জন্মভূমি রিপোর্ট : কেশবপুরে ইরি বোরো রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষকরা।পুরুষের পাশাপাশি নারীরা একাজে সহযোগিতা করছে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে এবার কেশবপুর উপজেলায় ৭২০ হেক্টর জমিতে বোরো বীজতলা তৈরির পর পুরোপুরি ইরি বোরো রোপণ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে কৃষকরা। এবার কেশবপুর উপজেলায় ১৪ হাজার ৪ শত হেক্টর জমিতে ইরি বোরো আবাদ করেছেন কৃষকরা।সরকারের দেওয়া বীজ,সার কৃষি অফিস থেকে ৪ হাজার কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছিল।মঙ্গলবার ৯ জানুয়ারী দুপুরে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে কৃষকরা ক্ষেতে গরুর বদলে মই টানছে মানুষ। আবার কেউ কেউ ইরি বোরো রোপণ ও রোপণের জন্য জমিতে পরিচর্যার কাজ করছে। জানা গেছে এক সময় এ এলাকার কৃষকদের ঘরে ঘরে গরু,জোয়াল এবং লাঙ্গলসহ কৃষি যন্ত্রপাতি ছিল। কৃষকের জমি চাষের সাথে গরু ও মহিষের সম্পর্ক সেই আদিকাল থেকে। সাধারণত কৃষি জমিতে গরু দিয়ে টানা লাঙ্গলে জমি চাষ ও মই দিয়ে চাষের জমি সমান করে ফসল লাগানো হয়ে থাকে। আধুনিক যুগে এসে যোগ হয়েছে ইঞ্জিন চালিত পাওয়ার টিলার ও ট্রাক্টর। গ্রামাঞ্চলে কৃষকের বড় পরিচয় ছিল যার বাড়িতে গরু, লাঙ্গল ও মই আছে।
কথা হয় বোরো ক্ষেতে গরুর বদলে মই টানতে থাকা উপজেলার বাগদহা গ্রামের কৃষক হাবিবুর রহমান হবির সঙ্গে। তিনি বলেন, জমি চাষাবাদ করে ছয় আট সদস্য পরিবারের সংসারের সারা বছরের যোগান দিতে হয়। কিন্তু আমাদের এলাকায় ইরি বোরো চাষ ছাড়া অন্য ফসল তেমন না হওয়ায় হালের গরু পালন করা হয় না। আগে আমারও হালের বলদ ছিল। সারা বছর গরু পালন করতে যে টাকা খরচ হয় তা দিয়ে আমাদের মত কৃষকের গরু পোষা সম্ভব না। এখন বিচালীসহ গো খাদ্যের অনেক দাম। গরু দিয়েই ক্ষেতে মই দিতে হয়। বর্তমানে আমার হালের বলদ না থাকাই সকাল থেকে নিজেরায় ক্ষেতে মই টানছি।
কৃষক হাবিবুর রহমান হবির ছেলে আবদুল মাজিদ বলেন, বাগদহা বিলে ৬ বিঘা জমিতে আমরা চলতি বোরো মৌসুমে ধান চাষ করব। সকল জমিতেই গরুর বদলে নিজেদেরই মই টানতে হবে। মই টানতে সহযোগিতা করতে আসা কৃষক আবদুল জলিল বলেন, গরুর বদলে মই টানতে তিনজন মানুষের প্রয়োজন। একজন দিয়ে মই টানা অসম্ভব। তাই প্রতিবেশী হিসেবে আরেক কৃষককে সহায়তার জন্য মই টানার কাজে আমি তাদেরকে সাহায্য করতে এসেছি।বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন বলেন,তিনি ওই গ্রামের একজন ভালো কৃষক। দীর্ঘদিন ধরে তিনি ইরি-বোরো আবাদ করে আসছেন। এবারও তিনি ৩ বিঘা জমিতে ধান চাষ করবেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় এলাকায় হালের বলদ না পাওয়ায় নিজেরা ক্ষেতের মই দিতে হচ্ছে। ফতেপুর গ্রামের কৃষক হাবিবুল্লাহ বলেন, আগে হাল চাষের জন্য প্রত্যেক কৃষকের ঘরে গরু, লাঙ্গল ও মই থাকতো। সময়ের সাথে আধুনিকতার ছোঁয়া এখন গ্রামাঞ্চলে পৌঁছে গেছে। এখন ফসল ফলানোর ক্ষেত্রে অন্যান্য প্রযুক্তির পাশাপাশি জমি দ্রুত তৈরিতে গরু টানা লাঙ্গল ও মইয়ের পরিবর্তে ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহারে গরু টানা লাঙ্গল ও মই এখন কেশবপুরে তেমন একটা চোখে পড়ে না। কেশবপুর থেকে হালের বলদ প্রায় বিলুপ্তির পথে। সে কারণে তিনি নিজে ও ভাইদের সহযোগিতায় চলতি বোরো মৌসুমে ট্রাক্টর বা পাওয়ার টিলার দিয়ে চাষ করা ৭ বিঘা জমির উঁচু-নিচু অংশসহ চাকার দাগ সমান করতে গরুর পরিবর্তে মই টানছেন।কিন্তু গ্রাম বাংলার কৃষকের গরু দিয়ে টানা হাল, মইয়ে জমি তৈরিতে সময় লাগতো। সময়ের সাথে আধুনিকতার ছোঁয়া এখন গ্রামাঞ্চলে পৌঁছে গেছে। এখন ফসল ফলানোর ক্ষেত্রে অন্যান্য প্রযুক্তির পাশাপাশি জমি দ্রুত তৈরিতে গরু টানা লাঙ্গল ও মইয়ের পরিবর্তে ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহারে গরুর টানা লাঙ্গল, মই এখন কেশবপুরে তেমন একটা চোখে না পড়লেও ট্রাক্টর বা পাওয়ার টিলার দিয়ে চাষ করা জমির উঁচু-নিচু অংশ বা চাকার দাগ সমান করতে গরুর পরিবর্তে মই টানছে মানুষ। মইয়ে হালকা কিছু ওজন দিয়ে তা দু’জন কিংবা একজন টেনে জমির প্রয়োজনীয় অংশ দ্রুত সমান করে ফেলছে। এলাকার কৃষকরা জানান, পাওয়ার টিলার দিয়ে চাষ করা জমিতে চাকার দাগ থাকায় তা সমান করতে নিজেরা মই টেনে সমান করেছেন। ওই এলাকার আবুল হোসেন বলেন, তার ৩ বিঘা জমিতে বোরো ধান চারা রোপণের পাওয়ার টিলার দিয়ে চাষ করে নেয়ার পর নিজেরাই মই টেনে জমি সমান করে চারা রোপণ করছেন।ব্রহ্মকাটি গ্রামের কৃষক জামাল সরদার,হামিদ সরদার,আনিছুর সরদার,রামচন্দ্রপুর গ্রামের ময়েজউদ্দিন,আব্দুল সরদার,সুজাপুর গ্রামের আতিয়ার রহমান,বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের সুজনসহ আরো অনেক কৃষকরা এ প্রতিনিধি কে জানান,আধুনিক যন্ত্র দিয়ে দ্রুত জমি চাষ হওয়ায় এখন গরুর লাঙ্গল, মই হারিয়ে যাচ্ছে।গরুর বদলে বিকল্প হিসেবে মানুষই মই টেনে জমি সমান করে নিচ্ছে।এমন দৃশ্য উপজেলার প্রায় সব জায়গায়। তারা আরো বলেন,এই উপজেলা জুড়ে কৃষকরা ইরি বোরো রোপণে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।আমরা আশা করছি আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে
ও প্রাকৃতিক কোন দুর্যোগ না হলে ভালো ফলন পাওয়া যাবে।এব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার মামুদা আক্তার বলেন,এবার কেশবপুর উপজেলায় ৭২০ হেক্টর জমিতে বোরো বীজতলা তৈরির পর পুরোদমে ইরি বোরো রোপণ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে কৃষকরা।এবার এ উপজেলায় ১৪ হাজার ৪ শত হেক্টর জমিতে ইরি বোরো আবাদ করছেন কৃষকরা।
কেশবপুরে ইরি বোরো রোপণে ব্যস্ত কৃষকরা
Leave a comment