
শেখ আব্দুল হামিদ
চক্রান্তকারীদের মুখে ঝামা ঘষে দিয়ে রাত পোহালেই চালু হবে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চালের সর্বত্রই এখন সাজসাজ রব। বিভিন্ন পরিবহনে চড়ে মানুষ যাবে রাজধানীতে। অর্থনৈতিক, সামাজিক, শিল্প কলকারখানার উন্নয়নসহ উন্মুক্ত হবে নবদিগন্তের স্বর্ণ দুয়ার। এই সেতু ঘিরেই রচিত হবে সোনালী ভবিষ্যত। এ অঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ খুঁজে পাবে স্বপ্নের নতুন ঠিকানা।
দীর্ঘদিনের আশা আকাঙ্খার বাস্তবায়ন ঘটাতে প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা কাল আনুষ্ঠানিক ভাবে চালু করবেন সেতুর দক্ষিণ দুয়ার। কাল থেকেই রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের সঙ্গে এ অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হয়ে উঠবে। পিছিয়ে পড়া এই অঞ্চল ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আরও মনোযোগ কাড়বে, গড়ে উঠবে এসব জেলায় নতুন নতুন শিল্প কলকারখানা। এ সেতু দিয়ে বাংলাদেশ যুক্ত হতে পারবে এশিয়ান হাইওয়েতে। ফলে দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতির চাকা ঘোরার পাশাপাশি বাড়বে কর্মসংস্থান।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পিছিয়ে পড়া জেলা গুলো আজ আনন্দে মেতে উঠেছে। খুলনা বিভাগের খুলনা, বাগেরহাট, যশোর, সাতক্ষীরা, নড়াইল, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও মাগুরা। বরিশাল বিভাগের বরিশাল, পিরোজপুর, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা ও ঝালকাঠি এবং ঢাকা বিভাগের গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও রাজবাড়ীতে চলছে পদ্মা ব্রিজের কাছে আসার প্রস্তুতি।
ঢাকা থেকে সড়ক পথে চট্রগ্রামের দূরত্ব ২৫০ কিলোমিটার। বন্দরের দূরত্ব আরও বেশি। পদ্মা সেতু পথে ঢাকা থেকে মংলা বন্দরের দূরত্ব মাত্র ১৭০ কিলোমিটার। সেতু পথে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর সঙ্গে রাজধানী ঢাকার দূরত্ব কমবে ১০০ কিলোমিটার কিংবা তারও বেশি। ঢাকা-মাওয়া সড়ক পথ নতুর রূপ পেয়েছে। যারা এ পথে নিয়মিত চলাচল করছেন তাদের কাছে এ পথ যেন ইউরোপ-আমেরিকার মহাসড়ক। এ পথ ব্যবহার করে বরিশাল, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, ফরিদপুর, খুলনাসহ বিভিন্ন জেলার মানুষ। রেলপথ চালু হলে বরিশাল, খুলনা বা যশোর থেকে দেড়-দু’ঘণ্টাতেই ঢাকা যাওয়া আসা করা যাবে। অনেকে ভাবছেন- প্রতিদিন ঢাকায় অফিস করা যাবে বরিশাল-ফরিপুরের গ্রামের বাড়িতে থেকেই। এর ফলে রাজধানীর ওপর মানুষের চাপ কমবে।
পদ্মা সেতু এখন আর স্বাপ্ন নয় বাস্তবে রূপ নিয়েছে। দেশের বড় বড় ব্যবসায়ীদের চোখ এখন শিল্প নগরী খুলনার দিকে। আমদানী রফতানী করা প্রতিষ্ঠান গুলোর স্বপ্ন এখন মোংলা বন্দর ঘিরে। মংলা বন্দরে পদ্মা সেতুর সুফল এখনই পাওয়া যাচ্ছে। বেশ কয়েকটি সিমেন্ট ফ্যাক্টরি ইতোমধ্যে চালু হয়ে গেছে। গার্মেন্টসসহ রফতানিমুখী নানা ধরনের শিল্প-কারখানা গড়ে উঠছে। খুলনার জেলা প্রশাসক মো: মনিরুজ্জামান তালুকদার গতকাল খুলনা প্রেস ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে বলেন, পদ্মা সেতু চালু হলেই দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলায় ‘শিল্প বিপ্লব’ ঘটবে। তিনি বলেন, ‘২৫০ একর জমি নিয়ে বটিয়াঘাটায় বিশেষ অর্থনৈতিক জোন হচ্ছে। এই অঞ্চলে ইপিজেড আবারও ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। সবই হচ্ছে পদ্মা সেতুকে সামনে রেখে। খান জাহান আলী বিমানবন্দর এখন পূর্ণাঙ্গ বিমানবন্দর হতে যাচ্ছে। রেলের কাজও চলছে পুরোদমে। এর সঙ্গে চাহিদামতো গ্যাস সরবরাহ এবং পদ্মা সেতুতে যান চলাচল শুরু হলে দক্ষিণাঞ্চল হবে দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনৈতিক অঞ্চল।’
ফ্রোজেন ফুড এসোসিয়েশনের সহসভাপতি হুমায়ূন কবির বলেন, দেশের অন্যতম বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাত হিমায়িত মৎস্য ও পাট শিল্প যার অধিকাংশ খুলনা থেকে রফতানির মাধ্যমে আয় হয়ে থাকে। পদ্মা সেতু হলে এই আয় আরও বাড়বে। পাশাপাশি কমে যাবে পণ্য পরিবহণেরও খরচ। একইভাবে পদ্মা সেতুতে রেল যোগাযোগের ব্যবস্থা থাকায় দেশের অভ্যন্তরীণ পণ্য পরিবহন, সাধারণ মানুষের যাতায়াতসহ পার্শ্ববর্তী দেশের সঙ্গেও রেল যোগাযোগের মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্যের এক নতুন সম্ভাবনার দিক উন্মোচিত হবে।