মোঃ এজাজ আলী : খুলনার অধিকাংশ ডিপোতে চলছে বাগদা ও গলদা চিংড়ির দেহে অপদ্রব্য পুশ। সম্প্রতি সক্রিয় হয়ে উঠেছে পুশচক্র। জেল-জরিমানা করলেও থেমে নেই চিংড়ির দেহে অপদ্রব্য পুশ। মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ দপ্তর এবং খুলনা জেলা মৎস্য দপ্তর পৃথক পৃথক অভিযান পরিচালনা করলেও কোনোভাবে নির্মূল হচ্ছে না পুশ। দিন দিন বেড়ে চলেছে পুশের মাত্রা। অন্যতম অর্থনৈতিক খাত হুমকির মুখে ধাবিত হচ্ছে শিল্পটি। কোম্পানি কর্তৃপক্ষ হারাচ্ছে বর্হিবিশে^র বাজার। হোয়াইট গোল্ড নামে খ্যাত চিংড়ির দেহে দেদারছে অপদ্রব্য পুশ চললেও স্থানীয় প্রশাসনের নেই তেমন কোনো পদক্ষেপ। প্রত্যন্ত অঞ্চলে মৎস্য চাষিদের কাছ থেকে চিংড়ি সংগ্রহ করে ডিপো ব্যবসায়ী বহাল তবিয়তে চিংড়ির দেহে চালিয়ে যাচ্ছে পুশ। এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে প্রশাসনের পুশ বিরোধী অভিযান বেশি করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন সচেতন মহল। মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ দপ্তর খুলনা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৬৪টি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। অভিযানে ১৪ লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। বাগদা ও গলদা চিংড়ি বিনষ্ট করা হয়েছে ৪ হাজার ৪২০ কেজি। তবে ভ্রাম্যমাণ আদালত বিভিন্ন সময়ে মাছের ডিপো, ফড়িয়া ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীকে আর্থিক জরিমানা করলেও থেমে নেই পুশচক্র। খুলনা জেলা মৎস্য অধিদপ্তর মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ আইন-২০২০ অনুসারে বিভিন্ন সময়ে ৮৩টি অভিযান পরিচালনা করেছে। এর মধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত চালানো হয়েছে ১৪টি। ভ্রাম্যমাণ আদালতে চিংড়ি বিনষ্ট করা হয়েছে ৩ হাজার ৯০০ কেজি। জরিমানা করা হয়েছে ২ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। আইনের আওতায় আনা হয়েছে (জেল) ১২ জনকে। মামলা দেওয়া হয়েছে ১৭টি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খুলনার নতুন বাজার, রূপসা, ডুমুরিয়া, ফুলতলা, কয়রা, উপজেলায় দেড় হাজারের বেশি মৎস্য ডিপো রয়েছে। রূপসার শিয়ালী বাজার, ফুলতলার জামিরা বাজারসহ বিভিন্ন বাজার এলাকায় দেদারছে চালিয়ে যাচ্ছে চিংড়ি দেহে পুশ। অধিকাংশ ডিপোতে গলাদা ও বাগদার দেহে সিরিঞ্জের মাধ্যমে জেলি, ভাতের মাড়, সাগু, এরারুট, মার্বেল কুচি, সিসার গুলি, পানি ও ম্যাজিক বলসহ বিভিন্ন পদার্থ। এতে শিল্পটি একদিকে যেমন হুমকিতে অন্যদিকে মানবদেহের জন্য হচ্ছে ক্ষতিকর কারণ। ডিপো মালিকদের ভাষ্য, খুলনার বিভিন্ন মাছ কোম্পানি কর্তৃপক্ষের চরম অনিয়মের কারণে ডিপো মালিকদের লোকসানের ঘানি টানতে হয়। বিভিন্ন মৌসুমে বাগদা ও গলদা চিংড়ি কোম্পানিতে বিক্রি করলেও সঠিক সময়ে পাচ্ছে না চিংড়ি বিক্রির টাকা। ফলে অনেক ডিপো মালিক দেউলিয়া হয়ে এ ব্যবসা ছেড়ে অন্য্য পেশা বেছে নিয়েছে। চিংড়ি ব্যবসায়িরা বলেন, চিংড়ি চাষিরা খামার বা ঘের থেকে মাছ ধরে ডিপোতে বিক্রি করেন। ডিপো মালিকরা বাজারমূল্যে সেগুলো কিনে নেন। চাষিদের কাছ থেকে কেজিপ্রতি প্রায় ১০০ গ্রাম করে বেশি নেন ডিপো মালিকরা। চাষিরা কখনো বাকিতে চিংড়ি বিক্রি করে না। ডিপো মালিকরা সেগুলো আবার প্রসেসিং করে অথবা সাধারণ অবস্থায় চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা মালিক বা কোম্পানিতে বিক্রি করেন। ডিপো মালিকরা এসব চিংড়ি কোম্পানির কাছে অধিকাংশ সময়ে বাকিতেই বিক্রি করেন। কোম্পানির কাছে বছরের পর বছর মোটা অঙ্কের টাকা ফেলে রাখতে বাধ্য হন ডিপো মালিকরা। বাকি ও বকেয়ার হিসাব থাকায় ডিপো মালিকরা ছাড়তে পারছে না চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খুলনায় আছিয়া সী ফুডস, ছবি ফিস, এটলাস সী ফুডস, রূপসায় ফ্রেশ সী ফুডস লিমিটেড, সাউদার্ন সী ফুডস লিমিটেড, সেন্ট মার্টিন সী ফুডস লিমিটেড, রূপালী সী ফুডস লিমিটেড, ব্রাইট সী ফুডস লিমিটেড, জাহানাবাদ সী ফুডস লিমিটেড, ন্যাশনাল সী ফুডস লিমিটেড, ফ্রোজেন সী ফুডস, সালাম সী ফুডস লিমিটেড, ইন্টারন্যাশনাল সী ফুডস লিমিটেড, রোজেমকো ফুডস লিমিটেড, নিউ সী ফুডস লিমিটেড, এ্যাপোলো সী ফুডস লিমিটেড, জেমিনি সী ফুডস চলমান রয়েছে। তবে এর মধ্যে ফ্রেশ সী ফুডস, সাউদার্ন সী ফুডস, ন্যাশনাল সী ফুডস, সালাম সী ফুডস, ইন্টার ন্যাশনাল সী ফুডস, রোজেমকো ফুডস-এ দেদারছে পুশকরা চিংড়ি রিসিভ করা হচ্ছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল বলেন, পুশ বিরোধী অভিযান অব্যাহত আছে। চিংড়ি শিল্পকে আমাদের টিকিয়ে রাখতে সকলের সহযোগিতার প্রয়োজন। মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ দপ্তর খুলনা উপ-পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে আমাদের চিংড়ির দেহে অপদ্রব্য পুশ বিরোধী অভিযান অব্যাহত আছে। অভিযোগ পেলে সেখানে অভিযান পরিচালনা করা হবে। পুশ করা চিংড়িসহ ধরা পড়লে তাকে জরিমানার পাশাপাশি আইনের আওতায় আনা হবে।