
মোঃ এজাজ আলী : খুলনায় কৃষিতে নতুন দিগন্তের দ্বার উন্মোচন করেছে পারিবারিক পুষ্টি বাগান। প্রথমে পুষ্টির চাহিদা মেটাতে করা হয়েছে। আবার বাড়তি ফসল বিক্রি করে আয়ও হচ্ছে। খুলনায় কৃষি জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত ও পরিবারের নিরাপদ খাদ্যের চাহিদা পূরণে গড়ে তোলা হচ্ছে এ বাগান। কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তরের সহযোগিতায় ’অনাবাদি পতিত জমি ও বসত বাড়ির আঙ্গিনায় পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন প্রকল্পের আওতায় খুলনা জেলার নয় উপজেলায় দু’টি ধাপে তৈরি করা হয়েছে পাঁচ শতাধিক বাগান। ইতোমধ্যে কালিকাপুর মডেলের এসব বাগান থেকে শাক সব্জি আহরন করেছেন চাষিরা। উৎপাদিত সব্জি দিয়ে তারা নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বিক্রি করে আয়ও করছেন। খুলনা
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, প্রতিটি উপজেলায় বাছাইকৃত তালিকাভুক্ত পরিবার থেকে স্বামী-স্ত্রী দুজনকে প্রথমে দু’দিনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। পরে বসতবাড়ির আঙ্গিনায় দেড় শতাধিক জমিতে নান্দনিক বেড়া দিয়ে কানিকাপুর মডেলে পুষ্টি বাগানের প্রর্দশনী স্থাপন করা হয়। বাগানের মডেল এমনভাবে স্থ্াপন করা হয়েছে, যেন একজন কৃষক সারা বছরই এখান থেকে কিছু না কিছু ফসল পান। কখনো সব্জি থাকবে, আবার কখনো থাকবে ফল। বীজ, সার, চারাসহ যাবতীয় ব্যয় সরকারের তরফ থেকে বহন করা হচ্ছে। কৃষাণ-কৃষাণী শুধুমাত্র পরিচর্যার দায়িত্ব পালন করছেন।
কৃষি বিভাগ সূত্র আরো জানায়, পর্যায়ক্রমে জেলার প্রতিটি ইউনিয়নে ১০০টি পুষ্টি বাগান স্থাপন করা হবে। বর্তমানে দুটি ধাপে পাঁচ শতাধিক বাগান তৈরি করা হয়েছে। প্রতিটি বাগানে উত্তর-দক্ষিণ বরাবর পাঁচটি ও দুটি মাথায় দু’টি বেড রয়েছে। এছাড়া দুই পাশে মাচা রয়েছে। বেডে লাগানো হচ্ছে শাক-সব্জি ও মাচায় লাউ-কুমড়া-সিম-বরবটি-ঝিঙা।তাছাড়া দুই মাথায় নেট করে ছয়টি ফল ও মসলার চারা রোপণ করা হয়েছে। তবে কোথাও কোথাও ফলের চারা বাগানের বাইরে অন্যত্র লাগানো হয়েছে। শাক-সব্জির মধ্যে রয়েছে লাল শাক, গীমা কলমি, পুঁই শাক, ডাটা শাক, ধনিয়া, কাঁচা মরিচ, ধনিয়া, মূলা। ফলদ ও মসলা উৎপাদনে মাল্টা, থাই পেয়ারা, কদবেল, ছফেদা, চুঁই ঝাল, বাতাবী লেবুর চারা লাগানো হয়েছে। কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলা কৃষি অফিস থেকে বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছেন। প্রতিটি ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা রোগ ও পোকা থেকে রক্ষা করতে পরামর্শ দিয়ে ও সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে সার্বিক সহযোগীতা করছেন। রূপসা উপজেলার জাবুসার সুবিধাভোগী কৃষক মনোজ শিকদার জানান, বর্ষাকালীন সব্জি তোলা হয়েছে। সন্তোষজনক উৎপাদন হয়েছে। প্রতিমাসে তিনি তার পাঁচ সদস্যের পরিবারের ১৫/২০ দিনের সব্জির চাহিদা এখান থেকে মেটাতে পারছেন। এছাড়া মাঝে মধ্যে কিছু বিক্রি করে নিত্যপ্রয়োজনীয় অন্য্রন্য জিনিস কিনছেন। কয়রা উপজেলার বানিয়া গ্রামের কৃষক রামকৃষ মন্ডল বলেন, কৃষি অফিসের সহযোগীতায় কিছুদিন আগে বাড়ির আঙ্গিনায় সব্জি চাষ করেছি। আশা করছি নিজেদের চাহিদা পূরনের পাশাপাশি কিছু সব্জি বিক্রি করতে পারবো। কয়রা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আসাদুজ্জামান বলেন, উন্নতমানের বীজ, ফল ও মসলার চারা বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয়েছে। সার ও বেড়া বাবদ আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে এ উপজেলায় ২৭টি বাগান স্থাপন করা হয়েছে। রূপসা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ ফরিদুজ্জামান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে। সে অনুযায়ী আমরা পারিবারিক সব্জি ও পুষ্টির চাহিদা মেটাতে বসতবাড়ির আঙ্গিনায় অনাবাদি ও পতিত জমিতে প্রকল্পের সহযোগিতায় উদ্ধুদ্ধকরণের মাধ্যমে সব্জি ও মসলা ও ফল উৎপাদনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।