
কাজী মোতাহার রহমান : একাত্তরের ন্যায় খুলনাবাসী দ্বিতীয়বারের মতো ঐক্যবদ্ধ হয় ১৯৮৫ সালে, বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার লক্ষে। বজ্রকঠিন ঐক্য। ছাত্র, শ্রমিক, শিক্ষক, আইনজীবী, সাংবাদিক ও রাজনীতিক রাজপথে। সবার কন্ঠে একই শ্লোগান “খুলনায় বিশ^বিদ্যালয় চাই”। শীর্ষ ভূমিকায় বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি। এ দাবিতে দক্ষিণ জনপদে দফায় দফায় হরতাল হয়েছে। জেলা নাগরিক অধিকার বাস্তবায়ন কমিটি জনমত গড়ে তোলার জন্য ব্যাতিক্রমধর্মী কর্মসূচি গ্রহণ করেন। বিভিন্ন শ্রেনী ও মানুষের দৃষ্টি পড়ে এ কর্মসূচির প্রতি। নাগরিক অধিকার বাস্তবায়ন কমিটি সভা সমাবেশের প্রতিবেদন প্রাধান্য দিয়ে দৈনিক জন্মভূমি ১৯৮৫ সালের ৮ অক্টোবর প্রতিবেদন প্রকাশ করে। মনে হলো প্রতিবেদন প্রকাশিত হবার পরে আন্দোলন আরও বেগবান হয়ে ওঠে। জন্মভূমি সম্পাদক হুমায়ূন কবীর বালু বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সম্পৃক্ত হওয়ার জন্য সহকর্মিদের প্রতি আহবান জানান।
১৯৮৫ সালের ০৮ অক্টোবর তথ্যমন্ত্রী শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন খুলনা সফরে এলে প্রেসক্লাবের সাংবাদিকদের সাথে বৈঠক করেন। এ বৈঠকের নেতৃত্ব দেন জন্মভূমি সম্পাদক হুমায়ূন কবীর বালু। ১৯৮৫-১৯৯০ পর্যন্ত এ আন্দোলনে সাংবাদিক সমাজ অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে তৎকালিন রাষ্ট্রপতি জেনারেল এরশাদের কাছে স্মারকলিপি প্রকাশ করেন।
বিশ^বিদ্যালয় বাস্তবায়নের জন্য ১৯৮৫ সালের ৭ নভেম্বর সাংবাদিক পরিষদের উদ্যোগে সুধি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
১৯৮৫ সালের ৯ অক্টোবর খুলনা প্রেসক্লাবে এক সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে সিদ্ধান্ত হয়, বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য খুলনাবাসীকে বজ্রকঠিন শপথ নিতে হবে। বিভিন্ন পথ ও মতের সংবাদকর্মি থাকলেও জন্মভূমি সম্পাদক হুমায়ূন কবীর বালু সবাইকে একমঞ্চে আনতে সক্ষম হন। মূলত তারই নেতৃত্বে সেদিন গড়ে ওঠে বিশ^বিদ্যালয় বাস্তবায়নে খুলনা সাংবাদিক পরিষদ। সর্বসম্মতিক্রমে আহবায়ক মনোনীত হন, দৈনিক বাংলার তৎকালীন খুলনার প্রতিনিধি ও আজকের দৈনিক জন্মভূমির প্রধান সম্পাদক মনিরুল হুদা, যুগ্ম আহবায়ক হলেন দৈনিক অনির্বাণ সম্পাদক অধ্যাপক আলী আহমদ ও জন্মভূমি সম্পাদক হুমায়ূন কবীর বালু। সাংবাদিকদের আন্দোলনের বার্তা সকল মহলে ছড়িয়ে পড়ে। ত্যাগ, শ্রম ও মেধা দিয়ে আন্দোলনকে এগিয়ে নেন প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মরহুম সাহাবুদ্দীন আহমেদ, দৈনিক পূর্বাঞ্চল সম্পাদক মরহুম লিয়াকত আলী, অধুনালুপ্ত জনবার্তা সম্পাদক মরহুম সৈয়দ সোহরাব আলি, জন্মভূমির বার্তা সম্পাদক মরহুম ওয়াদুদুর রহমান পান্না ও বাংলার বাণীর খুলনার প্রতিনিধি মকবুল হোসেন মিন্টু। তাদের পাশাপাশি তারুণ্যের উচ্ছ্বাস নিয়ে এগিয়ে আসেন শেখ দিদারুল আলম, শেখ আবু হাসান, মানিক চন্দ্র সাহা, সৈয়দ শফি আহমদ, একে হিরু, সানোয়ার পারভেজ, আবু কাজী প্রমুখ। ধারাবাহিকভাবে গড়ে ওঠে বিভিন্ন শ্রেনী ও পেশার মানুষের মধ্যে আন্দোলন। বিশ^বিদ্যালয়ের ন্যায়সংগত দাবি উল্লেখ করে খুলনার সাত দৈনিকের সম্পাদক জোরালো বিবৃতি দেন (দৈনিক জন্মভূমি, ১৯ ডিসেম্বর ১৯৮৫)। সম্পাদকবৃন্দ বিবৃতিতে বলেন, বৃহত্তর জনগোষ্ঠি এ দাবিকে রাষ্ট্রপতি অবিলম্বে মেনে নিবে বলে আমরা আশা করছি। সর্বোপরি বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সাংবাদিকদের ভূমিকার প্রশংসা করেন মটর শ্রমিক ইউনিয়ন, ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ, ছাত্র ঐক্য ও জেলা নাগরিক অধিকার বাস্তবায়ন কমিটি। বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিকে শেষাবধি ন্যায়সংগত বলে রাষ্ট্রপতি জেনারেল এরশাদ ১৯৮৯ সালের ৯ মার্চ ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এরমধ্যে দিয়ে খুলনাবাসির দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হয়। বিশেষ করে সাংবাদিক সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করে রাস্তায় নামানো এবং এ আন্দোলনের পক্ষে জনমত গঠনের জন্য গণ-মাধ্যমকে উদ্বুদ্ধ করতে মরহুম হুমায়ূন কবীর বালুর ভূমিকা নি:সন্দেহে প্রশংসনীয়।