৩০০ কোটি টাকার ২০০ মেট্রিকটন হিমায়িত চিংড়ি শিপমেন্টের অপেক্ষায়
জন্মভূমি রিপোর্ট : ইন্টারনেট সেবা স্বাভাবিক অবস্থায় এখনও ফিরে না আসায় প্রায় ৩০০ কোটি টাকার ২০০ মেট্রিকটন হিমায়িত চিংড়ি শিপমেন্ট করা যাচ্ছে না। গত এক সপ্তাহ ধরে রপ্তানিযোগ্য এসব চিংড়ি কন্টেইনার মাছ কোম্পানিতে আটকে আছে। ফলে ১০০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন রপ্তানিকারকরা। এ তথ্য জানিয়েছেন বাংলাদেশ ফ্রেজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএফই’র) প্রেসিডেন্ট কাজী বেলায়েত হোসেন।
জানতে চাইলে তিনি বলেন, ব্যাবসা-বানিজ্যের নিয়ন্ত্রণ হয় ইন্টারনেটের মাধ্যমে। ইন্টারনেটের অচলাবস্থার কারণে সকল সেক্টরে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। বিদেশি বায়ারদের সাথে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। পাশাপাশি ব্যাংকের মাধ্যমে ক্রেতাদের টাকা পাঠানো হলেও তা একাউন্টে ঢুকছে না। পুরোপুরি নেট ঠিক না হওয়ায় ব্যাংকের সার্ভারে গুলো স্লো কাজ করছে।
তিনি জানান, সময়মতো শিপমেন্ট না করতে পারার কারণে খুলনা, কক্সবাজারসহ অন্যান্য অঞ্চলের প্রক্রিয়াজাত কারখানাগুলো গোডাউনে পরিণত হয়েছে। মাছ রাখার জায়গা নেই। তাছাড়া কয়েকদিন ধরে স্থানীয় ফড়িয়াদের চিংড়ি ও সাদা মাছ বাকিতে কিনতে হয়েছে। কিন্তু টানা ব্যাংক বন্ধ থাকার কারণে তাদের পাওনাদি পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি। ফলে মাছ কোম্পানী থেকে শুরু করে খামারী পর্যন্ত সকল পর্যায়ের ব্যবসায়ীই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন।
চলমান সংকটের কারণে খুলনার মডার্ন সী ফুড ও ব্রাইট সী ফুডের চার কন্টেইনার চিংড়ি শিপমেন্টের অপেক্ষায় আছে বলে জানান প্রতিষ্ঠান দুটির সেলস ম্যানেজার সাইফুদ্দিন তনু। তিনি বলেন, চার কন্টেনাইরে ৮০ মেট্রিক টন রপ্তানীযোগ্য চিংড়ি রয়েছে। যার মূল্য প্রায় ৮০ কোটি টাকা। বুধবার থেকে ইন্টারনেট চালু হওয়ায় সংকট কিছুটা কেটেছে কি কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, নেটের গতি যেমন কম তেমনি মাঝে-মধ্যে আসা-যাওয়ার ফলে সংকট কাটছেনা। গতকাল বৃহস্পতিবারও নেটের গতি কম ছিল।
এছাড়া ইন্টারনেট জটিলতার কারণে সব ধরনের বিল যেমন আটকে আছে তেমনি বিল অব লোডিং অর্থাৎ বিএল’র জন্য শিপিং লাইন্স-এর ক্লিয়ারিং পাওয়া যাচ্ছে না। বিদেশের সাথে সকল প্রকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। তিনি বলেন, তারা যে টাকা পাঠিয়েছে কি না সেটিও বোঝা যাচ্ছে না। কেননা ব্যাংকও অনলাইনের ওপর নির্ভরশীল। এর ফলে তাদের দু’টি মাছ কোম্পানীসহ খুলনা-কক্সবাজারের অন্যান্য রপ্তানী প্রক্রিয়াজাত কারখানাগুলো স্থানীয় বিক্রেতাদের বিলও পরিশোধ করতে পারছে না বলেও জানান তিনি। প্রতিদিনই এজেন্টরা তাদের কাছে এসে ধর্না দিচ্ছেন। কিন্তু তারাও দেখাচ্ছেন অচলাবস্থার চিত্র। ফলে বাধ্য হয়েই তারা ফিরে যাচ্ছেন পেমেন্ট না নিয়ে। তিনি বলেন, অধিকাংশ মাছ কোম্পানী এজেন্টের মাধ্যমে মাছ ক্রয় করে থাকে। একেকজন এজেন্টের আওতায় রয়েছেন ১০/১২জন করে ফড়িয়া। ফড়িয়- ারা আবার ডিপো বা খামারী পর্যায় থেকে মাছ কিনে থাকেন। অর্থাৎ রপ্তানীকারক থেকে শুরু করে উৎপাদক পর্যায়ে যতগুলো মাধ্যম রয়েছে প্রতিটি সেক্টরেই চলছে ‘নেই নেই অবস্থা’।
বেনাপোলের কাষ্টমস্ এন্ড ক্লিয়ারিং এজেন্ট মেসার্স মিলন এন্টারপ্রাইজের পক্ষে মোঃ রজলুর রহমান বলেন, সাম্প্রতিক অচলাবস্থায় তাদেরও সংকটে পড়তে হয়েছে। বিশেষ করে যথা সময়ে চিংড়ি খাবার না পেয়ে অনেকেই দিশেহারা অবস্থায় রয়েছেন। বিদেশী প্রযুক্তিতে দেশীয় তৈরি একটি প্রতিষ্ঠানও কারফিউ’র কারনে ঠিকমতো খাবার সরবরাহ করতে পারেনি। তিনি বলেন, বেনাপোলের ভারতীয় অংশে পেট্রাপোলে বিগত এক সপ্তাহ ধরে পড়ে ছিল ৫০ টন চিংড়ি খাবার। ভারতের অবস্থিত কোম্পানীর ওই খাবার বাংলাদেশে পাঠানো সম্ভব হচ্ছিল না শুধুমাত্র ইন্টারনেট না থাকার ফলে। তবে বুধবার ওই খাবারগুলো বেনাপোল সীমান্ত পার হয়ে দেশে ঢুকেছে। তবে প্রক্রিয়া শেষ করে ওই খাবার খুলনাসহ অন্যান্য অঞ্চলে পৌঁছতে এখনও সময় লাগবে ২/১দিন। এর আগে গত ১৭ জুলাই ওই কোম্পানীর আরও ৫০ মে: টন চিংড়ি ফিড খুলনায় ‘পৌঁছায়। ওই খাবার না পাওয়া গেলে খুলনার প্রান্তিক পর্যায়ের চাষীদের চরম সংকটে পড়তে হতো। কিন্তু মৎস্য বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর ত্বড়িৎ পদক্ষেপের ফলে কারফিউর আগেই খামারীদের কাছে খাবারগুলো পৌছে দেওয়া সম্ভব হয়।
সাম্প্রতিক অচলাবস্থার ফলে খুলনার চিংড়ি উৎপাদনকারীদের কোন সমস্যায় পড়তে হয়নি বলে উল্লেখ করেছেন খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল। তিনি বলেন, শুধুমাত্র ব্যাংক লেনদেনে কিছুটা সমস্যায় পড়তে হয়েছে। ইন্টারনেট চালু হওয়ায় এখন আর সে সংকট থাকবে না বলেও তিনি আশা করেন।
খুলনার বিভাগীয় শ্রম পরিচালক মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, সাম্প্রতিক অচলাবস্থার ফলে চিংড়ি সেক্টরের অস্থায়ী শ্রমিকদের পাশাপাশি বেশি সংকটে পড়তে হয় পরিবহন ও হ্যান্ডলিং শ্রমিকদের। এছাড়া যারা দৈনিক মজুরিভিত্তিক শ্রমিক তাদের আয় একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু যারা মাছ কোম্পানীগুলোর স্থায়ী শ্রমিক তাদের খুব বেশি একটা আর্থিক সংকটে পড়তে হয়নি।