
প্রায় ৬৪ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ
জন্মভূমি রিপোর্ট : বাগেরহাট সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক শেখ মনিরুল হাসান (৫৫) ও তার স্ত্রী শারমিন আক্তারের (৪৯) বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। জ্ঞাত আয় বহির্ভূত প্রায় ৬৪ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের দায়ে বৃহস্পতিবার দুদক, সজেকা, খুলনা (মহানগর) কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মাহমুদুল হাসান শুভ্র বাদী হয়ে মামলা দুটি দায়ের করেন।
তবে মামলা দুটিতেই খাদ্য কর্মকর্তা শেখ মনিরুল হাসান আসামি হলেও একটি মামলায় তার স্ত্রী শারমিন আক্তারকে আসামি করা হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে দুটি মামলায় ৬৩ লাখ ৮৮ হাজার ৪৬৯ টাকা মূল্যের অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেন বাদী দুদক খুলনার সহকারী পরিচালক মাহমুদুল হাসান শুভ্র।
খাদ্য কর্মকর্তা শেখ মনিরুল হাসান খুলনা মহানগরীর বেনী বাবু রোড এলাকার বাসিন্দা। এর আগে তিনি খুলনা মহানগরীর মহেশ্বরপাশা খাদ্য গুদামের (সিএসডি) সহকারী ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়, দুদক খাদ্য কর্মকর্তা শেখ মনিরুল হাসানের সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করে ২০১৮ সালে। আর ২০১৯ সালে সম্পদ বিবরণী জারি করে। তার দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণী অনুসন্ধানকালে শেখ মনিরুল হাসান কর্তৃক মোট ৫০ লাখ ৮৩ হাজার ৭০৯ টাকার সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পাওয়া যায়। উক্ত সময়ে তার পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয়ের পরিমাণ ৪৮ লাখ ৬৩ হাজার ৪৩০ টাকা। শেখ মনিরুল হাসান জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ১৯ লাখ ৭৬ হাজার ৬৩৭ টাকার সম্পদের মালিকানা অর্জন ও ভোগদখলে রেখে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭ (১) ধারা এবং ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। এ অপরাধে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।
অপর মামলাটি করা হয় শেখ মনিরুল হাসান এবং তার স্ত্রী শারমিন আক্তারের বিরুদ্ধে। এ মামলায় তাদের দাখিলকৃত সম্পদ অনুসন্ধানকালে তার স্ত্রী শারমিন আক্তার কর্তৃক ৮৩ লাখ ৯০ হাজার টাকার স্থাবর ও ৩৪ লাখ ৭৮ হাজার ১০৭ টাকার অস্থাবরসহ ১ কোটি ১৮ লাখ ৬৮ হাজার ১০৭ টাকার সম্পদ সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পাওয়া যায়। এর মধ্যে স্ত্রীর ব্র্যাক ব্যাংকের ঋণ, দোকান ভাড়ার জামানত গ্রহণ ও বরফকল ভাড়ার জামানত বাবদ ১৬ লাখ ৬৬ হাজার ৯৩ টাকার দায়-দেনা রয়েছে। দায়-দেনা বাদে তার নিট সম্পদের পরিমাণ ১ কোটি ২ লাখ ২ হাজার ১৪ টাকা। উক্ত সম্পদের বিপরীতে তার গ্রহণযোগ্য আয়ের পরিমাণ ৬৬ লাখ ৮৪ হাজার ৫১৪ টাকা। উক্ত সময়ে তার পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয়ের পরিমাণ ৮ লাখ ৯৪ হাজার ৩৩২ টাকা। ব্যয় বাদে তার নিট আয়/সঞ্চয় ৫৭ লাখ ৯০ হাজার ১৮২ টাকা। অর্থাৎ খাদ্য কর্মকর্তা মনিরুলের স্ত্রী শারমিন আক্তার জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ৪৪ লাখ ১১ হাজার ৮৩২ টাকার সম্পদের মালিকানা অর্জন ও ভোগদখলে রেখে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭ (১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। আর আসামি শেখ মনিরুল হাসান দায়িত্বশীল সরকারি পদে কর্মরত থেকে অবৈধ পন্থায় অর্থ উপার্জন করে তার স্ত্রী আসামি শারমিন আক্তারের নামে অর্জন দেখিয়ে উক্ত জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করে দণ্ডবিধির ১০৯ ধারা এবং ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন বলেও এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
বাদি দুদক খুলনার সহকারী পরিচালক মাহমুদুল হাসান শুভ্র বলেন, দুদক প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশে অনুসন্ধানের পর মামলা দায়ের করা হয়েছে। এখন কর্তৃপক্ষ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগের পর তিনিই আসামিদের গ্রেফতারসহ পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। #