে কৃষকরা ফলন হ্রাসে অর্থ সংকটে সার, কীটনাশকের দোকানে দেনা, কাপড় চোপড় ও মুদি দোকানের দেনা পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছে বলে জানান। ফলে কৃষকের হাতে টাকা পয়সা নেই। ডুমুরিয়ার সিংহভাগ মানুষ কৃষক। সেই সিংহভাগ কৃষকের হাতে পয়সা না থাকায় দোকানপাটে বেচাকেনা হ্রাস পেয়েছে। একই কারণে দিনমুজুর, ভ্যান ইজিবাইক থ্রি-হুইলার চালকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষের আয় রোজগার হ্রাস পেয়েছে। এতে করে ডুমুরিয়া সদরসহ গ্রামগঞ্জের সমস্ত শ্রেণির মানুষের খাওয়া খরচ ছাড়াও চাষাবাদের খরচ কমাতে হচ্ছে। ফলে চাষবাস, ব্যবসা বাণিজ্যে অচলাবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। স্থবির হয়ে আসছে গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা।
প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত