অভিজিৎ পাল
খুলনায় ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের প্রথমধাপে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীদের নিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা। গত শনিবার মনোনয়ন প্রাপ্তদের নামের তালিকা প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন ইউনিয়নে বিক্ষোভ করছেন নেতা কর্মীরা। অপরদিকে দলীয়ভাবে নির্বাচনে না আসলেও বিএনপি ও জামায়াতের প্রার্থীরা স্বতন্ত্র পদে নির্বাচন করবেন অনেকেই।
খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার যোগীপোল ইউনিয়নের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন আনিচুর রহমান। বিগত নির্বাচনে তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হলেও অনিয়মের অভিযোগে তার পদ শূন্য করে মন্ত্রণালয় কিছুদিন আগে। তিনিই মনোনয়ন পাওয়ায় শনিবার রাত থেকে প্রতিপক্ষ যুব লীগ নেতা সাজ্জাদুর রহমান লিংকনের সমর্থকরা খুলনা-যশোর মহাসড়ক অবরোধসহ বিক্ষোভ করে আসছে নেতা কর্মীরা। অপরদিকে জেলার সর্ব দক্ষিণে কয়রা উপজেলায় আওয়ামী লীগের দলীয় বর্তমান ৪ জন চেয়ারম্যান দলীয় প্রতীক না পাওয়ায় সেখানেও বিক্ষোভ চলছে এবং ওই চারজনই স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করবেন বলে জানা গেছে।
যোগীপোল ইউনিয়ন মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুন্নি বেগম বলেন, গত কয়েকদিন আগে আওয়ামী লীগের সভায় আমাদের কাউন্সিলরদের ডাকা হলেও তাদের মতামত নেয়নি সিনিয়র নেতৃবৃন্দরা। তারা যারাই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চেয়েছেন তাদের নাম পাঠিয়েছেন। যাকে দুর্নীতির অভিযোগে বহিষ্কার করেছে মন্ত্রণালয়, তিনি কিভাবে আবার সেই পদে নির্বাচন করবেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে।
এ সময় খানজাহান আলী থানা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমরা আওয়ামী লীগ করি সুনামের সাথে। সেখানে দুর্নীতিপরায়ন একজন ব্যক্তিকে কিভাবে মনোনয়ন দেয় কেন্দ্র। আমরা তার মনোনয়ন প্রত্যাহার করে ত্যাগী ও যোগ্য নেতৃত্বদের মনোনয়ন দেওয়ার আহŸান জানাই।
এ ব্যাপারে আনিচুর রহমানের মোবাইল ফোনে বার বার যোগাযোগ করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।
অপরদিকে কয়রার ৪নং মহারাজপুর ইউনিয়নে মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ। কিন্তু ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খায়রুল আলম বলছেন, মনোনয়নপ্রাপ্ত ব্যক্তি এলাকায় জনবিচ্ছিন্ন। তার আপন ভাই এই ইউনিয়নে বিএনপির মনোনয়ন ও প্রতীক নিয়ে বিগত দিনে নির্বাচন করেছেন এবং চেয়ারম্যানও ছিলেন। আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বিগত উপজেলা নির্বাচনে নৌকার প্রতীকের বিপক্ষে কাজ করেছেন এবং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তার ভাইয়ের সাথে কাজ করেছেন। কেন্দ্রে প্রার্থী তালিকা প্রেরণের ক্ষেত্রে তৃণমূলের মতামত নেওয়া হয়নি বলছেন নেতা-কর্মীরা।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে মনোনয়নপ্রাপ্ত আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বলছেন, স্থানীয় রাজনীতির গ্রæপিং এর কারণে তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার হচ্ছে।
অপরদিকে নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াত জোট অংশগ্রহণ করার কথা না বললেও তাদের প্রার্থীরা স্বতন্ত্র নির্বাচন করবেন অনেকেই। পাইকগাছার সোলাদানা ইউনিয়নের বিএনপি মনোনীত চেয়ারম্যান এনামুল হক বলেন, আমি বিগত কয়েক নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে এখানে লড়েছি এবং আমার নেতা কর্মীরা ও জনগণ আমাদের ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করেছে। দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও আমি করব, কারণ আমি আমার জনগণের পাশে থাকব। তাদের ছেড়ে আমি কোথাও যাব না।
এছাড়াও বটিয়াঘাটার ০৯নং আমিরপুর ইউনিয়নে বিএনপি মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী এমডি খায়রুল ইসলাম খান জনি বলেন, দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচনের ব্যাপারে আমরা এখনও চিন্তা-ভাবনা করছি।
কয়রার বাগালী, মহারাজপুর, মহেশ^রপুরী ইউনিয়নসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে বিএনপি ও জামায়াতের নেতারা স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করবে বলে শোনা যাচ্ছে। ইতিমধ্যে অনেকেই মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন।
১১ এপ্রিল প্রথম ধাপে খুলনায় ৩১টি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ২৬টি ইউনিয়নে প্রার্থী ঘোষণা দিয়েছে। বিএনপি ও জামায়াত জোটগতভাবে প্রার্থী ঘোষণা না দিলেও তাদের নেতা কর্মীরা স্বতন্ত্র নির্বাচন করবেন।
\ কয়রায় দিনভর প্রতিবাদ সমাবেশ এবং মানববন্ধন
আমাদের কয়রা খুলনার কয়রায় জামাত ও বিএনপি নেতার ভাইকে নৌকা প্রতীক দেওয়ায় মহারাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের সামনে মানববন্ধনসহ বিক্ষোভ মিছিল এবং রাস্তা অবরোধ করে সমাবেশ করেছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ। বিক্ষোভকারীরা রোববার সকাল থেকে দুপুর ১ টা পর্যন্ত কয়রা খুলনা সড়ক অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে জামাত কেন নৌকা পেল এ ধরনের শ্লোগান দিতে থাকে। উক্ত প্রতিবাদ সমাবেশে সহ¯্রাধিক নারী পুরুষ অংশ নেয় এবং এসময় তারা দাবি করেন জামাত ও বিএনপি নেতার ভাইয়ের কাছ থেকে নৌকা প্রতীক প্রত্যাহার করতে হবে। এছাড়া মানব বন্ধন ও সমাবেশ থেকে স্থানীয় ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানান, বর্তমান নৌকা প্রতিকের চেয়ারম্যান, সাবেক উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক, বর্তমান যুবলীগ নেতা এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহসিন রেজার ছোট ভাই আব্দুল্লাহ আল মামুন লাভলুকে নৌকা প্রতীক না দেওয়ায় এই প্রতিবাদ সমাবেশ। অথচ জামাতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা ও অর্থদাতা অধ্যাপক মোফাজ্জেল হোসেন এবং অপর ভাই কয়রা উপজেলা বিএপির যুগ্ম আহবায়ক ও খুলনা জেলা বিএনপির সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক মনিরুজ্জামান বেল্টুর ছোট ভাই আব্দুল্লাহ আল মাহমুদকে নৌকা প্রতীক দেওয়া হয়েছে। এদিকে সকাল ৮ থেকে মহারাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের সামনে মানববন্ধন শেষে সমাবেশ করেন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা। কিন্তু বেলা ১১ টার পর নেতাকর্মীদের চাপ বেড়ে যাওয়ায় সমাবেশ থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয় এবং প্রায় দেড় কিলোমিটার রাস্তা অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে দিয়ে রাস্তার উপর শুয়ে পড়ে বিক্ষোভকারীরা। বেলা ১ টায় সমাবেশ থেকে মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী রুমা আক্তার সমাবেশ থেকে ঘোষণা করেন জামাত ও বিএনপি নেতার ভাই মাহমুদের কাছ থেকে বঙ্গবন্ধুর নৌকা প্রতীক প্রত্যাহার না হয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন অব্যহত থাকবে। এছাড়া মহারাজপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীীগের সাধারণ সম্পাদক খায়রুল আলম সমাবেশ থেকে ঘোষণা দেন এই মহুর্তে জামাত ও বিএনপির কাছ থেকে নৌকা প্রতীক প্রত্যাহার না হলে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে ভোট বর্জনসহ বড় ধরনের কর্মসুচি দেব।
\ ফুলবাড়িগেটে সড়ক অবরোধ ও মানববন্ধন \
আমাদের ফুলবাড়িগেট প্রতিনিধি জানান, দিঘলিয়া উপজেলার যোগীপোল ইউনিয়নের চেয়ারম্যানপদে আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী যুবলীগ নেতা সাজ্জাদুর রহমান লিংকনকে দলীয় মনোনয়ন না দিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে বহিস্কৃত সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও খানজাহান আলী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আনিসুর রহমানকে দলীয় মনোনয়ন দেয়ায় ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেছে যুবলীগ নেতা লিংকনের সমর্থকরা। রোববার সকাল ৮টা থেকে ফুলবাড়ীগেট খুলনা যশোর মহাসড়ক অবরোধ করে দিনব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। এ নিয়ে এলাকায় টান টান উত্তেজনা বিরাজ করে। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। মানববন্ধন চলাকালে বক্তৃতা করেন আবুল হোসেন হাওলাদার, আবু হেনা বাবলু, মিজানুর রহমান রুপম, মাসুম খন্দকার, রুমা খন্দকার মুন্নি, অম্বিকা রাণী মন্ডলসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। নেতৃবৃন্দ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট জোর দাবি জানিয়েছেন যোগীপোল ইউনিয়নের দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থী মো: সাজ্জাদুর রহমান লিংকনকে দেয়ার। এ দিকে শনিবার রাত সাড়ে ১০টা থেকে রাত আড়াইটা পর্যন্ত ৪ ঘন্টা খুলনা-যশোর মহাসড়ক অবরোধ করে মুহুর মুহুর বিক্ষোভ মিছিল করে। এসময় সকল প্রকার যানচলাচলসহ ফুলবাড়ীগেটের সকল দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়।