জন্মভূমি রিপোর্ট : আগামী ১২ জুন খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জনগণের রায় মেনে নেওয়ার কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক। তবে সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কার কথা বলেছেন জাতীয় পার্টির মেয়রপ্রার্থী শফিকুল ইসলাম মধু। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ‘খেলা হবে’ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
শুক্রবার কেসিসি নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণায় নেমে এসব কথা বলেন তারা।
মেয়র প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, নির্বাচনে জনগণ যে রায় দেবে, আমরা সেই রায় মেনে নেব। গাজীপুরে জনগণ যে রায় দিয়েছে, তা আমরা মেনে নিয়েছি। এর আগেও ২০১৩ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে আমি পরাজিত হয়েছিলাম, তা মেনে নিয়েই এ অঞ্চলের উন্নয়নে কাজ করেছি।
তিনি বলেন, খুলনা শহরে উন্নয়ন হয়েছে, তবে তা দৃশ্যমান হতে আরও প্রায় ছয় মাস সময় লাগবে। ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকার কাজ শেষ হলে খুলনা হবে তিলোত্তমা নগরী।
গাজীপুর সিটি নির্বাচনে ইভিএমে ভোট দিতে ও গণনায় বিলম্ব হওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, মানুষ ইভিএমে ভোট দিতে অভ্যস্ত নয়, এ কারণে ভোট দিতে দেরি হয়েছে। তবে একটু সময় লাগলেও ইভিএমে ভোট হয় স্বচ্ছ। এখানে কারচুপির সুযোগ থাকে না।
তবে সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন জাতীয় পার্টির মেয়রপ্রার্থী শফিকুল ইসলাম মধু। প্রতীক পেয়ে তিনি বলেন, আজকে আমরা প্রতীক পেয়েছি, আজ থেকেই আমরা নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করব। আমার মনে হয় নির্বাচনের পরিবেশ ভালো হবে না। কেননা, নির্বাচন কমিশন এতটা শক্তিশালী নয়। নির্বাচন কমিশন তো সরকারের আন্ডারে। সরকার যা বলবে তাই। যদি আওয়ামী লীগ সরকার চায়, তাহলেই শুধু সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। আর যদি তারা সেটা না চায়, তাহলে হবে না। জনগণকে আশ্বস্ত করতে হবে। জনগণ তো ভয়ে কেন্দ্রে যাবে না। প্রতিটা ক্ষেত্রে জনগণ মার খেয়েছে। এই সরকারের প্রতি কোনো আস্থা নেই।
তিনি বলেন, পেছনের দিকে আমরা যদি তাকাই, তাহলে দেখা যাবে, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শুরু করে জাতীয় সংসদসহ যত নির্বাচন হয়েছে তাতে আমি মনে করি নাগরিকদের ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এটা নাগরিকদের আবার ফেরত দিতে হবে। আমি ভোটকেন্দ্রে গেলে ভোট দিতে পারব না-জনগণের মধ্যে যে এমন ভয়ভীতি সৃষ্টি করা হয়েছে সেটাও দূর করতে হবে।
শফিকুল ইসলাম মধু আরও বলেন, বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করায় ভোটকেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি তুলনামূলক কম হতে পারে। বিএনপি-জামায়াত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি। সেক্ষেত্রে আমরা মনে করি এখানে একটা খেলা হবে। এখানে একটা ভালো খেলা হবে। সুষ্ঠু নির্বাচন যদি হয় খুলনা সিটি নির্বাচনে খেলা হবে। ভোটাররা বলবে যে কাকে বিজয়ী করব।
ইভিএম বিষয়ে তিনি বলেন, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ৫ মিনিটে একটা কেন্দ্রের ফলাফল দিতে পারে না। ফলাফলে এতো সময় লাগবে কেন? নির্বাচন কমিশনের এ বিষয়টি দেখা উচিত। একটা বড় দল যেহেতু নির্বাচনে আসেনি সেক্ষেত্রে সরকার এবং আমার ভোটারদের বলা উচিৎ যে তোমরা ভোটকেন্দ্রে যাও।
অপরদিকে কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে ভোটের মাধ্যমে অন্যায়ের প্রতিবাদ করার আহবান জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলনের মেয়রপ্রার্থী আব্দুল আউয়াল। আর ভোটারদের মধ্যে বেশ উৎসাহ রয়েছে উল্লেখ করে জাকের পার্টির মেয়রপ্রার্থী এসএম সাব্বির আহম্মেদ বলেন, যদি পরিস্থিতি এমন থাকে, তাহলে বেশ ভালো হবে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত মেয়রপ্রার্থী মো. আব্দুল আউয়াল বলেন, আমাদের প্রতীক বরাদ্দ হয়েছে। আজ থেকে আমরা প্রকাশ্যে জনগণের সামনে গণসংযোগ করব। অন্যায়ের প্রতিবাদ ভোটের মাধ্যমে করতে হবে। খুলনা শহরের সব স্তরের দুর্নীতি ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা ইসলামী আন্দোলনের মাধ্যমে সিটির একটা পরিবর্তন করতে চাই, আধুনিক নগর হিসেবে গড়ে তুলতে চাই, দূষণমুক্ত নগর গড়তে চাই। আপনারা ভোটের মাধ্যমে আমাদের সহযোগিতা করবেন।
আব্দুল আউয়াল আরও বলেন, ভোটের প্রতি মানুষের একটা অনীহা ছিল। কিন্তু গাজীপুরে সহিংস কোনো ঘটনা ঘটেনি। প্রায় ৫০ শতাংশ ভোটার উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। আমরাও আশা করব খুলনার নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হবে। সহিংস কোনো ঘটনা ঘটবে না সেই চেষ্টা করছে প্রশাসন। এ জন্য সকল ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানাবো ভোটকেন্দ্রে আসার জন্য।
এদিকে জাকের পার্টির মেয়রপ্রার্থী এস এম সাব্বির হোসেন বলেন, প্রতীক পেয়েছি। জরুরি কাজে আজ ঢাকা যাব। আগামীকাল থেকে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করব। নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে প্রচারণা চালানো হবে। এখন পর্যন্ত নির্বাচনের পরিবেশ ভালো রয়েছে। বেশ উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়েই ভোট হবে আশা করি।