চলতি মাসে প্রস্তুত হচ্ছে ১০ বেড
শেখ আব্দুল হামিদ : গণপূর্ত বিভাগ ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট-(আইসিইউ) ভবন নির্মাণ করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দিলেও আজও চালু হয়নি। ২০১৯ সালের ৩ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুলনা সার্কিট হাউস মাঠে ফলক উন্মোচনের মধ্য দিয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউ ভবনের উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের পর প্রায় তিন বছর অতিবাহিত হলেও যন্ত্রপাতি এবং জনবল নিয়োগের অভাবে আজও চালু করা যায়নি গুরুত্বপূর্ণ এ বিভাগটি। একাধিকবার মন্ত্রণালয়ে চিঠি চালচালি করেন কর্তৃপক্ষ।
খুমেক হাসপাতাল সূত্র জানায়, ২০১০ সালে হাসপাতাল প্রাঙ্গণে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট বা নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়। বিভিন্ন জটিলতার কারণে ৮ বছর পর নির্মাণ কাজ শেষ হয়। সচেতন মহল বলছে, এতদূর এসে শুধুমাত্র যন্ত্রপাতি ও জনবল এর কারণে খুলনাবাসীর দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি আইসিইউ বিভাগ বন্ধ থাকতে পারে না।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আলাদা কোন আইসিইউ বিভাগ নেই। হাসপাতালের ৩য় তলায় পোস্ট অপারেটিভ ইউনিটের চারটি বেড আইসিইউ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এ সমস্যা নিরসনে সাড়ে ১১ কোটি টাকা ব্যয়ে খুমেক হাসপাতালের পূর্বপার্শ্ব ও নার্সিং ইনস্টিটিউটের মাঝে নির্মাণ করা হয়েছে স্বতন্ত্র আইসিইউ ভবন।
দ্বিতল বিশিষ্ট এ ভবনের দ্বিতীয় তলায় রয়েছে ৪টি কেবিন, ১০টি আইসিইউ, ১৬টি পোস্ট অপারেটিভ বেডসহ ৩১ শয্যা বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ আইসিইউ সেবা ব্যবস্থা। আর নীচ তলায় রয়েছে অতি জরুরি সার্জারি রোগীদের সেবা দেয়ার জন্য ইমার্জেন্সি সার্জারি ইউনিট। প্রধানমন্ত্রীর খুলনা সফরকালে ৯৫ শতাংশ কাজ বাকি রেখেই উদ্বোধন করা হয় এই আইসিইউ ভবনটি।
জনবল নিয়োগের জন্য ২০ জন ডাক্তারসহ ১৪৪ জনের একটি চাহিদাপত্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। বছরের পর বছর পার হলেও অদ্যাবধি পূর্ণাঙ্গ জনবল নিয়োগ দেয়া হয়নি। এছাড়া চিকিৎসা সহায়ক সামগ্রীর চাহিদা পাঠিয়ে বার বার যোগাযোগ করা হলেও মন্ত্রণালয় থেকে কোন সুখবর মেলেনি।
এদিকে, আইসিইউ’র মতো জরুরি সেবা থেকে বঞ্চিত হওয়ায় ক্ষুব্ধ রোগী ও স্বজনেরা। ৫০০ শয্যার এই হাসপাতালটিতে প্রতিদিন গড়ে ভর্তি থাকেন এক থেকে দেড় হাজার রোগী। এছাড়া জরুরি বিভাগ ও বহির্বিভাগে প্রতিদিন চিকিৎসা নেন আরো প্রায় দেড় থেকে দুহাজার রোগী। ফলে খুলনায় ব্রেন-স্ট্রোক, হার্ট-স্ট্রোকের মুমূর্ষু রোগীদের এখনও উচ্চমূল্যে বেসরকারি হাসপাতালেই যেতে হয়। রোগীদের জরুরি প্রয়োজনে আইসিইউ সেবা না পাওয়ায় হতাশ ও ক্ষুব্ধ নগরবাসী।
এদিকে, চিকিৎসকরা বলছেন, শুধু প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও চিকিৎসক হলেই চলবে না, সেই সাথে প্রয়োজন প্রশিক্ষণও। চিকিৎসা সংশ্লিষ্টরা জানান, খুলনা বিভাগের প্রায় ২৫ লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আলাদা আইসিইউ নেই। এ কথা ভাবাই যায়না।
বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজ-জামান দ্রুত মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগ চালুর দাবি জানান। তিনি বলেন, সরকারি এই হাসপাতালের আইসিইউ চালুর জন্য জনবল ও যন্ত্রপাতি বরাদ্দ দেওয়া প্রয়োজন। যাতে সঙ্কটময় মুহূর্তে খুলনার নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের রোগীরা স্বল্প খরচে এই চিকিৎসা সেবা নিতে পারে।
খুলনা জেলা স্বাস্থ্যসেবা গ্রহীতা ফোরামের সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. মোমিনুল ইসলাম বলেন, আইসিইউ ভবন নির্মাণের পরও তা ফেলে রাখার বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। এভাবে দীর্ঘদিন ভবনটি পরিত্যক্ত থাকলে আবার সংস্কার করার প্রয়োজন দেখা দিতে পারে।
হাসপাতালের পরিচালক ডা. রবিউল হাসান দৈনিক জন্মভূমিকে বলেন, মুমূর্ষু রোগীদের চিকিৎসার জন্য আইসিইউ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু মন্ত্রণালয়ে জনবল ও যন্ত্রপাতি চেয়ে একাধিকবার চিঠি দেয়া হলেও এত দিন কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। তিনি জানান, ইতোমধ্যে একটা ইউনিট প্রস্তুত হয়েছে। চলতি মাসে ১৫ তারিখের মধ্যে আরও ১০ বেড প্রস্তুত হলে মোট ২০ বেড চালু করা সম্ভব হবে। রোগীদের সুুষ্ঠু সেবা নিশ্চিত করার স্বার্থেই দ্রুত জনবল নিয়োগ ও যন্ত্রপাতি বরাদ্দ দিয়ে আইসিইউ চালু করা প্রয়োজন।