জন্মভূমি ডেস্ক : বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর পদ থেকে অবসরে গেছেন একেএম সাজেদুর রহমান খান চলতি ফেব্রুয়ারির ১ তারিখ । বয়সসীমা ৬২ বছর পূর্ণ হওয়ায় তার চাকরির মেয়াদ শেষ হয়। ২৩ ফেব্রুয়ারি অবসরে যাচ্ছেন আরেক ডেপুটি গভর্নর আবু ফরাহ মো. নাছের। ওইদিন তারও ৬২ বছর বয়স পূর্ণ হতে যাচ্ছে। এক মাসের মধ্যেই গুরুত্বপূর্ণ দুই পদ শূন্য হওয়ায় এরই মধ্যে নতুন নিয়োগ দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের বেশ কয়েকজন নির্বাহী পরিচালকের নাম শোনা যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্যমতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. মো. হাবিবুর রহমান ও জ্যেষ্ঠ নির্বাহী পরিচালক মো. খুরশীদ আলম ডেপুটি গভর্নর পদে নিয়োগ পেতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে আরো বেশ কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান নির্বাহী পরিচালকের নাম আলোচনায় আছে। ডেপুটি গভর্নর পদে নিয়োগে আলোচনায় থাকা বর্তমান নির্বাহী পরিচালকরা হলেন মো. আবুল বশর ও মো. মেজবাউল হক। আবুল বশর জ্যেষ্ঠতার বিচারে এগিয়ে রয়েছেন। আর মেজবাউল হক এগিয়ে আছেন পেমেন্ট সিস্টেমস ও প্রযুক্তিগত জ্ঞানের কারণে। এছাড়া সাবেক নির্বাহী পরিচালকদের মধ্যে মো. আওলাদ হোসেন চৌধুরী, মো. সিরাজুল ইসলাম ও এএফএম শাহীনুল ইসলামের নামও ডেপুটি গভর্নর পদে আলোচনায় আছে। কেউ কেউ নিজ নিজ অবস্থান থেকে চেষ্টা ও তদবির করছেন বলেও জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার-১৯৭২-এর ১০ (৪) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ডেপুটি গভর্নর পদে নিয়োগ দেয়া হয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে এ নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি হয়। তবে নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন লাগে। বয়সসীমা ৬২ পর্যন্ত ডেপুটি গভর্নর পদে দায়িত্ব পালন করা যায়। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর পদ চারটি। ৬২ বছর পূর্ণ হওয়ায় ১ ফেব্রুয়ারি ডেপুটি গভর্নর একেএম সাজেদুর রহমান খান অবসরে যান। একই কারণে ২৩ ফেব্রুয়ারি আরেক ডেপুটি গভর্নর আবু ফরাহ মো. নাছের অবসরে যাচ্ছেন। এ দুটি পদে নতুন করে নিয়োগ দেয়ার বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে ফাইল পাঠানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল একাধিক বলেন, ‘ডেপুটি গভর্নর পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সুপারিশ সরকারের কাছে অগ্রাধিকার পেতে পারে। এজন্য পদপ্রত্যাশীরা গভর্নরের কাছে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরার চেষ্টা করছেন। আবার কেউ কেউ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের কাছে এ বিষয়ে তদবির নিয়ে যাচ্ছেন। প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ও ব্যাংক চেয়ারম্যানদের ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দও ডেপুটি গভর্নর পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, ‘সরকার বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার অনুযায়ী ডেপুটি গভর্নর পদে নিয়োগ দেয়। চলতি মাসের শুরুতে একজন ডেপুটি গভর্নর অবসরে গেছেন। ২৩ ফেব্রুয়ারি আরো একজন অবসরে যাবেন। সরকার যাকে উপযুক্ত মনে করবেন, তাকেই ডেপুটি গভর্নর নিয়োগ দিতে পারেন।’
আবু ফরাহ মো. নাছের ও একেএম সাজেদুর রহমান খান অবসরে যাওয়ায় ডেপুটি গভর্নর পদে দুজন দায়িত্বে থাকছেন। এর মধ্যে জ্যেষ্ঠ ডেপুটি গভর্নর হিসেবে দায়িত্বে আছেন কাজী ছাইদুর রহমান। ২০২০ সালের ২২ নভেম্বর তাকে এ পদে নিয়োগ দেয়া হয়। ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি তার বয়স ৬২ বছর পূর্ণ হবে। ওইদিন পর্যন্ত তিনি ডেপুটি গভর্নর পদে দায়িত্ব পালন করবেন। আর ২০২৩ সালের ২ জুলাই তিন বছরের জন্য ডেপুটি গভর্নর পদে যোগ দেন নুরুন নাহার।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, আবু ফরাহ মো. নাছের অবসরে গেলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি প্রণয়ন ও তদারকির ক্ষেত্রে বড় ধরনের শূন্যতা তৈরি হবে। কারণ তিনি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি বাণিজ্যিক ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের কাছে অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য। দীর্ঘদিন তিনি ‘ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি’ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক, নির্বাহী পরিচালক ও ডেপুটি গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বিভাগটি দেশের ব্যাংক খাতের জন্য নীতি প্রণয়ন, শৃঙ্খলা রক্ষা ও তদারকিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এজন্য আবু ফরাহ মো. নাছেরকে বাংলাদেশ ব্যাংকের উপদেষ্টা পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হতে পারে। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে আলোচনাও হয়েছে।’