জন্মভূমি রিপোর্ট
অর্থের বিনিময়ে করোনার স্যাম্পল দিতে আসা লোকজনের সিরিয়াল পরিবর্তন, সময়মত স্যাম্পল কালেকশন না করা, গল্প-গুজব করে সময় ক্ষেপণ, অক্সিজেন সিলিন্ডার লুকিয়ে রাখাসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে খুলনার ১৩০ শয্যা বিশিষ্ট করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের বিরুদ্ধে।
হাসপাতালটিতে শৃংখলা ও স্বাস্থ্যবিধির ব্যাপারে শীথিলতা দেখা গেছে। সবকিছু মিলে হাসপাতালের ভিতর-বাইরে এখন এক ধরনের ‘হ য ব র ল’ অবস্থা বিরাজ করছে বলে অভিযোগ তুলেছেন সেবা গ্রহীতারা। সরেজমিনে হাসপাতাল ঘুরে অনিয়মের নানা দৃশ্য দেখা গেছে।
দেখা গেছে, অনেকে হাসপাতালের সামনে নমুনা দেওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। তাদের মধ্েয অনেকেরই জ্বর, সর্দি ও কাশি রয়েছে। করোনা আক্রান্ত রোগীও আছেন। লাইনটিতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা হচ্ছে না। এখান থেকে সংক্রমণ ছড়াতে পারে-এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সেবা গ্রহীতারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালে সেবা নিতে আসা খুলনার এক সিনিয়র সাংবাদিক অভিযোগ করে বলেন, ‘এখানে অর্থের বিনিময়ে করোনার স্যাম্পল দিতে আসা লোকজনের সিরিয়াল পরিবর্তন এবং সময়মত স্যাম্পল কালেকশন না করে কর্মচারিরা গল্প-গুজব করে সময় ক্ষেপন করে। এটা কোনোভাবে কাম্যও নয়।’ দেখা গেছে হাসপাতালের টিকিট ও নমুনা সংগ্রহের কাউন্টারের পাশেই নাম ডাকার অপেক্ষায় ঠাসাঠাসি করে দাঁড়িয়ে রয়েছে লোকজন। একজনের নাম ডাকা হলে সবাই এক রকম হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন কাউন্টারের সামনে। এখানে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা দুজন কর্মীকে এ বিষয়ে কোনো ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়নি।
নিরাপত্তাকর্মী মো. আলাউদ্দিন জানান, তারা নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখার কথা বললেও কেউ শোনে না। নগরীর সাউথ সেন্ট্রাল রোড এলাকার বাসিন্দা রুমানা আক্তার অভিযোগ করেন, ‘নমুনা সংগ্রহের জন্য সকাল ৮টায় কাউন্টার খোলার সময় নির্ধারণ থাকলেও ৯টার পর খোলা হয়। ততক্ষণে লোকজনের ভিড় জমে যায়। অথচ সময়মত খোলা হলে কাউকে দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করতে হতো না।’ এদিকে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনোভাবে এ হাসপাতালে অক্সিজেনের সংকট তৈরি হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, হাসপাতালের আউট সোর্সিং কর্মচারীরা জড়িত থাকার পাশাপাশি রোগীদের একটি অংশ কর্মচারীদের অনৈতিক সুবিধা দিয়ে প্রয়োজনের অতিরিক্ত সিলিন্ডার মজুদ করছেন।
গত রোববার (৪ জুলাই) রাতে হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার অঞ্জন চক্রবর্তী হাসপাতালে অক্সিজেন সংকটের কথা শুনে নিজে গিয়ে বিষয়টি তদারকি করেন। করোনা ইউনিটের টয়লেট থেকে তিনি ৪৫টি অক্সিজেন ভর্তি সিলিন্ডার উদ্ধার করেন। এতগুলো সিলিন্ডার গোপনে জমা রাখায় কৃত্তিম সংকট তৈরি হয় হাসপাতালটিতে। কর্মচারীদের দাবি, রোগীদের হাত থেকে বাঁচাতেই তারা গোপনে অক্সিজেন সিলিন্ডার সংরক্ষণ করেছিলেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক রোগী জানান, হাসপাতালে ওয়ার্ড বয়দের টাকা দিলে সিলিন্ডারের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। তবে হাসপাতালের আরএমও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাসপাতালে বর্তমানে শতাধিক ফ্লু মিটার মজুদ রয়েছে। অথচ রোগীদের ফ্লু মিটার সংকট দেখানো হচ্ছে। গত সপ্তাহে যশোর থেকে আসা এক রোগীর জন্য ফ্লু মিটার না পাওয়ার অভিযোগ ওঠে। এসময় হাসপাতাল পরিচালকের চাপের মুখে বাড়ি থেকে এসে ফ্লু মিটার বের করে দেন দায়িত্বপ্রাপ্ত এক নার্স। তখন অন্তত ৫০/৬০টি সচল ফ্লু মিটার খুঁজে পান উপ-পরিচালক। যদিও বিষয়টি অন্যখাতে নেওয়ার চেষ্টা করেন দায়িত্বপ্রাপ্ত সবাই। হাসপাতাল পরিচালক ডা. মো. রবিউল হাসান বলেন, ‘রোগীদের হাত থেকে বাঁচাতেই অক্সিজেন সিলিন্ডার লুকানো হয়েছিল। তবে, আর্থিক লেনদেনসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে অভিযোগ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতালের ফোকাল পারসন ডা. সুহাস রঞ্জন হালদার বলেন, ‘হাসপাতালে অক্সিজেনের কোনো ঘাটতি নেই। এখানে আরও একটি লিকুইড অক্সিজেন প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়েছে। সেটার কার্যক্রম দুয়েকদিনের মধ্যে শুরু হয়ে যাবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘হাসপাতালে রোগীর চাপ থাকায় ফ্লোরেও রোগী রাখতে হচ্ছে। মানুষ অনেকটা ভয় পেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। এতে রোগীর চাপ বেড়েছে। এসব কারণে কিছুটা সমস্যা হতে পারে।’
খুলনার করোনা হাসপাতালে ‘হ য ব র ল’ অবস্থা
Leave a comment