জন্মভূমি রিপোর্ট : খুলনা সিটি কপোরেশন নির্বাচনে ৪ মেয়র প্রার্থীর সহ ১৭৯ জনের মাঝে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টায় থেকে শুরু করে বিকাল ৪টা পর্যন্ত মেয়র, কাউন্সিলার ও সংরক্ষিত কাউন্সিলারদের মাঝে এ প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়। রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন তার সম্মেলন কক্ষে প্রার্থীদের মাঝে প্রতীক বরাদ্দের কাগজ তুলে দেন। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক নৌকা, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. আব্দুল আউয়াল হাতপাখা, জাতীয় পার্টির শফিকুল ইসলাম মধু লাঙল ও জাকের পার্টির এস এম সাব্বির হোসেন গোলাপফুল প্রতীক বরাদ্দ পেয়েছেন।
এদিন বেলা ১১টা থেকে নগরীর ৩১টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে এবং ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রতীক বরাদ্দ শুরু হয়। এবার ৩১টি ওয়ার্ডে ১৩৬ জন সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী এবং ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৩৯ জন কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছেন।
খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দীন বলেন, আমরা একটি উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন করতে চাই। সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশ তৈরির পূর্বশর্ত আচরণবিধি প্রতিপালন। সবাইকে আচরণবিধি মেনে চলার অনুরোধ জানান তিনি।
প্রার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ২৮-৩১ মে নগরীর ৩১টি ওয়ার্ডে সরাসরি ইভিএম নিয়ে যাব, বিকেল ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ভোটারদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ৩০ মে শিল্পকলা একাডেমিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। সবাইকে মতামত তুলে ধরার আহ্বান জানাচ্ছি।
প্রতীক বরাদ্দ পেয়েই রাজনৈতিক দলের মেয়র প্রার্থী ও কাউন্সিলার ও সংরক্ষিত আসনের প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারনায় মঠে নেমেছেন। নিজের পক্ষে রায় নিতে ভোটার নানা প্রতিশ্রুত দিচ্ছেন প্রার্থীরা।
শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টায় খুলনা নূর নগর এলাকায় নির্বাচন ভবনে বিভাগীয় নির্বাচন কার্যালয়ের সামনে আসনে মেয়র প্রার্থীরা। খুলনা মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি ও দলীয় মেয়র প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক সাকল পৌনে ১০টায় প্রতীক নিতে আসেন রির্টানিং কর্তকর্তার সম্মেলন কক্ষে। সেখান থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে নগরীর নিউ মার্কেট বাজারে দোকানদের ও সাধারন মানুষের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করে তার নির্বাচনী প্রচারনা শুরু করেন। এ সময় তিনি নিউ মার্কেট সহ আশ-পাশ এলাকার নানা শ্রেনী-পেশার মানুষের সাথে কথা বলেন। খুলনার উন্নয়নের জন্য, সাধারণ মানুষের নাগরীক সেবা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নৌক মার্কায় ভোট চান তালুকদার আব্দুল খালেক। গণসংযোগকালে আওয়ামীলীগের মেয়র প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, ১২ জুন নির্বাচনে আমি পুনরায় মেয়র নির্বাচিত হলে খুলনায় স্মার্ট স্বাস্থ্য ব্যবস্থা চালু করা হবে।তিনি বলেন, বিএনপি খুলনাসহ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষকে কিছুই দেয়নি। এ অঞ্চলের মানুষের সাথে প্রতারনাা করেছে। আওয়ামীলীগ যে প্রতিশ্রুতি দেয়, সেটা বাস্তয়ান করে। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে উন্নয়নের জোর সৃষ্টি করেছে। রাস্তা ঘাট থেকে শুরু করে সব কিছুর চিত্র পাল্টিয়ে দিয়েছেন। আগামীতে খুলনাকে তিলোত্তমা নগরীতে পরিণত করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন আওয়ামী লীগের এই মেয়র প্রার্থী। গণসংযোগকালে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, খুলনা মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এম ডি এ বাবুল রানা, সোনাডাঙ্গা থানা আওয়ামী লীগ তসলিম উদ্দীন আশা ও মহানগর যুবলীগ সভাপতি শফিকুর রহমান পলাশ। তালুকদার আব্দুল খালেক ৩১ নং ওয়ার্ডের মোক্তার হোসেন সড়কের হাজী আব্দুল মালেক মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন । নামাজ শেষে ওই এলাকায় সুধীজনদের সাথে মতবিনিময় করেন তিনি।
বিকেলে ১১নং ওয়ার্ডের প্লাটিনাম মাধ্যমিক কেন্দ্রের আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়ের প্রাথী আলহাজ্ব তালুকদার আবদুল খালেকের নিরাবচনী মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে, নগরীর খালিশপুর প্লাটিনাম মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ -সম্পাদক শেখ ইমন আহমেদ এর পরিচালনায় খালিশপুর থানা আওয়ামী লীগের শ্রম ও জনশক্তি বিষয় ক সম্পাদক তরিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন খালিশপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব একে,এম সানাউল্লাহ নান্নু,বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন খালিশপুর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম বাশার, খুলনা মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম -সম্পাদিকা পারভিন আক্তার, ১১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো:জাকির হোসেন সাধারণ সম্পাদক সরদার আলী আহমেদ, ১১নং ওয়াড যুবলীগের আহ্বায়ক জামান মোল্লা জেলিম, আওয়ামী লীগ নেতা নেছার উদ্দিন সহ ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহযোগী অংগ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
মাগরিব নামাজের পর খুলনা প্রেসক্লাব অডিটোরিয়ামে খুলনা অঞ্চলের রোটারিয়ানদের সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগদেন তিনি।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমীর ও দলীয় মেয়র প্রার্থী হাফেজ মাওলনা আব্দুল আওয়াল সকাল সাড়ে ১০টায় রির্টানিং কর্তকর্তার সম্মেলন কক্ষে প্রতীক নিতে আসেন। হাতপাখা প্রতীক নিয়ে বেলা ১১টায় তিনি নির্বাচনী প্রচারনায় নেমে পড়েন। নগরীর ফুলবাড়িগেট, দৌলতপুর বাজার, নতুন রাস্তা খালিশপুর, নিউমার্কেট, ডাকবাংলা, সোনাডাঙ্গা ও রুপসা সহ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গণ সংযোগ করেন মেয়র প্রার্থী আব্দুল আউয়াল। এ সময় বেশ কয়েকটি স্থানে পথসভায় বক্তৃতাও করেন তিনি। আব্দুল আউয়াল বলেন, ভোট মানে সাক্ষ্য দেয়া, সমর্থন করা এবং সাহায্য করা। এখন আপনি নিজের বিবেককে জিজ্ঞেস করুন, আপনি কার পক্ষে সাক্ষ্য দিবেন। আপনি কাকে সমর্থন করবেন এবং সাহায্য করবেন। তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি, নগরবাসী একজন সৎ, যোগ্য, শিক্ষিত এবং আল্লাহভীরু লোককে নিজেদের নগর পিতা হিসেবে বেছে নিবে। দেশবাসী আজ পরিবর্তন চায়। আর এ পরিবর্তনের সূচনা খুলনা থেকেই শুরু হবে, ইনশাআল্লাহ। এসময় তিনি আরো বলেন, সন্ত্রাস, দুর্নীতি ও মাদকমুক্ত উন্নত সিটি গড়তে খুলনা সিটিতে আল্লাহভীরু মেয়র নির্বাচিত করতে হবে। অতীতে যারাই ক্ষমতায় ছিলো তারাই সন্ত্রাস, দুর্নীতি ও মাদকের মাধ্যমে দেশকে তলাবিহীন ঝুঁড়িতে পরিণত করেছে। নগরবাসীর সমস্যা লাঘবে ব্যর্থ হয়েছেন বার বার। জলাবদ্ধতা, মশকনিধন ও দুষণমুক্ত নগর গড়তে পারেননি তারা। আগামী ১২ ই জুন সিটি নির্বাচনে আমাকে মেয়র নির্বাচিত করলে নগরকে একটি মডেল নগরীতে পরিণত করবো ইনশাআল্লাহ। জনসংযোগকালে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ খুলনা মহানগর এর কেসিসি নির্বাচন পরিচালনা কমিটির ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ খুলনা মহানগর এর কেসিসি নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান পরিচালক মোঃ নাসির উদ্দিন, সহকারী-পরিচালক আলহাজ্ব মুফতি আমানুল্লাহ, সমন্বয়নকারী মুফতি ইমরান হুসাইন, নির্বাচনী প্রধান এজেন্ট শেখ হাসান ওবায়দুল করিম, অর্থ সমন্বয়নকারী আবু গালিব, সহ সম্বয়নকারী রবিউল ইসলাম তুষার, মিডিয়া সমন্বয়কারী আব্দুল্লাহ আল নোমান, ফেরদৌস গাজী সুমন, গনসংযোগ সমন্বয়কারী মোঃ সাইফুল ইসলাম, সহ মিডিয়া সমন্বয়ক আব্দুল্লাহ আল-মামুন, সহ মিডিয়া সমন্বয়ক এম এ সাদী, প্রকাশনা সমন্বয়কারী মাহাদী হাসান মুন্নাসহ থানা ও ওয়ার্ডের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
জাতীয় পার্টির কেন্দ্রী ভাইস চেয়ারম্যান ও খুলনা জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি, দলীয় মেয়র প্রার্থী শফিকুল ইসলাম মধু সকাল পৌনে ১১টায় প্রতীক নিতে আসেন রির্টানি কর্মকর্তার কার্যালয়ে। সেখান থেকে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী প্রচারনায় নামেন জাতীয় পার্টির এই কেন্দ্রীয় নেতা। শফিকুল ইসলাম মধু বেলা সাড়ে ১১টায় নগরীর ডাক বাংলা এলাকা থেকে শুরু করেন নির্বাচনী প্রচারনা। জুম্মার নামাজ পর থেকে রাত পর্যন্ত তিনি বৈকালীর মোড় ,খালিশপুর, দৌলতপুর বাজার, রেলিগেট, ফুলবাড়ী গেট, বয়রা বাজার এলাকায় গণ সংযোগ করেন। এসময় তিনি জাতীয়পার্টিও সরকারের অবদানের কথা তুলে ধরে আবরো জাতীয় পাটির্কে মেয়র পদে দায়িত্ব পালনের সুযোগ দেওয়ার আহবান জানান।
এছাড়া কাউন্সলর প্রার্থীরা প্রতিক বরাদ্দ নিয়ে স্ব স্ব এলাকায়জনসংযোগ শুরু করেন।