
জন্মভূমি রিপোর্ট : নগরীর লবনচরা ও খুলনা সদর থানা এবং রূপসা উজেলা এলাকায় গত দুই দিনে তিন জন খুন হয়েছেন। একজন জখম হয়েছেন। এসব ঘটনার মধ্যে একটিতে মামলা হয়েছে, তবে কেউ গ্রেফতার হয়নি।
লবনচরা থানার শিপইয়ার্ড মেইন গেট সংলগ্ন একটি তিন তলা বাড়ীর পেছনের পশ্চিম পাশের রাস্তায় শুক্রবার ভোর রাতে আনুমানিক ৩৫ বছর বয়সী এক যুবকের লাশ পড়ে ছিল। মরদেহের বিভিন্ন স্থানে জখমের চিহ্ন ছিল। হাত এবং পা নীল ও হলুদ রঙের কাপড় দিয়ে বাধা ছিল। মাথাসহ মুখমণ্ডল পলিথিনের ব্যাগ দিয়ে মোড়ানো ছিল। ভোর চার টার দিকে ওই এলাকার এক ব্যক্তি কুকুরের ডাকে ঘুম থেকে জেগে উঠেন এবং বাইরে বেরিয়ে লাশটি দেখতে পান। তখন তিনি অন্যদের জানান এবং থানা-পুলিশকে খবর দেন। কেএমপি’র বিশেষ শাখার এক কর্মকর্তা দৈনিক জন্মভূমিকে এ তথ্য জানান।
লবনচরা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ তৌহিদুজ্জামান বলেন, মরদেহের চোঁথের কোনায় ও মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। আততায়ীরা তার মৃত্যু নিশ্চিত করতে পলিথিনের ব্যাগ ব্যবহার করে শ^াস রোধ করেছিল বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। খবর পেয়ে থানা পুলিশের পাশাপাশি পিবিআই এবং সিআইডির দুইটি টিম ঘটনাস্থলে পৌছায়। নিহতের জিন্সের প্যান্টের নিচে একটি ট্রাউজার পরা ছিল। গায়ে ছিল জলপাই রঙের গেঞ্জি। সিআইডি ও পিবিআই সদস্যরা লাশের নাম-পরিচয় শনাক্তের জন্য আঙ্গুলের ছাপ সংগ্রহ করেছেন। যদিও রাত ৮ টা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ভিকটিমের পরিচয় জানা সম্ভব হয়নি। মরদেহ ময়না তদন্তের অপেক্ষায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।
বৃহস্পতিবার রাতে রূপসা উপজেলার শ্রীফলতলা ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামে আবদার শেখ (৪৫) নামে এক ব্যক্তিকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। স্ত্রীর সাথে অনৈতিক সম্পর্কে লিপ্ত থাকতে দেখে তার স্বামী মনির শেখ এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তিনি তার স্ত্রী তানজিলাকেও কুপয়ে জখম করেছেন। আহত গৃহবধূ এখন খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভবানীপুর পুটিমারী বিলের মধ্যে মনির শেখ সপরিবারে বসত করেন। মনির কিডনি ও লিভারের রোগে আক্রান্ত। স্বামীর অসুস্থতার সুযোগে স্ত্রী তানজিলা একই এলাকার বাসিন্দা আবদার নামে একজনের সাথে পরকীয়া সম্পর্কে জড়ান। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০ টার দিকে মনির বাড়ী ফিরে তার স্ত্রীকে পরকীয়া প্রেমিকের সাথে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখে এ খুন-জখম ঘটান। হত্যাকাণ্ডের পর তিনি আবদারের লাশ বস্তাবন্দী করে বাথরুমের পাশে একটি গর্তে ফেলে রাখেন। পরবর্তীতে আশ-পাশের লোকজন গুরুতর জখম তানজিলাকে উদ্ধার করে খুমেক হাসপাতালে নিয়ে যান।
রূপসা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহফুজুর রহমান বলেন, খবর পয়ে তাৎক্ষনিকভাবে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে এবং ময়না তদন্তের জন্য খুমেক হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। হত্যা ও জখমে ব্যবহৃত আলামত রক্তমাখা দাটি উদ্ধার করা হয়েছে। ময়না তদন্ত শেষে লাশ নিহতের পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। একই সাথে অভিযুক্ত মনির শেখকে গ্রেফতারের জন্য অভিযান চলছে।
এদিকে, কেএমপি’র খুলনা সদর থানাধীন পশ্চিম টুটপাড়া এলাকার কবি নজরুল সড়ক সংলগ্ন দারোগার বস্তিতে জনৈক ফেরদৌসী বেগম পলির বাড়ীতে নিলু বেগম (৬৫) নামে এক দুস্থ বৃদ্ধাকে আততায়ীরা ধাঁরালো অস্ত্রাঘাতে খুন করেছে। নিহত নারী স্থানীয়দের কাছ থেকে সাহায্য চেয়ে জীবন চালাতেন, এর আড়ালে তিনি সুদের কারবার পরিচালনা করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বৃহস্পতিবার ভোররাত ১২ টা থেকে দুপুর দু’টার মধ্যে যে কোনো সময় এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
সূত্রমতে, নিহত নিলু বরগুনা জেলার বেতাগী থানার কাজীরাবাদ গ্রামের বাসিন্দা। তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ ওই পরিত্যাক্ত বাড়ীর একটি কক্ষে থাকতেন। কখনও ভাড়া দিতেন, কখনও দিতেননা।
এদিকে, কেএমপি’র বিশেষ শাখার এক কর্মকর্তা বলেছেন, ঘাতকেরা ঘরের পেছনের পশ্চিম দিকের জরাজীর্ন বাথরুমের দেয়ালের ইট খুলে ভেতরে প্রবেশ করে এবং ওই নারীকে হত্যা করে। এরপর দুষ্কৃতিকারীরা তার ঘরের মিটসেপ ও টিনের ট্রাঙ্ক ভেঙ্গে তল্লাশি করে এবং বাইরে থেকে তালাবন্ধ করে রেখে যায়। ঘরে নিহতের কাপড়-চোপড় ছড়ানো-ছিটানো ছিল।
স্থানীয়দের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি জানান, যেহেতু ভিকটিম সুদ ব্যবসা করতেন, তার ঘরে মোটা অংকের টাকা রয়েছে- এ ধারণা থেকেই দুষ্কৃতিকারীরা ওই বাসায় চুরি এবং হত্যাকাণ্ড সংঘটিতকরেছে বলে অনুমিত হচ্ছে।
খুলনা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হাওলাদার সানওয়ার হুসাইন মাসুম বলেন, ময়না তদন্ত শেষে মরদেহ শুক্রবার দুপুরে নিহতের ভাইয়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় তিনি অনধিকার প্রবেশ, চুরি ও হত্যার অভিযোগে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে কেউ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক কিংবা গ্রেফতার হয়নি।