
কয়েক সন্ত্রাসী আটক, অধরা গডফাদাররা
নূর ইসলাম রকি, খুলনা : খুলনা মহানগরীতে হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে অবৈধ অস্ত্র ও গুলির ব্যবহার। সন্ত্রাসীরা অবৈধ দেশি ও বিদেশি অস্ত্রের ব্যবসাসহ চাঁদাবাজি ও ছিনতাইয়ের কাজে এগুলো ব্যবহার করছে। নিবন্ধনহীন গাড়ি ব্যবহার করে অস্ত্র বহন করার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আড়ালে রাখা হচ্ছে এসব অস্ত্র ও গুলির মজুদ। গত দুই মাসে খুলনায় দেশি-বিদেশি ১১টি অবৈধ অস্ত্র এবং ৬০ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। বিদেশি অস্ত্রগুলো পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে এলেও দেশি অস্ত্র তৈরির গডফাদারের সন্ধান এখনো মেলেনি।
যুগান্তরের অনুসন্ধানে জানা যায়, হঠাৎ করেই গত আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে খুলনা মহানগরীতে উল্লেখযোগ্য হারে অবৈধ অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অস্ত্রের আনাগোনা ধারণা করা হলেও পুলিশ বলছে ভিন্ন কথা। গোয়েন্দা পুলিশের তথ্যের ভিত্তিতেই নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে অবৈধ অস্ত্র-গুলিসহ সন্ত্রাসীদের আটক করা হচ্ছে। আটক সন্ত্রাসীদের মধ্যে অনেকেই হত্যা প্রচেষ্টা মামলা, অস্ত্র ব্যবসায়ী, ছিনতাই ও চাঁদাবাজিসহ একাধিক মামলার আসামি। এছাড়া পুলিশ, র্যাব ও ডিবিকে হুমকিদাতারাও রয়েছে আসামির তালিকায়। তবে আসন্ন নির্বাচনসহ দেশের রাজনৈতিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে নগরীতে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার নাগরিকদের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে উদ্ধার হওয়া অবৈধ অস্ত্রের মধ্যে ‘মেইড ইন ইউএসএ’ লেখা বিদেশি পিস্তল, বিদেশি রিভলবার, দেশীয় শুটারগান খোদ প্রশাসনের মধ্যে চিন্তার কারণ। যার ফলে এসব অবৈধ অস্ত্র ও গুলির জোগানদাতা ও অস্ত্র তৈরির গডফাদারদের খুঁজতে মরিয়া হয়ে উঠেছে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ।
জানা যায়, ৯ আগস্ট নগরীর বৈকালী এলাকার সায়রা ফিলিং স্টেশনের নিকটবর্তী একটি বাড়ি থেকে অস্ত্র ব্যবসায়ী কায়েস শিকদারকে আটক করা হয়। তার বাড়ি বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলায়। কায়েস দীর্ঘদিন ধরে নগরীতে অস্ত্র ব্যবসা এবং ওই অস্ত্র দিয়ে ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ সন্ত্রাসী কার্যক্রম করে আসছিল। তার কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিসহ সাত রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। এর দুদিন পর ১১ আগস্ট নগরীর শিরোমনি এলাকা থেকে ‘মেইড ইন ইউএসএ’ লেখা একটি বিদেশি পিস্তল ও চার রাউন্ড গুলিসহ সুজন মল্লিককে আটক করা হয়। ১২ আগস্ট পুলিশ ও র্যাবকে হুমকিদাতা সন্ত্রাসী রাশেদ খাঁকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন ও এক রাউন্ড গুলিসহ নগরীর টুটপাড়া থেকে আটক করা হয়। ১৮ আগস্ট রূপসার চাঁনমারী এলাকা থেকে রেজিস্ট্রেশনবিহীন মোটরসাইকেলে অস্ত্র বহন করার সময় জনি মোল্লাকে আটক করা হয়। তার কাছ থেকে একটি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন এবং তিন রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। ২৬ আগস্ট হরিণটানা কৈয়া বাজার এলাকা থেকে একটি দেশীয় শুটারগান ও চার রাউন্ড গুলিসহ মো. সুমনকে আটক করা হয়।
৮ সেপ্টেম্বর ডালমিল মোড় থেকে শরিফুল ইসলাম সোহাগকে আটক করা হয়। তার কাছ থেকে একটি রিভলবার, একটি পিস্তল, দুটি শুটারগানসহ বিভিন্ন ধরনের প্রায় তিন ডজন গুলি উদ্ধার করা হয়। সোহাগ ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে অভিযোগ রয়েছে। পাশাপাশি তিনি শেখপাড়ায় নিজের এলপিজি গ্যাসের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আড়ালে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবসা করে আসছেন বলে পুলিশের একটি সূত্র জানায়।
১১ সেপ্টেম্বর লবণচরা এলাকা থেকে হত্যা প্রচেষ্টা ও চাঁদাবাজি মামলার পলাতক আসামি দুলাল তালুকদারকে একটি দেশি শুটারগান ও তিন রাউন্ড গুলিসহ আটক করা হয়। সর্বশেষ ১৭ সেপ্টেম্বর নগরীর দৌলতপুরে মো. মেহেদী হাসান মমি ওরফে মমি জমাদ্দারকে আটক করা হলে তার দেওয়া তথ্যমতে দেয়ানার বাউন্ডারি এলাকায় কেডিএ কল্পতরু মার্কেটের নাজ এন্টারপ্রাইজ থেকে একটি ব্যাগের মধ্যে একটি দেশি শুটারগানসসহ ৫ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।
এ ব্যাপারে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক যুগান্তরকে বলেন, রাজনৈতিকভাবে প্রভাব বিস্তার করার উদ্দেশ্যে অবৈধ অস্ত্রের আনাগোনার বিষয়টি সঠিক নয়। নগরীতে সম্প্রতি যেসব অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে এগুলোর মধ্যে অনেকগুলো সীমান্ত দিয়ে আসা। এছাড়া কিছু আছে দেশীয় অস্ত্র। আমরা এসব অবৈধ অস্ত্র ও গুলি সরবরাহকারীদের মূল গডফাদারকে খোঁজার চেষ্টা করছি। তিনি আরও বলেন, খুলনায় যোগদানের দুই মাসের মধ্যেই বিপুল পরিমাণ অবৈধ অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করতে গোয়েন্দা সংস্থা সহযোগিতা করেছে।