শেখ আব্দুল হামিদ
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ সরকারি হাসপাতালের ১ হাজার ৭৪৫ জন চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী দু’বছরেও করোনা কালে প্রণোদনার অর্থ পায়নি। মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে কর্মরত চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী কাজ করলেও প্রণোদনার অর্থ এখন তাদের কাছে সোনাার হরিণ হয়ে দাাঁড়িয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ দু’বার তালিকা প্রেরণ করেন।
আবারও তৃতীয়বার তালিকা পাঠাবার নির্দেশ এলে ছয়মাস আগে তালিকা পাঠিয়ে দেন। এসময় খুলনা করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের ৫০০ জন চিকিৎসক, ১০০০ জন নার্স, অন্যান্য পদবীর কর্মকর্তা-কর্মচারী ২০০জনসহ প্রায় দু’হাজার স্বাস্থ্যসেবীর তালিকা প্রস্তুত করে পাঠান হয়। দফায় দফায় তালিকা পাঠিয়েও কোন কাজ হয়নি বলে সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ। এছাড়া খুলনা ২৫০ শয্যা হাসপাতালের ৪৩ জন চিকিৎসক ও নার্সের তালিকা পাঠান হয়।
খুমেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত ২০২০ সালে ৭ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সে করোনা রোগীদের চিকিৎসার সঙ্গে জড়িতদের প্রণোদনা দেয়ার ঘোষণা দেন। ঘোষণার দু’বছর পরও কেউ তা পাননি। করোনা মহামারিতে সম্মুখসারির যোদ্ধা বলা হয় চিকিৎসক, নার্সসহ অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের। প্রণোদনা ছিল দুই মাসের মূল বেতন। এ ছাড়া করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে কাজ করা চিকিৎসকদের ১৫ দিনের দৈনিক দুই হাজার টাকা ভাতাও ছিল। করোনা আক্রান্ত হলে চিকিৎসকদের জন্য পাঁচ থেকে ১০ লাখ টাকার স্বাস্থ্যবীমাও ছিল। মূল বেতনের যে প্রণোদনা দেওয়ার কথা সেটা এখন পর্যন্ত কেউ পায়নি বলে জানান করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করা চিকিৎসকরা।
খুমেক হাসপাতাল সূত্র আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার ভিত্তিতে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বাজেট শাখা থেকে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালকে বাজেট প্রেরণের জন্য বলা হয়। এরপর ২০২০ সালের ২ ডিসেম্বর অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সেবায় নিয়োজিত খুমেকের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নামের তালিকা পাঠায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আর খুলনার নার্সদের প্রণোদনার জন্য নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরে ২৭১ জন নার্সের একটি তালিকা পাঠায়।
ওই অধিদপ্তর থেকে নার্সদের তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর কথা ছিল। গত ২০২১ সালের ২৫ মার্চ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের বাজেট-১ শাখার পক্ষ থেকে দেশের ১৪টি হাসপাতালের জন্য ৯ কোটি ২০ লাখ ৯০ হাজার ৪৩০ টাকা বরাদ্দ দিয়ে চিঠি ইস্যু করা হয়।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জন্য বরাদ্দ প্রণোদনার তালিকা ঘেঁটে দেখা গেছে, হাসপাতালের প্রথম ধাপে সম্মানী পাওয়াদের নামের তালিকায় ১৫০ জন চিকিৎসকের নাম ছিল। এছাড়া ছিলেন ১৫ জন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব)। বাকিরা অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর, গুদামরক্ষক, গাড়িচালক, অফিস সহায়ক, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, কার্ডিওগ্রাফার, ওয়ার্ডমাস্টার, আয়াসহ বিভিন্ন পদের কর্মচারী।
এর মধ্যে অধ্যাপক পর্যায়ের চিকিৎসকদের মধ্যে দুই মাসের বিশেষ সম্মানী বাবদ ১ লাখ ৪৮ হাজার ৮০০ টাকা থেকে শুরু করে মেডিকেল অফিসার পর্যায়ের চিকিৎসকদের জন্য ৫০ হাজার ৯০০ টাকা পর্যন্ত বরাদ্দ রাখা হয়। এছাড়া মেডিকেল টেকনোলজিস্টসহ (ল্যাব) অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীর ক্ষেত্রেও ৯০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে সর্বনি¤œ ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত দেয়ার কথা হয়।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা: রবিউল হাসান দৈনিক জন্মভ‚মিকে বলেন, করোনাকালীন সময়ে মুত্যুর ঝুঁকি মাথায় নিয়ে যেসব চিকিৎসক, নার্সসহ অন্যান্যরা কাজ করেন, তাদের প্রায় শহ¯্র জনের নামের তালিকা আবার প্রেরণ করা হচ্ছে। ওই সময়ে বিভিন্ন ভাবে তারা অনেকেই সেবা দেন। যে কারণে তাদের সঠিক তালিকা তৈরীতেও সমস্যা হয়। ‘হাসপাতালের ৫০০জন চিকিৎসক, ১০০০ জন নার্সসহ আরও বিভিন্ন পর্যায়ের ২০০ জন স্বাস্থ্যকর্মীর জন্য আবারও তালিকা তৈরী হয়েছে। প্রণোদনার অর্থ এলে দ্রæত সবাইকে দেয়া হবে।
প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত