জন্মভূমি রিপোর্ট : খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনে প্রার্থী হতে ব্যবসায়ী ও ঠিকাদারদের আগ্রহ সবচেয়ে বেশি। এবারের নির্বাচনে অংশ নেওয়া ৬৮ শতাংশ প্রার্থীরই আয়ের উৎস ব্যবসা ও ঠিকাদারি। নির্বাচনে সাধারণ ও সংরক্ষিত ৪১টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১৭৫ প্রার্থী। তাঁদের মধ্যে ৮৬ জনই ব্যবসায়ী, ৩৩ জন ঠিকাদার। এ ছাড়া নির্বাচনে প্রার্থীদের মধ্যে শিক্ষক যেমন আছেন, তেমনি আছেন বেকার ও সমাজসেবক। আছেন সাংবাদিক, ইন্স্যুরেন্স কর্মকর্তা, চাকরিজীবী, শ্রমিক, দন্ত চিকিৎসক ও আইনজীবী।
হলফনামায় দেখা গেছে, ব্যবসা ও ঠিকাদারির বাইরে ১৬ জন গৃহিণী নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। এর বাইরে ছয় আইনজীবী, পাঁচ চাকরিজীবী, পাঁচ শিক্ষক, দুই সাংবাদিক, দুই শ্রমিক ও একজন দন্ত চিকিৎসক রয়েছেন। এ ছাড়া কৃষি ও মৎস্য চাষকে পেশা দেখিয়েছেন ১০ জন। পেশার ঘরে ‘প্রযোজ্য নয়’ উল্লেখ করেছেন পাঁচজন।
হলফনামায় নিজেকে শ্রমিক হিসেবে উল্লেখ করেছেন ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী মো. নাসির ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের দেলোয়ার হোসেন মাতবর। দন্ত চিকিৎসাকে পেশা দেখিয়েছেন ১০ নম্বর ওয়ার্ডের সায়েম মিয়া। নগরীর ১১ নম্বর ও ১২ নম্বর ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন খুলনার দুটি স্থানীয় দৈনিকের ফটো সাংবাদিক আনোয়ারুল ইসলাম কাজল ও রবিউল গাজী উজ্জ্বল।
২৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর গোলাম মাওলা শানু পেশার ঘরে লিখেছেন ‘পরামর্শক’। সমাজসেবাকে পেশা হিসেবে উল্লেখ করেছেন সংরক্ষিত ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী মাহমুদা বেগম। এ ছাড়া কার্তিককুল সালেহা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আবদুস সালাম এবং দৌলতপুর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলী এবারও প্রার্থী হয়েছেন। তাঁরা দু’জন যথাক্রমে নগরীর ৩ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। তাঁদের দেখে নগরীর ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে এজাজ শেখ নামের একজন প্রাইভেট শিক্ষক এবং সংরক্ষিত ৮ নম্বর ওয়ার্ডে ঝুমুর শেখ নামের আরেক কিন্ডারগার্টেন শিক্ষক নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।
নিজেকে মৎস্যচাষি হিসেবে উল্লেখ করেছেন ১৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাফিজুর রহমান হাফিজ ও ২৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আলী আকবর টিপু। সংরক্ষিত ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর মাজেদা খাতুন আয়ের উৎসের ঘরে লিখেছেন ‘দর্জি’। একই তথ্য দিয়েছেন সংরক্ষিত ১০ নম্বর ওয়ার্ডের আঞ্জুয়ারা বেগম।
এ ব্যাপারে সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজনের জেলা সম্পাদক আইনজীবী কুদরত-ই খুদা বলেন, বিভিন্ন সময় আয়কর নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের মালিকরাই নিজেদের ব্যবসায়ী, কৃষি ও মৎস্যচাষি হিসেবে পরিচয় দেন। ফলে নির্বাচিত হওয়ার পর তাঁদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ আসে। এ জন্য হলফনামায় আয়ের উৎস হিসেবে ব্যবসা লিখলেও কী ধরনের ব্যবসা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কোথায়– তা বিস্তারিত উল্লেখ করা উচিত। তাহলে ভোটারদের সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হবে। তিনি বলেন, বিপুল অর্থ ব্যয়ের অপসংস্কৃতি তৈরি হওয়ায় শিক্ষকসহ সৃজনশীল মানুষ নির্বাচনে আসতে চান না। এ কারণে জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে মানুষ কাঙ্ক্ষিত সেবা পান না। সৃজনশীল পেশার মানুষকে নির্বাচনে আসতে উৎসাহিত করা উচিত।