বিজ্ঞপ্তি : ‘শেখ রাসেল দীপ্তিময়, নির্ভীক নির্মল দুর্জয়’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আজ ১৮ অক্টোবর বুধবার খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট ভাই শহিদ শেখ রাসেলের ৬০তম জন্মদিন ও ‘শেখ রাসেল দিবস’ উদযাপন করা হয়। দিবসটি উপলক্ষ্যে বিকাল ৩টায় আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনের সাংবাদিক লিয়াকত আলী মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে দেশ স্বাধীন হয়। সেই চেতনায় এক শিশুর বেড়ে ওঠা থমকে যায় ঘাতকদের নির্মমতায়। যুদ্ধ আইনে যেখানে নারী ও শিশুদের বাদ দেওয়া হয়, সেখানে অত্যন্ত নির্মমভাবে জাতির পিতার কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলকে হত্যা করা হয়। দেশকে উল্টো পথে নেওয়ার উদ্দেশ্যেই ঘটে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের সেই নারকীয় হত্যাযজ্ঞ। তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু শুধুমাত্র একজন ব্যক্তি নন, বঙ্গবন্ধু একটি চেতনা। যে চেতনা কখনো নিঃশেষিত হয় না। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার সেই চেতনার মৃত্যু ঘটেনি। বাংলাদেশ যতদিন থাকবে, এই চেতনাও ততদিন থাকবে। কেননা ইচ্ছে করলেই সব কিছু নিঃশেষ করা যায় না।
উপাচার্য বলেন, ১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর দেশকে পিছিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর দেশ আজ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, অর্থনীতি, শিক্ষা সবক্ষেত্রেই দেশের অগ্রগতি আশাব্যঞ্জক। নারী শিক্ষায় দেশের এগিয়ে যাওয়া, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনসহ এ দেশের সার্বিক উন্নতি আজ অনেকের কাছে ঈর্ষণীয়। কারণ, বাংলাদেশ এখন এই অঞ্চল তথা বিশ্বকে নেতৃত্ব দেওয়ার কথা ভাবছে। যার কারণে এ দেশকে ইমার্জিং টাইগারও বলা হচ্ছে।
তিনি বলেন, সময়ের সাথে আমাদের দেশের যে উন্নয়ন ঘটেছে এই ধারা আমাদের অব্যাহত রাখতে হবে। এজন্য বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সবাইকে নিজেদের মধ্যে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ভুলে সব ষড়যন্ত্রের ঊর্ধ্বে এসে একযোগে কাজ করতে হবে। ব্যক্তিগত স্বার্থের কথা না ভেবে দেশের উন্নতি ও অগ্রগতির কথা ভাবতে হবে। আমাদের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। দেশ-বিদেশের ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে গণতন্ত্র, সার্বভৌমত্ব ও উন্নয়নের এই ধারা ধরে রাখতে হবে। দেশের প্রতি যে দায়িত্ববোধ রয়েছে তা যথাযথভাবে পালন করতে হবে। তিনি আরও বলেন, শেখ রাসেল দেশের প্রতিটি শিশুর প্রতিচ্ছবি। আগামীর বাংলাদেশ যেন নিরাপদ হয়, যেখানে কোনো শিশু নির্যাতন হবে না, শিশু হত্যা হবে না- আমি এই প্রত্যাশা করি।
আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মোসাম্মাৎ হোসনে আরা এবং ট্রেজারার প্রফেসর অমিত রায় চৌধুরী। সভাপতিত্ব করেন দিবস উদযাপন কমিটির সভাপতি ও কলা ও মানবিক স্কুলের ডিন প্রফেসর ড. মো. রুবেল আনছার।
সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর খান গোলাম কুদ্দুস। আরও বক্তব্য রাখেন শিক্ষক সমিতির সহ-সভাপতি প্রফেসর ড. রামেশ্বর দেবনাথ, অফিসার্স কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক উপ-রেজিস্ট্রার দীপক চন্দ্র মন্ডল এবং সয়েল, ওয়াটার এন্ড এনভায়রনমেন্ট ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী গৌরব কুমার পাল। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রিন্টমেকিং ডিসিপ্লিনের প্রভাষক ফারজানা জামান। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্কুলের ডিন, ডিসিপ্লিন প্রধান, বিভাগীয় পরিচালকসহ শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে দিবসটি উপলক্ষ্যে সকাল ৯.১০টায় শহিদ তাজউদ্দীন আহমদ প্রশাসন ভবন থেকে উপাচার্যের নেতৃত্বে আনন্দ র্যালি বের হয়। র্যালি শেষে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল কালজয়ী মুজিব এর পাশে স্থাপিত শেখ রাসেল এর প্রতিকৃতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন। এসময় উপ-উপাচার্য, ট্রেজারার, বিভিন্ন স্কুলের ডিনবৃন্দ, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত), ডিসিপ্লিন প্রধানবৃন্দ, প্রভোস্টবৃন্দ, বিভাগীয় প্রধানবৃন্দসহ শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন। পরে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল ও শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকেও শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
এর পরপরই উপাচার্য ক্যাফেটেরিয়া সংলগ্ন স্থানে ছাতিয়ান বৃক্ষের চারা রোপণ করেন। দুপুর ১২.২০ মিনিটে চারুকলা প্রাঙ্গণে দেয়ালিকা ও চিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন উপাচার্য। বিকাল ৪.৩০ মিনিটে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় স্কুলের শিক্ষার্থীদের মাঝে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও শেখ রাসেল সম্পর্কিত বিভিন্ন পুস্তক বিতরণ করেন দিবস উদযাপন কমিটিরর সভাপতি। এছাড়া বাদ জোহর জামে মসজিদে দোয়া ও মন্দিরে প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়।
খুবিতে নানা আয়োজনে শেখ রাসেল দিবস উদযাপন
Leave a comment