জন্মভূমি ডেস্ক : বিগত কয়েক বছর আগেও দেখা যেতো গ্রামের মেঠো পথ ধরে তালগাছ থেকে তালগাছে বাবুই পাখির সুনিপুণ এক শিল্পীর কারুকাজ। বাতাসে দুলে উঠত শিল্পীর যত্নে গড়া সেই নন্দনকানন। চোখ জুড়ানো সেই দৃশ্যে মনে উঠতো আলোড়ন। সময়ের বিবর্তনে অনেক কিছু হারিয়ে গেছে, এখনো যাচ্ছে। তার মধ্যে বাবুই শিল্পীও আছে। আমাদের শৈশব তো মজে আছে রজনীকান্ত সেনের সেই ‘স্বাধীনতার সুখ’ কবিতায়। যার পঙক্তিগুলো এখনো ভাবায় এভাবেই, ‘বাবুই পাখিরে ডাকি, বলিছে চড়াই, “কুঁড়ে ঘরে থেকে কর শিল্পের বড়াই, আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকা পরে, তুমি কত কষ্ট পাও রোধ, বৃষ্টির, ঝড়ে। ”বাবুই হাসিয়া কহে, “সন্দেহ কি তাই ? কষ্ট পাই, তবু থাকি নিজের বাসায়।
পাকা হোক, তবু ভাই, পরের ও বাসা, নিজ হাতে গড়া মোর কাঁচা ঘর, খাসা।
পরের অধীনে না থেকে নিজের কাচা ঘরে খাসা জীবনযাপনের শান্তির এক অমীয় প্রতীক হয়ে আছে বাবুই পাখি। যা কাছে পরের পাকা বাড়ির চেয়ে নিজের কুঁড়ে ঘরই অনেক ভালো। কবিতায় পড়া সেই বাবুই পাখিদেরও একরকম নির্বাসনে পাঠিয়েছে মানুষ।
তাদের সেই কাঁচা ঘরের খাসা সুখটুকুও হাওয়াই মিঠাইর মতো উড়ে গেছে। দিন দিন তালগাছও যেমন কমছে, তার চেয়েও বেশি কমেছে বাবুই পাখির বাসা।
ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার গ্রামগুলোতে আগে বাবুইর আনাগোনা ছিল সর্বত্র। গ্রামীণ জীবন আর বাবুই ছিল মিলেমিশে একাকার। একসময় চোখে পড়ত বাবুই পাখির নয়নাভিরাম বাসা। সেই সঙ্গে পাখির কিচিরমিচির শব্দ। কিন্তু নানা কারণে হারিয়ে যেতে বসেছে বাবুই পাখি ও তার শৈল্পিক বাসার ঐতিহ্য। এ নিয়ে স্থানীয় পরিবেশকর্মী ও পাখিপ্রেমী সংগঠনগুলো উদ্বেগ জানাচ্ছে। তবে বর্তমানে উপজেলার কুশনা ইউনিয়নের বহরমপুর টু আমেরিকান সড়কের পাশের বেশ কয়েকটি খৈয়ে বাবলা গাছে বাবুই পাখির বাসা দৃষ্টি কাড়ছে পথচারীদের। এই বাসা দেখতে শহর থেকে প্রতিদিন অনেক আসছেন। কেউ ছবি তুলছেন কেউবা ভিডিও ধারণ করে নিয়ে যাচ্ছেন। সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা কবি ও সাহিত্যক জিয়াউর রহমান জানান, বাবলা গাছে বাবুই পাখির বাসা সচরাচর দেখা যায় না। বিরল দৃশ্য বাবলা গাছে বাবুই পাখি বাসা বাঁধছে। এমন দৃশ্য পরিলক্ষিত হলো কোটচাঁদপুরে। এটি পাখিগুলো যতদিন ওই গাছটিতে থাকবে ততদিন আমাদের নজর রাখতে হবে। যাতে তাদের বসবাসের জন্য বিরক্ত কোন কিছু সৃষ্টি না হয়।
উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান জানান, বৈরী আবহাওয়া ও পরিবেশের কারণে অনেক প্রাণি হারিয়ে যাচ্ছে। অসংখ্য প্রজাতির পশু, পাখি, কীট-পতঙ্গ আমাদের পরিবেশ থেকে বিলুপ্ত হয়েছে। অনেকগুলো বিলুপ্তির পথে।
বাবুই পাখি জীববৈচিত্র্যের একটি উপাদান। পাখি না থাকলে বাস্তুসংস্থানে বিরূপ প্রভাব পড়বে। নানা কারণে গাছ নিধন করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সতর্ক হতে হবে। গণসচেতনতা বাড়াতে হবে।
প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত