
কেশবপুর প্রতিনিধি : যশোরের কেশবপুরে মতিউর রহমান নামের এক শিক্ষিত যুবক চলতি মৌসুমে লাউ চাষ করে সাফল্যের পাশাপাশি এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন। তিনি ২০১৪ সালে যশোর এম এম কলেজ থেকে মাস্টার্স পাশ করার পর দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও চাকরি না পেয়ে কৃষি কাজের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। অন্যের জমি বর্গা নিয়ে লাউ চাষ করে সঠিক পরিচর্যায় ক্ষেতে প্রচুর পরিমাণ লাউ উৎপাদন করেছেন। এলাকাবাসীর অনেকেই শিক্ষিত যুবক মতিউর রহমানকে দেখে লাউ চাষে আগ্রহী হয়েছেন।
উপজেলার পাঁচপোতা গ্রামের মোঃ শহিদুল ইসলাম মধু মোল্লার ছেলে মতিউর রহমান সুজন মাস্টার্স পাশ করে দীর্ঘদিন ধরে চাকরি না পেয়ে নিজেকে স্বাবলম্বী করার আশায় পরের এক বিঘা জমি বছরে ৩০ হাজার টাকা হারে বর্গা নিয়ে সেখানে উন্নতমানের লাউ চাষ শুরু করেন। বীজ রোপণের ৪০ দিন পরেই লাউ ধরতে শুরু করে। বাম্পার ফলন হওয়ায় প্রতিদিন ১৫০ থেকে ২০০ লাউ তুলে বাজারে পাইকারি বিক্রি করেন। তিনি জানান, প্রতিটি লাউ ২৮ থেকে ৩০ টাকা দরে বিক্রি করেন। তাতে প্রতিমাসে সব খরচ বাদ দিয়ে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা তঁার আয় হয়। এখনো জমিতে যে পরিমাণ লাউ রয়েছে তাতে আরও প্রায় ২ লাখ টাকা বিক্রি করতে পারবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন।
সরেজমিনে উপজেলার পাঁচপোতা গ্রামে শিক্ষিত মতিউর রহমানের লাউ ক্ষেতে গিয়ে দেখা যায়, সবুজের সমারোহ ও মনোমুগ্ধকর পরিবেশ। মতিউর রহমান এবং দিনমজুর আজহারুল ইসলাম ও শহিদুল ইসলাম মনোযোগ সহকারে লাউ ক্ষেত পরিচর্যা করছেন। ভিতরে প্রবেশ করে দেখা যায় শতশত লাউ ঝুলে আছে। দিনমজুর আজহারুল ইসলাম ও শহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা প্রতিদিন এই ক্ষেতে কাজ করে থাকি। প্রতিমাসে ১২ হাজার টাকা করে আমাদের মজুরি দেয়া হয়। এলাকার অনেকেই লাউ ক্ষেত দেখতে আসেন। অনেক চাষী আগামীতে লাউ চাষ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। মঙ্গলকোট গ্রামের নুরুল ইসলাম নামের এক কৃষক বলেন, গাছে এতো পরিমাণ লাউ ধরা দেখে আমি মুগ্ধ। এই দৃশ্য দেখে আমি ভেবেছি আগামীতে লাউ চাষ করবো। সেজন্য ওই ক্ষেত মালিককে বীজ দেওয়ার কথাও বলে রেখেছি।
লাউ চাষী মতিউর রহমান বলেন, ২০০৩ সালে মঙ্গলকোট মাধ্যমিক স্কুল থেকে এসএসসি পাশ, ২০০৬ সালে শহীদ ক্যাপ্টেন মাসুদ মেমোরিয়াল কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ এবং ২০১২ সালে যশোর এমএম কলেজ থেকে পলিটিক্যাল সাইন্স নিয়ে অনার্স এবং ২০১৪ সালে মাস্টার্স পাশ করি। পাশ করার পর সরকারি কোন চাকরি না পেয়ে কিছুটা হতাশায় পড়ি। কৃষকের ছেলে হয়ে কি আর করবো নিজেকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে পেশা হিসেবে কৃষি কাজকেই বেছে নিয়েছি। কৃষি কাজে মনোযোগী হয়ে পরের জমি বর্গা নিয়ে লাউ চাষ শুরু করি। ২০ শতক জমিতে বাঁশের মাচা, সুতা, বীজ, স্যার ও অন্যান্য খরচ বাবদ ৩০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। লাউ বিক্রি শুরু করে এ পর্যন্ত প্রায় দেড় লাখ টাকার লাউ বিক্রি করেছি। এছাড়াও পরিবারের সবজির চাহিদা মিটানো ও অর্থনৈতিকভাবে বেশ লাভবান হচ্ছি। আগামীতে আরো বেশি জমি বর্গা নিয়ে লাউ চাষ করবো বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তিনি আরও জানান, যদি স্থানীয় কৃষি অফিস কর্তৃক পরামর্শ বা সহযোগিতা পাই তাহলে আগামীতে সবজি চাষ করে আরো বেশি সাফল্য অর্জন করতে পারবো।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদা আক্তার বলেন, শিক্ষিত যুবকের লাউ খেত পরিদর্শন করেছি। তাকে কীটনাশক ও সার ব্যবহারসহ বিভিন্ন পরামর্শ দেয়া হয়েছে।